‘অশালীন কনটেন্টের’ কারণে টিকটক নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে পাকিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চীনের ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধের হুমকি দিয়েছে এবং ভারত এরই মধ্যে এটা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এবার চীনের সবসময়ের বন্ধু পাকিস্তানও সম্ভবত এটা নিষিদ্ধ করতে পারে। তবে, ডাটা গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কারণে নয়, বরং ‘অনৈতিক বিষয়বস্তুর’ কারণে তারা এটা নিষিদ্ধের কথা ভাবছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী শিবলি ফারাজ সম্প্রতি মিডিয়াকে বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মনে করেন সোশাল মিডিয়া অ্যাপ, বিশেষ করে টিকটক নিষিদ্ধ করা উচিত, কারণ এর কারণে সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট হচ্ছে।
সরকারের রেগুলেটর প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশান অথরিটি জানিয়েছে, তারা টিকটকের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং পাকিস্তানে ভেতরে যাতে ‘অশালিন, অনৈতিক ও নোংরা বিষয়বস্তু’ এই অ্যাপ প্রদর্শন না করে, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছে। তাদেরকে এটাও জানানো হয়েছে যে, পদক্ষেপ নেয়া হলে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ এর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।
‘অনৈতিক’ বিষয়বস্তুর বিষয়ে ২১ জুলাই টিকটিককে চুড়ান্ত সতর্কবার্তা দিয়েছে পিটিএ। একই কারণে সিঙ্গাপুরের একটি অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় অ্যাপ বিগো লাইভকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
১৫ থেকে ৬০ সেকেন্ডের স্বল্পদৈর্ঘ ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ হিসেবে টিকটক সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানে হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকের পরেই তৃতীয় সর্বোচ্চ ডাউনলোডকৃত অ্যাপ এটি। এ বছরে ৪.৬ মিলিয়ন ডাউনলোড হয়েছে সেখানে। বাজার জরিপ কোম্পানি সেন্সর টাওয়ার এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে মূলত অশোভন নোংরা বিষয়বস্তু নিয়ে ৫ শতাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর চাপের মধ্যে আছে পিটিএ। জুলাই মাসে পাঞ্জাবের আঞ্চলিক আইনপ্রণেতারা সারাদেশে টিকটক নিষিদ্ধ করার জন্য আইন প্রস্তাব করেছিল। কিছু নাগরিক প্রাদেশিক আদালতকেও একই কাজ করতে বলেছে।
পিটিএ’র এক কর্মকর্তা নিক্কি এশিয়াকে বলেন, “টিকটক নিষিদ্ধের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেনি পিটিএ এবং টিকটক এরই মধ্যে পাকিস্তানে ৯৩,০০০ একাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে”।
তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন মূলত নারীদের উদ্দেশ্য করেই অশ্লীলতার অভিযোগ করা হচ্ছে, যারা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে কড়া কথাবার্তা বলছে। ‘অনৈতিক বিষয়বস্তু’ ছড়ানোর কারণে ইসলামাবাদ ২ সেপ্টেম্বর টিন্ডার, গ্রিন্ডার এবং আরও তিনটি ডেটিং অ্যাপ নিষিদ্ধ করে”।
গত মাসের শুরুর দিকে পাঞ্জাব প্রদেশের একটি মহাসড়কে সন্তানদের নিয়ে ভ্রমণকালে এক মা গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে খানের নেতৃত্বাধীন সরকার। তাছাড়া, জুলাই মাসেও লাহোরে তিন ব্যক্তির ধর্ষণের শিকার হয় এক মেয়ে। এদের মধ্যে ওই মেয়ের এক ‘বন্ধুও’ ছিল, যার সাথে তার টিকটকে পরিচয় হয়েছিল।
ইসলামাবাদ-ভিত্তিক ডিজিটাল অধিকার গ্রুপ বোলো ভি’র পরিচালক উসামা খিলজি বলেছেন, নারীদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারের যে ব্যর্থতা, সেটা ঢাকার জন্যই টিকটক নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।