সবজিও এখন নাগালের বাইরে

0

স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা সবজিও এখন নাগালের বাইরে চলে গেছে। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী মানুষ ভাতের সঙ্গে একটু সবজি পেলেই খুশি হতো। কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলসহ ৩৭টি জেলায় টানা চার দফা বন্যায় সেই ভরসাটুকুও এখন নেই।

কারণ, বন্যায় সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সবজির দাম এখন আকাশছোঁয়া। শুধু শ্রমজীবী মানুষ কেন? স্বল্প আয়ের মানুষের কাছেও সবজি কেনা এখন ‘বিলাসিতার’ মতো। পেঁপে, কচুর লতি আর কচুর মুখি ছাড়া ৬০ টাকার নীচে কোনো সবজি নেই। কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অথচ এক-দেড় মাস আগেও ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে প্রায় সব ধরনের সবজি পাওয়া যেত। এদিকে গত সপ্তাহেও চালের দাম একদফা বেড়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে চার দফা বেড়েছে চালের দাম।

করোনা সংকটের এই সময়ে যখন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে, ঠিকমতো বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। তখন সবজির এই ‘আগুন’ দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্রেতারা। দাম বেড়েছে ডিমেরও। এ ছাড়া চলতি বছরেই তিন দফা বেড়েছে চালের দাম। সবমিলিয়ে ভালো নেই স্বল্প আয়ের মানুষ।

সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সবজির সরবরাহ নেই। বন্যায় সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সবজির সরবরাহ কমে গেছে বলে তারা জানান। এই সবজি ব্যবসায়ীরা বলেন, মাছ-মাংসের দাম বেশি। গরীবের ভরসা ছিল সবজি। কিন্তু এখন বন্যার কারণে তা-ও নাগালের বাইরে চলে গেল।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কাওরানবাজার, নিউমার্কেট ও শান্তিনগর কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার এ তথ্য পাওয়া যায়। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা, বেগুন, বরবটি, কাঁকরোল, পটোল, ঢ্যাঁরস ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর, ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমের মধ্যে রয়েছে শুধু পেঁপে, কচুর লতি ও কচুর মুখি। তাও ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শাকের দামও বেশি। পুঁই শাক ও লাল শাকের একটা ছোট্ট আটি (এক মুঠো) বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। লাউ, কুমড়ো প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

এদিকে খুচরাবাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। তাও চাহিদামতো কাঁচা মরিচ বাজারে নেই। গতকাল নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা চাকরিজীবী মাকসুদুর রহমান বলেন, একদিকে চাকরির বেতন-ভাতা কমছে। অন্যদিকে বাসভাড়া আর নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। কেনাকাটা এখন আগের চেয়ে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। কিন্তু তারপরও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।

শাকসবজির পাশাপাশি ডিমের দামও বেড়েছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগেও ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যেত।

নিবারণ রায় জানান, শাক-সবজির জন্য বিখ্যাত নরসিংদীর বিভিন্ন হাটবাজারে শাক-সবজির দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল নরসিংদী শহরের বৌ-বাজারের নয়ন নামে এক সবজি ব্যবসায়ী জানান, বাজারে চাহিদার চেয়ে সবজি কম আসায় হঠাত্ করেই দাম বেড়ে গেছে। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে অনেক সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া নতুন করে আবাদ করা সবজি এখনো পুরোপুরি বাজারে আসেনি। তারা আরো জানান, বন্যার অজুহাতে অনেক দিন ধরে কিছুটা চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছিল সব ধরনের সবজি। এরপরও গত ১৫ দিনে নতুন করে সবজির দাম আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

স্বল্প আয়ের মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলেছে চালের দামও। গত সপ্তাহেও আরো এক দফা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি চালে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা, মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা ও সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫৫ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দেশে চাহিদার তুলনায় চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও একটি চক্র সিন্ডিকেট করে বারবার চালের দাম বাড়াচ্ছে। মহামারি করোনা ও বন্যার অজুহাতে এই চক্র সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী এই চক্রের কথা স্বীকার করলেও চালের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করা যাচ্ছে না।

দেশে চালের সবচেয়ে বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের ‘দাদা রাইস অ্যাগ্রো ফুড’ এর মালিক অটো মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, বোরো মৌসুম শেষ হওয়ায় এখন ধানের দাম বেশি। এছাড়া বন্যা ও সারাদেশে বৃষ্টিপাতের কারণে চাতালে ধান শুকানো যাচ্ছে না। তাই চালের দাম বেড়েছে।

তবে পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বোরো মৌসুমে উত্পাদিত বেশিরভাগ ধান মিলাররা আগেই কিনে নিয়েছেন। প্রান্তিক কৃষকের হাতে এখন ধান নেই। তাই মিলারদের চালের দাম বাড়ানোর এই যুক্তি ঠিক নয়।

এদিকে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বন্যার জন্য আউশ-আমনের যে ক্ষতি হয়েছে তা সামগ্রিক খাদ্য উত্পাদনে বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। এছাড়া আমরা চাল আমদানির সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রয়োজনে চাল আমদানি করা হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com