দেশ ছেড়ে চলেই যাচ্ছেন ড. বিজন?

0

ড. বিজন কুমার শীল। গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত করোনা শনাক্ত কিটের উদ্ভাবক দলের প্রধান বিজ্ঞানী ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান। ২০০২ সালে সিঙ্গাপুরের সিভিল সার্ভিসে যোগদানের সময় নিয়ম অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেন। একইসঙ্গে চাকরির নিয়ম অনুযায়ী সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে অবস্থান করছেন। তবে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

তিনি বলেছেন, ‘আমি এখন বাংলাদেশের নাগরিক নই। কিন্তু বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। জন্মভূমিকে দিতে এসেছি, আমি এখান থেকে কিছুই নিতে আসিনি। আমি থাকলে এ দেশের কিছু হারানোর সম্ভাবনা নেই, বরং পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।’

বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) তিনি এসব কথা বলেন।

ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আমার আদি বাড়ি ও জন্ম বাংলাদেশে। তবে আমি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সমর্পণ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছি। তিন বছরের চুক্তিতে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলাম। গত ১ জুলাই ওই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভিসার মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করেছি। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনও সেটি বাড়ায়নি। পরে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ট্যুরিস্ট হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থান করছি। এ অবস্থায় গণবিশ্ববিদ্যালয় বা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারি না। আর গণবিশ্ববিদ্যালয়ও আমার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে।’

সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্বের বিষয়ে বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আমি ২০০২ সালে সিঙ্গাপুর সিভিল সার্ভিসে যোগ দিই। সিঙ্গাপুরে চাকরি নেয়ার পর ওখানকার নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছিলাম।’

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলকে তিন বছরের চুক্তিতে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানায় গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে সংশোধনী চিঠি পাঠিয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এ নিয়োগ প্রাথমিকভাবে ছয় মাস বহাল থাকবে। তবে সন্তোষজনক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়।

এদিকে, ড. বিজন কুমার শীল গণস্বাস্থ্যকে দেওয়া বায়োডাটায় স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ২৮৮বি, বুটিক বাটুক, সিঙ্গাপুর উল্লেখ করেছেন। তাই তিনি প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের নাগরিক কি-না, সেটি যাছাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেয়ার জন্যও বলা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওই চিঠিতে।

এরপর গত ২১ জুলাই ড. বিজন কুমার গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু ডকুমেন্ট সংক্রান্ত চিঠি জমা দেন। তাতে ড. বিজন কুমার সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। সেই চিঠিতে ড. বিজন কুমার জানান, তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। সিঙ্গাপুরের নাগরিক বিধায় ওয়ার্ক পারমিটের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখতে পান, ড. বিজন কুমার ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদনের কথা জানালেও আবেদন সংক্রান্ত কোনো ডক্যুমেন্ট জমা দেননি। 

এমনকি গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ড. বিজনের দুইটি ভিসা পর্যালোচনা করে দেখতে পান, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত তার প্রথম ভিসার কোথাও চাকরি করার কোনও অনুমোদন নেই। এরপর ১৫ জুলাই ২০২০ সাল থেকে ১৭ মে ২০২১ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়ারদের ভিসাতেও কোনো চাকরির অনুমোদন নেই। ভিসাগুলো মূলত টুরিস্ট ভিসা হিসেবে অনুমোদন হয়।

এ অবস্থায় গত ২৭ জুলাই গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ড. বিজনকে লিখিত এক চিঠিতে জানায়, ১ জুলাই থেকে ড. বিজনকে বেতন-ভাতা প্রদান ও এর আগের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। তবে তিনি যদি ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে পারেন, তবে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

গণস্বাস্থ্যের করোনা অ্যান্টিবডি কিটের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. বিজন কুমার বলেন, ‘আমরা রি-এজেন্ট আমদানির অনুমতি পেয়েছি। বিদেশি রি-এজেন্টের অর্ডারও করা হয়েছে। সেগুলো এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হবে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য।’

ডা. বিজন কুমার শীলের বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তার ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেছি৷ সে বাংলাদেশের একজন কৃতি বিজ্ঞানী৷ তাকে আমরা সারাজীবন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাখতে চাই৷ কিছু লোক নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ আমার ধারণা এটা ঠিক হয়ে যাবে৷’

১৯৬১ সালে জন্ম নেয়া নাটোরের কৃষক পরিবারের সন্তান ড. বিজন কুমার শীল বনপাড়া সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে এসএসসি ও পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হয়েছিলেন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভেটেরিনারি সায়েন্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক পাস করেছিলেন। অণুজীব বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও নিয়েছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। কমলওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ে পিএইচডি করেছেন যুক্তরাজ্যের দ্য ইউনিভার্সিটি অব সারে থেকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি সুপরিচিত গবেষক ও অণুজীব বিজ্ঞানী হিসেবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com