ভারতীয় অনলাইন জুয়া ‘শিলং তীর’-এ নিঃস্ব বাংলাদেশীরা

0

সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গৌহাটি এলাকা থেকে ১৯৯০ সাল চালু হয় ‘শিলং তীর’ নামের জুয়া খেলা, যা কালক্রমে অনলাইন জুয়া হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে সিলেট, নেত্রকোনা ও ঢাকাতে। বিভিন্ন এজেন্ট নিয়োগ করে পাতানো এই খেলায় এক দিকে যেমন নিঃস্ব হচ্ছেন বাংলাদেশীরা, অন্য দিকে জুয়াড়িদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে চলে যাচ্ছে। গত সোমবার ও মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে ভারতীয় ‘শিলং তীর’ নামক এই অনলাইন জুয়া চক্রের চার বাংলাদেশী এজেন্টকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তারা হলেন, শামিম মিয়া, আব্দুল আলী, এরশাদ মিয়া ও সোহাগ মিয়া।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল, একটি রেজিস্টার খাতা, ১-৯৯ পর্যন্ত নম্বরবিশিষ্ট চারটি চার্ট সংবলিত ব্যবহৃত শিট এবং পাঁচটি অব্যবহৃত চার্ট সংবলিত শিট জব্দ করা হয়। ডিবির অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো: নাজমুল হক গতকাল বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অনলাইন জুয়া শিলং তীর রাজধানীতে পৌঁছে গেছেÑ এমন তথ্যের ভিত্তিতে তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে গত সোমবার রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজেন্ট শামিম ও আব্দুল আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানা থেকে এজেন্ট এরশাদ ও সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়।

মূলত ভারতের শিলংয়ের জুয়াড়িরা বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশী এজেন্টরা আবার বিভিন্ন এলাকায় তাদের সেলসম্যান নিয়োগ করেন। এই সেলসম্যানদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের লোভ দিয়ে শিলং তীরে আসক্ত করে সর্বস্বান্ত করেন। জুয়ার জন্য ভারতের শিলংভিত্তিক ওয়েবসাইট সব হতে প্রাপ্ত ১ হতে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরগুলো বিক্রি করা হয়ে থাকে। এই নম্বরগুলো যারা কেনে, তাদের সাথে সেলসম্যানরা যোগাযোগ করেন। তখন জুয়াড়িরা সেলসম্যানের কাছে নম্বর ও বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দেয়। সেলসম্যানরা বিক্রীত এই নম্বরের বিপরীতে টাকা এজেন্টের কাছে দেয়। ভারতের শিলংয়ে রোববার ব্যতীত সপ্তাহের ছয় দিন বাংলাদেশ সময় সোয়া ৪টায় এই জুয়া খেলার ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্রতে ১ হতে ৯৯ এর মধ্যে একটি নম্বর বিজয়ী হয়। যারা ওই নম্বরটি ক্রয় করে তারা বিজয়ী হিসেবে গণ্য হয় এবং বিজয়ীরা নম্বরের ক্রয়মূল্যের ৮০ গুণ টাকা এজেন্টের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ জুয়াড়ি বিজয়ী হতে না পেরে তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলে। জুয়াড়ি, সেলসম্যান ও এজেন্টের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সব লেনদেন সম্পন্ন হয়। প্রতিদিন এভাবে এই চক্রটি সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

গ্রেফতারকৃতদের গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রুজুকৃত মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ডিবি কর্মকর্তা নাজমুল হক।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com