ধর্ষন শেষে খুনের ৪৫ দিন পর ছাত্রী থানায় হাজির!

0

জিসা মনি (১৪)। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রেমিকসহ তিনজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তারা জিসাকে গণর্ধষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়েছে। কি মর্মান্তিক একটি ঘটনা। জবানবন্দি রেকর্ডের পর আদালত তিনজনকে কারাগারের পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাঅন্তরীণ। কিন্তু ৪৫ দিন পর জিসা নিজেই নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় হাজির। তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনে।

মুহুর্তে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উপর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। এদিকে দেড়মাস পর মেয়েকে জীবিত পেয়ে খুশিতে আত্মহারা জিসার মা-বাবা। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তারকৃত তিন যুবকের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তীর বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কারোড এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীরের ছোট মেয়ে মেয়ে জিসা। সে স্থানীয় সরকারি প্রাইমারী স্কুলের পঞ্জম শ্রেণির ছাত্রী। গত ৪ জুলাই থেকে সে নিখোঁজ হয়। ৬ আগস্ট জিসার বাবা জাহাঙ্গীর আলম নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, এলকার যুবক আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে বিভিন্ন সময় প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে বাধা দিলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ফোনে ঠিকানা দিলে তার মেয়ে সেই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে গাড়ি দিয়ে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। এমন সন্দিহানের পর থেকেই তার মেয়ের কোন সন্ধান পাননি তার পরিবার। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শামীম জানিয়েছেন, মেয়েটির মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পায় পুলিশ। রকিবের মোবাইল নাম্বার দিয়ে আব্দুল্লাহ সে কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতো। ঘটনার দিনও ওই নাম্বার দিয়ে কল করে আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় আব্দুল্লাহ (২২), রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিল (৩৬)কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে, গত ৯ আগস্ট দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে জবানবন্দি দেয়ার জন্য হাজির করে পুলিশ। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দিতে তিনজন বলে জিসাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। রোববার দুপুর আড়াইটার সময় বন্দরের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে জিসা তার মা রেখা আক্তারকে ফোন করে জানায় সে বেঁচে আছে, ভালো আছে। তবে কিছু টাকার প্রয়োজন। এমন কথায় টাকা পাঠিয়ে উল্লেখিত এলাকায় দোকানটিতে ছুটে যান জিসার মা-বাবা। এছাড়াও এ অবিশ্বাস্য ঘটনায় মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুনকে বিষয়টি অবহিত করে। এরপর তার বাবা-মা ছুটে যায় বন্দর থানাধীণ নবীগঞ্জ এলাকার সেই মোবাইল ফোনের দোকানটিতে। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার মেয়েকে চোখের সামনে দেখে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তার মা ও বাবা। জিসার মা রেখা আক্তার আরো জানান, আমি চাইনা কোন পরিবার এমন শাস্তি ভোগ করুক। আমি আমার মেয়েকে একবার দেখার জন্য দেড়মাস ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মেয়ে কি আসলেই মরে গেছে না বেঁচে আছে। আসামীরা জবানবন্দি দিলেও আমার মেয়ের কোন হদিস না পেয়ে হতাশায় ভোগছিলাম। আজ মেয়েকে পেয়ে আমি অনেক খুশি। আমি আমার মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে চাই। আমি আর আদালতে দাঁড়াতে চাইনা। থানায় এসে ঘুরতে চাইনা। তিনি আরও বলেন, দারোগা শামীম মেয়েকে নিয়ে থানায় আসতে বললে আমরা সন্ধ্যার পর থানায় যাই। জিসার বাবা জাহাঙ্গীর আলম জনান, পুলিশ বলেছিল আমার মেয়েকে ধর্ষনের পর নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নির্দোষ ৩ জনকে আটক করেছে তারা। কিন্তু এই দেড় মাসে আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু মেয়ে নিজে থেকেই আজ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে আমরা নিয়ে থানায় আসি। এদিকে অন্য একটি সূত্র জানায়, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় ইকবাল ওরফে ইব্রাহিম নামে এক ছেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গত দেড়মাস ধরে এক সঙ্গে বসবাস করেছে জিসা। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুন বলেন, ইকবাল ও জিসা একে অপরের পরিচিত ছিলো। গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলো। রোববার জিসার সন্ধান পাওয়া যায় সে ইকবাল নামে এক যুবকের সঙ্গে ছিলো। পুলিশ ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। যদিও এরআগে মামলার তদন্তকারী অফিসার শামীম আল মামুন অভিযুক্তদের জবানবন্দি প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কারোড এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীরের ছোট মেয়ে জিসার সঙ্গে বখাটে আবদুল্লাহ তার বন্ধু ইজিবাইক চালক রকিবের মোবাইল দিয়ে ৩ মাস প্রেম করেছে। ঘটনার দিন ৪ জুলাই ঘোরাফেরার কথা বলে তাকে ইস্পাহানি ঘাটে ডেকে নেয় আবদুল্লাহ। এরপর বন্দরের বিভিন্ন স্থানে রকিবের ইজিবাইক দিয়ে ঘোরাফেরা করে। পরে রাত ৮টায় ইস্পাহানি ঘাটে এসে খলিলুর রহমানের নৌকায় উঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে নৌকার মধ্যেই আবদুল্লাহ প্রথমে জিসাকে ধর্ষণ করে। এরপর মাঝি খলিলুর রহমানও জোর করে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এতে কিশোরী বাকবিতন্ডা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে খলিলুর রহমান সেই কিশোরীর দুই পা চেপে ধরে আর আবদুল্লাহ গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর দুইজনে মিলে সেই ৫ম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী কিশোরীকে শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানে ফেলে দেয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com