মাহফুজ আনাম এখন ‘আওয়ামী নব্য নাৎসিবাদের’ উপাসক: রিজভী

0

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এখন আওয়ামী নব্য নাৎসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন বলে মন্তব্য  করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, ‘এই ভয়াবহ দুঃসময়ে গণতন্ত্র দিবসে ইংরেজি দৈনিক ‘দি ডেইলি স্টার’ এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম নিজের একটি নিবন্ধ ছেপেছেন। যে নিবন্ধের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে- বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নির্জলা মিথ্যাচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অসংলগ্ন মতামত। ওয়ান ইলেভেনের গণতন্ত্র ধংসের প্রধান কুশীলবদের অন্যতম হোতা এবং সেনা সমর্থিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত মাহফুজ আনাম তার এই নিবন্ধে বেগম জিয়াকে নিয়ে সরাসরি ও ইঙ্গিতে যে মন্তব্য করেছেন তাতে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।’

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। যা হলুদ সাংবাদিকতা ও বর্তমান মিডনাইট সরকারের নির্লজ্জ স্তুতিরই সমতুল্য। মাহফুজ আনাম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে তার প্রবন্ধে যা লিখেছেন তা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পারিষদবর্গের হাইপার-প্রপাগান্ডা ও কলুষিত মিথ্যাচারের প্রতিধ্বনি মাত্র। মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়ে সংবাদ পরিবেশনের দায়ে বার বার ক্ষমা চেয়ে এখন সরকারের কাছে সাধু সাজার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তিনি। তার লেখালেখির ভিশন-মিশন হলো বিএনপির বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কাহিনী রচনা করে তা প্রকাশ করা। ভয়ে হোক বা উচ্ছিষ্ট ভোগীচ্ছায় হোক- গণতন্ত্রহীন ও বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত আওয়ামী লীগ সরকারকে খুশি করাই এখন তার আরাধ্য। মাহফুজ আনাম এখন আওয়ামী নব্য নাৎসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহমুজ আনামের কড়া সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘নিজেকে কথিত ‘প্রতিষ্ঠানতুল্য সাংবাদিক’ দাবি করা সাংবাদিকতার ‘এথিকস’ শেখানো, কে এই মাহফুজ আনাম? কী তার আমলনামা? গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা সাজা এই মুখোশধারী মাহফুজ সাহেবের পিতা ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভায় দীপ্তিমান সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক-সম্পাদক সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সেই স্মরণীয় আবুল মনসুর আহমদের নাম তিনি ভূলুণ্ঠিত করছেন। মাহফুজ আনামদের সারথী হয়ে তথাকথিত সুশীল শ্রেণির বেশ কয়েকজন এদেশে গণতন্ত্র হত্যা করে এক এগারোর অসাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। স্বচ্ছ সাংবাদিকতা নয়, বিদেশি অর্থদাতা প্রভু ও দেশীয় গোয়েন্দাদের এজেন্ট হিসেবেই কাজ করেছেন মাহফুজ আনাম। মাহফুজ আনামদের বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদের উত্থানে ভূমিকা ও অপতৎপরতা কলংকিত ইতিহাস হয়ে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিপুল বিজয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যার মাধ্যমে অসাংবিধানিক শাসন কায়েম করার নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে এই মাহফুজ সাহেবরা। কারণে অকারণে তাদের প্রায় প্রতিদিন দেখা যেতো জাতির সামনে নানা ছবক নিয়ে হাজির হতে। তাদের নেতৃত্বেই তখন নানা ইস্যু বানিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পালে হাওয়া দেয়া হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি তাদের প্রথম লক্ষ্য হাসিল করে। সেই লক্ষ্য হাসিলে পুরোধা ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার নিয়ে সেদিন তিনি উল্লাস করেছিলেন। এ সরকার আনার পেছনে নিজের কৃতিত্ব নিয়ে সগর্বে কলাম লিখেছিলেন-‘দুই নেত্রীকে বিদায় নিতে হবে’ শিরোনামে। ডেইলি স্টার গ্রুপের পত্রিকায় গণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে সেনাসমর্থিত অগণতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল একটির পর একটি নিবন্ধ। পুরো সময়টা তারা গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে শুধুই গালমন্দ করে মনগড়া নিবন্ধ লিখে গেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘মাইনাস ফর্মুলায় দেশকে রাজনীতিশূন্য করতে মাহফুজ আনাম মিথ্যা, অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে রাজনীতিকদের গ্রেফতারের পটভূমি রচনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তৎকালীন অবৈধ সরকার গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এক বছরের বেশি সময় কারাবন্দি করে রাখে। এদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে হত্যার চেষ্টা করেছে। নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আজও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। এর জন্য দায়ী ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা। মাহফুজ আনামদের চোখে সব দোষ রাজনীতিকদের।’ 

বিএনপির এ শীর্ষনেতা আরও বলেন,  ‘জরুরি আইনের সরকারের আইনমন্ত্রীর সাথে সম্পাদকদের এক বৈঠক শেষে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে হাজির হয়ে ১/১১ সরকার তৈরির প্রধান কারিগর মাহফুজ আনাম বলেছিলেন, ‘এ সরকার হচ্ছে আমাদের আন্দোলনের ফসল’। তার কিছুদিন পরে শেখ হাসিনাও বলেছিলেন- ‘এ সরকার হচ্ছে আমাদের আন্দোলনের ফসল’। মাহফুজের ভাষার সঙ্গে গণতন্ত্র হত্যাকারী শেখ হাসিনার ভাষার কোনও পার্থক্য ছিল না। এখনও নেই। তখনই তৈরি হয়েছিল ‘গেম প্ল্যান’। সেই ‘গেম প্ল্যান’ অনুযায়ী আজকের আওয়ামী নাৎসিবাদের উত্থান। সেই ‘গেম প্ল্যান’ অনুযায়ী জরুরি আইনের সরকার ভিন্ন কোনও দেশের মধ্যস্থতায় শেখ হাসিনার সাথে সমঝোতার মাধ্যমে প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসায়। সেই থেকে বাংলাদেশের বুকের ওপর চেপে বসেছে ভয়াবহ আওয়ামী দুঃশাসন। কোনও এথিক্সের ধার না ধেরে তাদের কথা অনুযায়ী রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা করেছেন। নিরপেক্ষতার গালভরা বুলি, স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রের শ্লোগানের আড়ালে গণতন্ত্রের ঘরে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিভীষণকে ফুলচন্দন দিয়ে বরণ করেছিলেন। যে তত্ত্বের বিষ দেশের মানুষকে গেলাতে চেয়েছিলেন তার অপর নাম মাইনাস টু-থিওরি বা ফর্মুলা। তাদের অপকর্ম ও ষড়যন্ত্রের কারণেই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আজ গণতন্ত্রহীন, খুন, গুম, বিচারহীনতার এক বিরানভূমি। এদেশ আজ জল্লাদের রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়েছে। সেই কুচক্রী মাহফুজ সাহেবরা এখন নতুন করে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করে জাতিকে গণতন্ত্রের জ্ঞান বিতরণ করছেন। তার নিবন্ধ গণতন্ত্রের জন্য মায়া কান্না এবং হলুদ সাংবাদিকতার নতুন সংযোজন বলে আমরা মনে করি। মনে রাখতে হবে, শকুন যখন কাঁদে তখন গরুর জন্যই কাঁদে, প্রাণীকুলের কোনও করুণ ট্র্যাজেডির জন্য কাঁদে না।’

রিজভী আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র নিয়ে কলাম লিখতে যেয়ে মাহফুজ আনাম খেই হারিয়ে ফেলেছেন। নিশিরাতের সরকারকে পরিতুষ্ট করার জন্য একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রেক্ষিত এবং বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ অসার ও কদর্য মিথ্যাচার করেছেন। মাহফুজ আনাম লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে এ ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত হয়নি এবং এ ঘটনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য করা হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন’। এই লেখাতেই প্রমাণিত হয় মাহফুজ আনাম বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বিষোদগার করে আওয়ামী লীগের কৃপা পেতে চান। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে মাহফুজ আনাম ভালোভাবেই অবগত আছেন। প্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগকে কব্জা করে মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্তের মাধ্যমে বর্তমান প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার স্বাক্ষ্য প্রমাণহীন রায় প্রদান করে অনেক নিরপরাধের সাজা দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি কখনোই ঘৃণ্য হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।’

তিনি বলেন, ‘মাহফুজ আনামকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিএনপি’র মতো একটি জনপ্রিয় দল কেন ২১ আগষ্টের ঘটনা ঘটাবে। যেহেতু বিএনপি তখন ক্ষমতায় বিএনপি কেন নিজেই নিজের সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইবে? ২১ আগস্ট ঘটনার পর বিএনপি সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল এবং আমেরিকা থেকে এফবিআই-এর একটি দল এনে তদন্ত করতে চেয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ সেদিন কোন সহযোগিতা করেনি। এ কথাগুলো আপনার লেখাতে আসেনি কেন? প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমান জড়িত। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ারও দায় আছে বলে বক্তব্য দেন। কিন্তু বাংলাদেশের কোনও মানুষই তা বিশ্বাস করে না। কিন্তু শেখ হাসিনার বিশ্বাস আপনার লেখাতে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন।’ 

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমান জড়িত হলে আপনাদের আন্দোলনের ফসল মঈনুদ্দীন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সময়ও তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না কেন? মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম কেন দেয়নি? আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আইন-আদালত কব্জার মাধ্যমে তারপর তার নাম দিতে হলো। ২১ আগস্ট সংক্রান্ত মামলায় ৬ বার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতা কাহার আকন্দকে অবসর থেকে ডেকে নিয়ে এসে এই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। চুক্তিভিত্তিক তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহার আকন্দ কর্তৃক তথাকথিত তদন্ত কার্যক্রম চালাতে গিয়ে সরকারি অনেক দলিল দস্তাবেজ হয় গায়েব অথবা সৃজন ও পরিবর্তন করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা শুধুমাত্র মুফতি হান্নান নামের একজন ব্যক্তিকে ৪১০ দিনের বেশি সময় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে তার মুখ থেকে বের করানো হয় তারেক রহমানের নাম। তবে পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি আদালতে গিয়ে নিজেই তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আবেদন করেন। যে খবর শীর্ষ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আর্শ্চযের বিষয় হলো, যেই একজন মাত্র ব্যক্তির মুখ থেকে জোরপূর্বক নাম বের করে ২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে এই মামলার চূড়ান্ত রায় হবার পূর্বেই অন্য একটি মামলায় ওই মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এটি কি স্বাভাবিক ঘটনা?’

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাইফুল আলম নীরব, মীর সরাফত আলী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ও রাজিব আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com