ক্ষমতাসীন দলে সঙ্ঘাতে জর্জরিত নেপাল সরকার

0

গত বছর ওহানে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। নেপালে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে জানুয়ারিতে। ওই সময় নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি হাউস স্পিকার নির্বাচন নিয়ে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল।

নেপালে কোভিড-১৯ প্রথম শনাক্ত হওয়ার দু’দিন পর অগ্নি স্যাপকোতা স্পিকার হন। তবে এই নির্বাচনের আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রধানমন্ত্রী ও পার্টি চেয়ারম্যান কে পি শর্মা ওলি ও পুষ্প কমল দহলের মধ্যে লড়াই চলে। নির্বাচনের পরপর আয়োজিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন নিয়ে বিরোধ ছয়াপাত করে।

তারপর ৪ মার্চ ওলির দ্বিতীয় কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়। এর এক দিন আগে সরকার কোভিড-১৯ মোকাবেলার জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। ওলি হাসপাতালে ভর্তি হলেও তিনি ভারপ্রাপ্ত কোনো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে যাননি। ফলে প্রশ্ন ওঠে, ভাইরাসটি বিস্তার ঠেকাতে সরকার কিভাবে কাজ করবে। ওলির কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার মহামারীটি দমন করার জন্য লকডাউন মেয়াদটিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। লকডাউনের সময়টিতে ক্ষমতাসীন দল ভাইরাস দমনে নিয়োজিত না থেকে ওলির পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলো।

শ্রম, চাকরি ও সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী রামেশ্বর রায়া যাদব একমত প্রকাশ করে বলেন, সরকার কোভিড-১৯ দমনে যথাযথভাবে মনোযোগী হয়নি।

তিনি পোস্টকে বলেন, দলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে অনিশ্চিত পরিবেশ বিরাজ করছিল। আমরা কোভিড-১৯ বিস্তার ঠেকাতে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না।

সাবেক মুখ্যসচিব বিমল কৈরালা বলেন, দলের মধ্যে সঙ্ঘাত থাকলে সরকার পরিচালনায় তা ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে।

লকডাউনের আগে কোভিড-১৯ রোগী ছিল দুজন। আর ২১ জুলাই লকডাউনের পর দেখা গেল রোগী বেড়ে ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে নেপালে শনাক্ত ২৮,২৫৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ১১৪ জনের।

সরকার মহামারীটি মোকাবেলায় স্থবিরতার পরিচয় দিয়েছে। তবে সেইসাথে দুর্নীতি পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভাইরাসটির হুমকিকে হালকা হিসেবে দেখার বিষয়টি অব্যাহতভাবে বলে যাচ্ছেন। অনেকবার তিনি বলছেন, কোভিড-১৯-এ লোকজন মারা যাচ্ছে না, আবার তেঁতুল-পানি পান করার জন্য জনসাধারণকে উপদেশ দিচ্ছেন।

জুনের শেষ নাগাদ কোভিড ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে দলের মধ্যে ওলির পদত্যাগের দাবি জোরদার হয়ে ওঠে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শ্যাম শ্রেষ্ঠা বলেন, মহামারী ঠেকাতে এই সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আর এর কারণ দলীয় কোন্দল।

এদিকে ভারত থেকে বিপুলসংখ্যক নেপালি দেশে ফেরার উদ্যোগ নেয়। তবে সীমান্ত বন্ধ থাকায় অনেকে বিকল্প পথ ধরে। আবার সীমান্তে স্থাপন করা কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রগুলো ছিল অব্যবস্থাপনায় পরিপূর্ণ।

দলে অন্তঃদ্বন্দ্ব বাড়তে থাকায় ওলি ২০ এপ্রিল দুটি অধ্যাদেশ জারি করেন। একটি দলের ভাঙন-সম্পর্কিত ও অপরটি নতুন দলের নিবন্ধন নিয়ে। দলের মধ্যে তার বিরোধীদের দমন করার জন্য এই ব্যবস্থা ছিল। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ৫ দিন পর তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন।

এরপর ২০ এপ্রিল পার্টির নেতারা সেক্রেটারিয়েট সভায় ওলির পদত্যাগ দাবি করেন। মে মাসে ওলি সরকারের নজর সীমান্ত ইস্যুতে সরে যায়। লিপুলেখকে নেপালের বলে জোরালোভাবে ঘোষণা করেন তিনি। কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেপালের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রও প্রকাশ করেন তিনি।

ভাইরাস মোকাবেলার চেয়ে অন্যান্য ইস্যুতেই কর্মকর্তারা ব্যস্ত রয়েছেন বেশি। উপপ্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখরেল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাম বাহাদুর থাপা, জ্বালানিমন্ত্রী বারশামান পুন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গায়ওয়ালি, কৃষিমন্ত্রী ঘানেশিয়া ভুষাল, পর্যটনমন্ত্রী যোগেশ্বর ভট্টরাই, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভানতুভক্ত ধাকাল, বনমন্ত্রী শক্তি বসনেট দলীয় কোন্দল মেটাতে ব্যস্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে ধাকাল ছাড়া সবাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজেন্দ্র মহারাজান বলেন, ক্ষমতাসীন দলে অন্তন্দ্বন্দ্বে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীর অবস্থান একেবারে ঠুনকো করে ফেলেছে। তারা কিভাবে সরকার পরিচালনায় নজর দেবে? সরকারের উচিত ছিল মহামারী দমনে সব শক্তি নিয়োগ করা। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের অপ্রয়োজনীয় অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে তা আর হচ্ছে না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com