মহামারী শেষে যেভাবে ঘুরে দাঁড়াবে গণমাধ্যম

0

করোনার আতঙ্ক ধীরে ধীরে কমে আসছে। ইতালি, ফ্রান্সসহ অনেক দেশই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়ে ফিরছে স্বাভাবিক জীবনে। তবে করোনার প্রভাব রয়ে গেছে অনেক জায়গাতেই। মহামারীর দিনগুলোতে সক্রিয় থাকা গণমাধ্যমকেও দেখতে হচ্ছে কঠিন সময়। মহামারী পরবর্তী সামনের দিনগুলো কীভাবে পাড়ি দেবে গণমাধ্যম,

সারা বিশ্বে মহামারীতে যেসব শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্রমাগত সেবা আর দায়িত্ব পালন করে গেছেন তাদের মধ্যে একদম সামনের দিকে ছিলেন সংবাদমাধ্যমের মানুষেরা। নিজেদের জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে নানা প্রান্ত থেকে তুলে এনেছেন মানুষের অসুবিধার কথা, মানবেতর জীবনের কথা। কখনো শুনিয়েছেন আশার বাণী, কখনো খুঁজে এনেছেন মানুষের হেরে যাওয়ার গল্প। সে তুলনায় সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আলোচনার পাত্র কিছুটা কমই হয়েছেন খবরের মানুষগুলো।

করোনায় অন্যান্য সব খাতের মতো গণমাধ্যমগুলোও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংজ্ঞায়নের বিচারে সব ধরনের টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, চলচ্চিত্রও গণমাধ্যমের অন্তর্ভুক্ত। তবে এতকিছুর মাঝে সবচেয়ে নাজুক ছিল প্রিন্ট মিডিয়া। কাগজের মাধ্যমে কভিড-১৯ ছড়ানোর প্রমাণ থাকায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই মিডিয়া। কিছুক্ষেত্রে প্রিন্ট মিডিয়া অনলাইনের মাধ্যমে নিজেদের সচল রাখলেও এর বিতরণ ও পরিবহনে যুক্ত মানুষেরা পড়েছিলেন চরম বিপাকে। আবার প্রিন্ট মিডিয়া অনেকটা অনলাইনে কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও চলচ্চিত্র অঙ্গন একেবারেই স্থবির ছিল। যদিও ধীরে ধীরে করোনা সম্পর্কিত ভয় কমে আসছে মানুষের মাঝে। তবে এতে করে আদৌ গণমাধ্যমে সুদিন ফিরবে সে কথা নিশ্চিত বলা না গেলেও আপাতদৃষ্টিতে আশা করা হচ্ছে কিছুটা স্বাভাবিক হবে গণমাধ্যমের পরিস্থিতি।

টেলিভিশন

নির্দ্বিধায় বলা চলে, করোনা মহামারীতে গণমাধ্যমের মাঝে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল টেলিভিশন। বিনোদন হোক কিংবা চলমান ইস্যু দুই ক্ষেত্রে ভরসা এবং নিরাপত্তা দুই-ই নিশ্চিত করতে পেরেছে এই মাধ্যমটি। ছোট পর্দার এই জগতে মানুষের একঘেয়েমি কাটানোর বড় ব্যবস্থা ছিল বছরের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে। এক গবেষণায় দেখা যায়, বিগত পাঁচ মাসে মানুষের গড়ে টেলিভিশন দেখার সময়কাল প্রায় সব দেশেই বেড়ে গেছে। ফ্রান্সে টেলিভিশন টাইমিং বেড়েছে  সাড়ে চার ঘণ্টা, বেলজিয়ামে সাড়ে তিনঘণ্টা এবং যুক্তরাজ্যে তা ছিল প্রায় ৩ ঘণ্টা। এরমাঝে শুধু যুক্তরাজ্যের হিসাবে মানুষের টেলিভিশন দেখার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে টেলিভিশনের সামনেই মানুষের ব্যয় হয়েছে দিনের এক-দশমাংশ সময়।

টেলিভিশনে এত বেশি সময় দেওয়ার পেছনে বড় কারণ ছিল গৃহবন্দি সময় এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর তৎপরতা। বাংলাদেশে বিটিভির কিংবদন্তি কিছু নাটক ফিরিয়ে আনা, ভারতে বিভিন্ন চ্যানেলের চলচ্চিত্র প্রদর্শন, জার্মানির জেডডিএফ টিভির বিভিন্ন ডকুমেন্টরি, ফ্রান্সে বিভিন্ন জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো এর পুনঃপ্রচার, ব্রিটেনে আই-টিভি কর্র্তৃক ১৯৯৬ সালের ইউরো পুনরায় প্রচার এসব অনুষ্ঠানমালা যেমন মানুষকে চিত্তবিনোদনের খোরাক দিয়েছে তেমনিভাবে নিরবচ্ছিন্ন সংবাদ প্রচারের মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন ছিল মানুষের সবচেয়ে বেশি বিশ্বস্ত। ঘরে বসেই কোনো প্রকার বাহ্যিক মাধ্যমের স্পর্শ ছাড়াই মানুষের কাছে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা বিবেচনায় আনলে টেলিভিশন ছিল সবচেয়ে নিরাপদ। পত্রিকায় যেমন বাহকের সংস্পর্শ ঝুঁকি বৃদ্ধি করত, ঠিক তেমনিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছিল গুঞ্জন ও ভুল খবরের ছড়াছড়ি। সব মিলিয়ে টেলিভিশন এই সময়ে অন্য যেকোনো গণমাধ্যম থেকে এগিয়ে গেছে অনেক বেশি। তবে মানুষের কাছে বেশি পৌঁছাতে পারলেও আয়ের দিক থেকে ধাক্কা খেতেই হচ্ছে টেলিভিশন চ্যানলগুলোকে। প্রথমত বিজ্ঞাপন না থাকায়, দ্বিতীয়ত কোনো সরাসরি সম্প্রচার না থাকায়। বিভিন্ন খেলাধুলা মাঠে গড়ালেও তা সব শ্রেণির দর্শক টানতে পারছে না। বিভিন্ন ড্রামা, রিয়েলিটি শো বন্ধ থাকায় বড় অঙ্কের বিজ্ঞাপন ও দর্শক হারাতে হয়েছে টিভি চ্যানেলগুলোকে। স্বাভাবিক সময়ে এসেও যা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে সংবাদ প্রচারের কাজে নিয়োজিত মানুষের জন্য এই সময়টি এসেছে শাপে বর হয়ে। ভিডিও এডিটিং, মতামত গ্রহণ, টকশোর মতো বিভিন্ন কাজে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এই সুবিধা ধরে রাখতে পারলে সামনের দিনে গণমাধ্যমগুলোর মাঝে একেবারেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে টেলিভিশন। তবে সেই সুদিন সহসাই ফিরছে না। শুধুমাত্র সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সুদিন ফেরানো অসম্ভব বলা চলে।

এরই মাঝে ব্রিটেনের আই-টিভি বাৎসরিক ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড বাজেট কর্তন করেছে। ব্রিটেনেরই চ্যানেল ফোর ২৪৫ মিলিয়ন পাউন্ডের সঞ্চয়ী প্রস্তাবনা দিয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে ১০ শতাংশ কর্মকর্তা ছাঁটাই হবে সেই সঙ্গে অনেক অনুষ্ঠান বাদ পড়বে। প্রায় একই পথ বেছে নিয়েছে ফ্রান্সের এম-সিক্স। তাদের ১০০ মিলিয়ন ইউরোর সঞ্চয় প্রস্তাবের আওতায় প্রায় ২০ শতাংশ খরচ কমানোর কথা উঠে এসেছে। তবে সেটা কি কর্মী ছাঁটাই নাকি অনুষ্ঠানমালা কমানো তা জানা যায়নি।

পত্রিকা

করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ঝড় গেছে পত্রিকার ওপর। মহামারীর শুরু থেকেই জোর দেওয়া হচ্ছিল পারস্পরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার বিষয়ে। সেই সঙ্গে কাগজের ওপর ভাইরাসের টিকে থাকার ক্ষমতা পত্রিকা থেকে অনেকটাই সরিয়ে রেখেছিল মানুষকে। এতকিছুর মাঝেও কেবল দুই শ্রেণির পত্রিকা এই দুঃসময়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমত যারা মহামারীর আগেই অনলাইনে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে নিজেদের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, যেসব প্রিন্ট মিডিয়া দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রকার বিতর্কের বাইরে গিয়ে গ্রাহকদের কাছে নিজেদের অবস্থান শক্ত রাখতে পেরেছে।

কাগজের ওপর দিয়ে কভিড-১৯ এর প্রভাব কতটা প্রকট ছিল তা বুঝাতে ছোট্ট একটি উপমাই যথেষ্ট। ফ্রান্সের ৭৫ শতাংশ পত্রিকা মুদ্রণের কাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রেসতালিস গত ২০ এপ্রিলের পর থেকে এর সব কর্মচারীর বেতন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। সারা বিশ্বে ব্যাপক সুনামের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করা পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এই মহামারীর সময়ে নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। গার্ডিয়ানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পত্রিকাটির আয় ছয় মাসে আনুমানিক ২০ মিলিয়ন ইউরো কমে গেছে। এছাড়া লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস, ফিনান্সিয়াল টাইমসের মতো নামি কিছু পত্রিকার অফিসও বন্ধ রাখতে হয়েছে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন। টাইম-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কভিড-১৯ এর কারণে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই মিডিয়াতে যুক্ত ৩৫ হাজার মানুষ নিজেদের কাজ হারিয়েছেন।

তবে এতকিছুর মাঝে দুটো দিক ছিল চমকপ্রদ। রিওয়ার্ল্ড মিডিয়া কানেক্ট নামে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে কেবল ফ্রান্সেই এই মহামারীতে অনলাইনে পত্রিকা পড়ার হার ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে এবং সেই সঙ্গে এও দেখা গেছে পাঠকশ্রেণির একটা বড় অংশই চলমান খবরের পাশাপাশি ইতিহাসভিত্তিক ফিচার পড়তে আগ্রহী। এছাড়া এসব পত্রিকার অনলাইনে ক্রয় করার প্রবণতাও বেড়েছে।

বেলজিয়ামে রোসেল গ্রুপের সিইও বার্নাড মার্চান্ড জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের লে সইর পত্রিকাটি কেবল মার্চ মাসেই অনলাইনে প্রায় ১০ গুণ বেশি গ্রাহকের কাছে নির্ধারিত মূল্যের মাধ্যমে পৌঁছাতে পেরেছে। পত্রিকা আর টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিবেচনায় অনেকখানি এগিয়ে আছে প্রিন্টমিডিয়া। অনলাইনে অভিনেতা অভিনেত্রীর অনুপস্থিতিতে বিজ্ঞাপন প্রদানের সুবিধা থাকায় বিজ্ঞাপনী আয়ের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল তারা। এছাড়া ওয়ার্ক ফ্রম হোম বিবেচনায় প্রিন্টমিডিয়ার সামনেই সুযোগ ছিল স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ যতœ নিয়ে কাজ করার। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রিন্ট মিডিয়া নিজের নামের জায়গাতেই অটল থাকতে পারেনি। থেমে ছিল ছাপাখানা সংক্রান্ত সবকিছুই।

রেডিও

রেডিও বিষয়টি এখন অনেকখানিই অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েছে বলা যায়। তবে সরকারি গণমাধ্যম হিসেবে এবং উন্নত দেশে রেডিও অনেক জায়গাতেই টিকে আছে। তবে মহামারীকালে অন্য সবকিছুর মতো ঝড় গিয়েছে এই খাতেও। উপস্থাপকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠান পরিচালনা করার কাজ করতে হলেও রেডিওগুলোতে স্বাভাবিক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা ছিল দুরূহ। তবে একথা সত্য রেডিওগুলোতে শ্রোতা বেড়েছিল অস্বাভাবিক হারে। যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জার্মানিতে রেডিও শ্রোতা কেবল মার্চেই বেড়েছিল ৩৪ শতাংশ। ইতালিতে এফএম ওয়ার্ল্ড রেডিও স্টেশনে গ্রাহক বেড়েছিল ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এবং সার্বিকভাবে পুরো ইউরোপে রেডিওতে শ্রোতা বেড়েছিল প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। রেডিওতে শ্রোতা বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল দুটি। প্রথমত এতে কোনো মধ্যবর্তী বাহক প্রয়োজন যেমন হচ্ছে না, তেমনি দরকার হচ্ছে না কোনো প্রকারের আলাদা ডিভাইস। নিজের স্মার্টফোনেই রেডিও শোনার জন্য সবটুকু ব্যবস্থা রয়ে গেছে। দ্বিতীয় যে বিষয়টি রেডিওকে মানুষের কাছে এনে দিয়েছে তা হলো এর বিনামূল্যে শোনার ব্যবস্থা। রেডিও এমন এক বিনোদন মাধ্যম ছিল, যার জন্য ইন্টারনেট খরচ কিংবা কেবল অপারেটর বিল কোনোটাই পরিশোধ করতে হয়নি। তাই খুব বড় লাভের মুখ না দেখলেও করোনাকালে মানুষের কাছাকাছি আসার জন্য কিছুটা সন্তুষ্ট থাকছে বিভিন্ন রেডিও স্টেশন।

গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ 

এই মুহূর্তে যদি জানতে চাওয়া হয় গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ কী কিংবা করোনা পরবর্তীকালে এর ওপর কী প্রভাব পড়বে, তার উত্তর দেওয়া কিছুটা দুরূহ। প্রথমত যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন চ্যানেল এবং পত্রিকা অফিস তাদের বাজেট কমিয়ে দিচ্ছে সেক্ষেত্রে মিডিয়া কর্মীদের ছাঁটাই, বেতন কর্তন, জীবনমান কমে আসা এবং সর্বোপরি গণমাধ্যমের সামগ্রিক কার্যক্রমে ধাক্কা আসতে পারে এবং এর জোয়ার এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। এর আরেকটি বড় কারণ হবে মানুষের ব্যস্ততা। স্বাভাবিক জীবনে আসার পর জীবিকার তাগিদেই মানুষকে ঘর ছাড়তে হবে, সুতরাং নেটফ্লিক্স, হুলু থেকে শুরু করে সাধারণ টেলিভিশন চ্যানেলের চাহিদা অনেকটা কমে আসতে পারে। তবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বড় সুবিধা হবে বিজ্ঞাপনের প্রচার আবার শুরু হলে। মহামারীর প্রভাব কমতে শুরু করলেই নির্মাতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আবার বিজ্ঞাপনের মঞ্চে নামলে হয়তো টেলিভিশন জগৎ আশার আলো দেখতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোকে কিছুটা ধাক্কা খেতেই হচ্ছে। অন্যদিকে প্রিন্ট মিডিয়া কিছুটা পিছিয়ে থেকেই নিজেদের নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। একথা সত্য এখন পর্যন্ত মহামারীতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে থাকায় প্রিন্ট মিডিয়ার নতুন করে ছাপার জন্য মূলধন কিছুটা কম। সেই সঙ্গে থাকবে বাজেট এবং লোকবল সংকটের সমস্যাও। তবে কর্মচাঞ্চল্য ফেরার কারণে যদি টেলিভিশন দেখার সময় কমে আসে সেক্ষেত্রে বিশ্বের প্রায় সব অফিসপাড়ায় নতুন করে ঠাঁই মিলবে পত্রিকার। এছাড়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুনভাবে শুরু করার ক্ষেত্রে পত্রিকার কদর বাড়ার ভালো একটি সম্ভাবনা রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় আনলে গণমাধ্যমের সামনের দিনগুলো বেশ আশাব্যঞ্জক বলা যায়। তবে মুদ্রার উলটো পিঠেও কিছু সত্য থেকে যায় এবং সেটা অনলাইনভিত্তিক অন্যান্য গণমাধ্যমের কাছ থেকে। একথা অনস্বীকার্য যে, মহামারীর কারণে সবচেয়ে কম প্রভাব পড়েছে সম্ভবত বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যমের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের কার্যক্রম এবং সংবাদ পরিবেশন আগেই থেকেই ঘরে বসে কাজ নীতিতে পরিচালনা করে আসত। মহামারীর এই সময়ে তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ ছিল নিজেদের কর্মপদ্ধতি এবং বৈচিত্র্য দিয়ে গণমানুষের আরও কাছাকাছি আসার। সেই কাজটি যদি যথাযথভাবে করা সম্ভব হয়ে থাকে তবে অনলাইন নির্ভর সব গণমাধ্যমের সামনের সময়গুলো বেশ উজ্জ্বল বলা চলে।

ঠিক কবে নাগাদ সব গণমাধ্যম নিজেদের সম্পূর্ণ আগের রূপে ফেরত পাবে তা বলা খুবই মুশকিল। খুব বড় প্রভাব এড়িয়ে গেলেও মাঝারি মানের একটি ধাক্কা আসতে চলেছে গণমাধ্যম ও এর সঙ্গে জড়িতদের ওপর। ধারণা করা হচ্ছে এর প্রভাব ২০২১ পর্যন্ত থেকে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো সত্যিকার অর্থে নিজেদের কাজ শুরু না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত সব ধরনের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে নিজের খোলসেই থাকতে হচ্ছে। তবে এরমাঝেই নতুনভাবে নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে প্রায় সবাই। টেলিভিশন পর্দা বা কাগজের পাশাপাশি ই-পেপার বেশ আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে বিগত কয়েকমাসেই। আর ই-পেপার দিন দিন জনপ্রিয়ও হতে শুরু করেছে সাধারণের মাঝে। করোনাপরবর্তী সময়ে তাই হয়তো প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া দুটোকেই ছাপিয়ে বড় নাম হয়ে উঠবে হাতের কাছে থাকা স্মার্টফোন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com