মা-মেয়ের কোমরে রশি: প্রতিটি নারীর জন্যই অবমাননাকর

0

‘কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চুরির অভিযোগে চেয়ারম্যান কর্তৃক মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনাটি প্রতিটি নারীর জন্য অবমাননাকর’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেসমিন সুলতানা।

তিনি বলেন, ‘আমি বলব এটি একটি নারকীয় ঘটনা। যেখানে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, আমাদের জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী এবং আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রীও নারী। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার পেকুয়া এলাকার চেয়ারম্যানের দ্বারা এমন নারকীয় ঘটনা ঘটানো প্রতিটি নারীর জন্য অবমাননাকর। চেয়ারম্যানের এমন কোনো ক্ষমতা নেই সে রশি দিয়ে বেঁধে মা ও মেয়েকে রাস্তায় ঘোরাতে পারে। এ ঘোরানো আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি ঘুরছি, আমার পেছনে আমার মেয়ে ঘুরছে।’

নির্যাতনের ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আনার পর এমন মন্তব্য করেন আইনজীবী জেসমিন সুলতানা।

এর আগে সোমবার (২৪ আগস্ট) বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেসমিন সুলতানা ও এ এম জামিউল হক ফয়সাল।

জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘এ ঘটনাকে আমি নারকীয় ঘটনা বলব, আর চেয়ারম্যান কর্তৃক নারীর কোমরে রশি বেঁধে এলাকার রাস্তাজুড়ে ঘোরানো প্রতিটি নারীর জন্য অবমাননাকর। আমরা কোর্টের কাছে তুলে ধরেছি, এটা সম্পূর্ণ মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘আমরা পত্রিকাগুলোর খবর আদালতের নোটিশে নিয়েছি। আদালত দেখেছেন। দেখার পরে আদালতকে ইনফর্ম করা হয়, প্রশাসন একটা ব্যবস্থা নিয়েছে ইনকোয়ারির জন্য। আদালত বললেন, যেহেতু একটা নির্দেশনা (ইনকোয়ারি) এসেছে এটার বাস্তবায়ন হয় কি না- এটা কী হচ্ছে আমরাও দেখি আপনারাও দেখেন।’

জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘আপাতত আমরা মনে করি, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোর্ট এবং জেলা প্রশাসন দুই পক্ষই ইনকোয়ারির ব্যবস্থা করেছে। আমরা এটার রিপোর্ট দেখি, আমরা মনে করি, এটাও ইতিবাচক দিক। আমরা এটার সুবিচার পাব।’

এদিকে সোমবার চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেবের আদালত ওই মা ও মেয়ের জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে শনিবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাংয়ে গরু চুরির অভিযোগে মা ও যুবতী মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে এলাকায় ঘুরিয়েছে স্থানীয় লোকজন।

পরে সেখান থেকে তাদের হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ রকম একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় গরুর মালিক চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মাহবুবুল হক চকরিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এ দুই নারী এবং অজ্ঞাত সিনএজি চালকসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচজনকেই কারাগারে পাঠানো হয়।

ওই মামলার আসামিরা হলেন, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ছুট্টু (২৭), চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট এলাকার শহীদের কলোনির পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে মো. এমরান (২১), মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলি (২৮) ও রোজি আক্তার (২৩)। প্রথমজন ছাড়া তিন নারী ও দুই পুরুষ একই পরিবারের সদস্য।

এদিকে মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরানোর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পাশাপাশি এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে মারতে মারতে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় ভিডিওতে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারকেও দেখা গেছে।

পরে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চকরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেবের আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com