প্লাবিত উপকূলে মানবেতর জীবন

0

দেশের প্রধান প্রধান নদনদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে ছয় ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে জোয়ারের পানি নামতে পারছে না। এতে উপকূলের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে লাখো মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে। ফসল ও মাছের ঘেরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে গতকাল শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে হাঁটুপানি : সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গতকাল দিনভর চট্টগ্রামে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানিতে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে হাঁটুপানি উঠলে রোগী ও তাদের স্বজনরা দুর্ভোগে পড়ে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত ১০২ দশমিক ০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

সিলেট বাড়ছে নদনদীর পানি : ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে সিলেটে নদনদীর পানি ফের বাড়ছে। এতে চলমান বন্যা পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। গতকাল কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে বেড়ে ১৩ দশমিক ০১ ও সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ দশমিক ৫৫ মিটার হয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান সরকার জানান, পানি বাড়লেও এ মুহূর্তে বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।

বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : টানা বর্ষণ ও নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীসংলগ্ন কয়েকশ’ মাছের ঘের ভেসে গেছে। গত ৬ দিনে জেলায় ১ হাজার ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জোয়ারের প্রভাবে ভৈরব, পশুর, পানগুছি ও বলেশ্বর নদীতে ৩ থেকে ৪ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে নদী তীরবর্তী ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জে অনেক মাছের ঘের ভেসে গেছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. খালেদ কনক।

পটুয়াখালীতে জোয়ারে ভাসছে জনপদ : অমাবস্যার প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে পটুয়াখালী শহরসহ অন্তত ৫০টি গ্রাম। ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জোয়ারে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। জেলার কলাপাড়া উপজেলার লালুয়ার চারিপাড়ার পারভেজ ও ফিরোজ জানান, বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় জোয়ারে ৫-৭ দিনের দুর্ভোগ থাকে। কিন্তু গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের জোয়ারের মতো এত পানি তারা আগে কখনো দেখেননি।

দিনে দুবার প্লাবিত হচ্ছে বরগুনার নিম্নাঞ্চল : টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে দিনে দুবার প্লাবিত হচ্ছে বরগুনার নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ফসল। জেলার ৬ উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। গতকাল অমাবস্যার প্রভাবে পায়রা নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার, বিষখালীর ৫৫ সেন্টিমিটার ও বলেশ্বর নদীর পানি ২৭ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়।

ঝালকাঠিতে নদনদীর পানিবৃদ্ধি : বিগত তিন দিন ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিশখালী ও হলতা নদীর পানি বেড়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জোয়ারে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল, বীজতলা ও ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

ভোলায় পানির নিচে কয়েক হাজার হেক্টর ফসল : জোয়ারের পানিতে ভোলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫ হাজার মানুষ। মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

সাতক্ষীরায় বাঁধ ভেঙে প্লাবন : ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার বেশিরভাগ বাঁধ ভেঙে যায়। স্থানীয়রা মেরামত করলেও গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ফের এসব বাঁধে ভাঙন দেখা দিলে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এর মধ্যে প্রতাপনগরের সঙ্গে আশাশুনি ও সাতক্ষীরার যোগাযোগের একমাত্র সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণেই মানুষ বারবার দুর্ভোগে পড়েছেন।’

বরিশালে বিপদসীমার ওপরে নদনদীর পানি : বরিশালে এখনো স্বাভাবিকের চেয়ে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল কীর্তনখোলা নদীর জোয়ারের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নগরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। অনেক স্থানে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২০ বছরের মধ্যে কীর্তনখোলা নদীর পানি গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ লেভেল অতিক্রম করে। ওইদিন বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com