নেশা গ্রহণকে নিষিদ্ধ করেছেন বিশ্বনবি

0

নেশা ইসলামে নিষিদ্ধ। এর পরিমাণ কম হোক আর বেশি হোক। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাজের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৩)

এ আয়াকে নেশায় আসক্ত থাকা অবস্থায় ইবাদত-বন্দেগিতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে কি নেশায় আসক্ত হওয়া যে কোনো জিনিস খাওয়া যাবে?

না, কুরআনুল কারিমের অন্য আয়াতে নেশা জাতীয় দ্রব্যসহ অনেক কিছু থেকেই মুসলিম উম্মাহকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক। যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৯০)

হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের পরিমাণের কথা সুস্পষ্ট করে বলেছেন। নেশার পরিমাণ ও নেশা গ্রহণ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
– হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সব ধরণের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম। যে দ্রব্যের এক ‘ফারাক’ (মশক) পরিমাণ (পানে) নেশা সৃষ্টি হয়, তার এক আঁজল (হাতের কোশ) পরিমাণও হারাম।’ (তিরমিজি)

– অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক ঢোক পরিমাণ পান করাও হারাম।

– হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে দ্রব্যের বেশি পরিমাণ (পান করলে) নেশার সৃষ্টি করে, তার অল্প পরিমাণও (পান করা) হারাম।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি নেশাগ্রস্ত যুব সমাজ। ইয়াবা, বিয়ার, হুইস্কি, চুয়ানি, তাড়ি ভদকা, শ্যাম্পেন, কোডিন, মরফিন, প্যাথেড্রিন, হেরোইন ও বিভিন্ন ধরণের ড্রাগ নেয়াসহ ইত্যাদি যাবতীয় নেশায় আসক্ত। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক এসব নেশাদায়ক দ্রব্যসহ আরো যেসব জিনিস গ্রহণ করলে মানুষ নেশায় আসক্ত হয়ে, তা গ্রহণ করা হারাম। এতে কবিরা গোনাহ হয়। যা আন্তরিক তাওবাহ ছাড়া ক্ষমা হয় না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করেছেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের কিছু লোক মদ পান করবে, তারা সেটার ভিন্ন নামকরণ করে নেবে।’ (মেশকাত)

সে কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম নেশার পরিমাণ সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন যে-
– ‘প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই ‘খামর’ বা মদ এবং প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই হারাম।’ (মেশকাত)
– ‘যে জিনিস অতিমাত্রায় গ্রহণে নেশা হয়, তার সামান্য পরিমাণও হারাম।‘ (মেশকাত)

উল্লেখ্য, বিড়ি-সিগারেট, জর্দা, গুল এমন তামাকজাত দ্রব্যের নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রের নিকোটিনিক রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে নেশার সৃষ্টি করে, অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। সেজন্য এসবে কেউ আসক্ত হলে সে তা সহজে ছাড়তে পারেনা। তাছাড়া বিড়ি-সিগারেট, জর্দা ও গুল তামাকজাত সব দ্রব্যের কারণে ক্যান্সার, হার্ট, ফুসফুস আক্রান্ত ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সে কারণে এসব গ্রহণ করাও সুস্পষ্ট হারাম।

সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী যা কিছু মস্তিষ্কের সঙ্গে মিশে জ্ঞান-বুদ্ধিকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে তাই হারাম। চাই তা কম হোক বা বেশি হোক। তরল পদার্থ হোক কিংবা কঠিন পদার্থ হোক। এসব নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যের নাম যাই হোক; মূলত এগুলো সবই এক এবং এসবের বিধানও এক।

আল্লাহ তাআলা গোটা মানবজাতিকে তামাকজাত দ্রব্যসহ নেশা সৃষ্টিকারী সব জিনিস থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে এসব হারাম কাজ থেকে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com