নদী ড্রেজিং প্রকল্প: একেকটি সাইনবোর্ড দুই লাখ টাকা

0

নদী ড্রেজিং প্রকল্পে একেকটি ‘আরসিসি সাইনবোর্ড’ তৈরির জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ টাকা। এ রকম চারটি সাইনবোর্ডের জন্য ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ প্রস্তাব বাতিল করতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সাইনবোর্ড নির্মাণের ব্যয় বাদ দেয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে ঠিকাদারের চুক্তির ভেতর এগুলো নির্মাণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

‘ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তেঁতুলিয়া নদীর গতিপথ ও নাব্য পুনরুদ্ধার এবং পটুয়াখালী ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা রক্ষা’ প্রকল্পে এ চিত্র উঠে এসেছে।

পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা বৃহস্পতিবার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা স্থগিত করা হয়েছে। শিগগিরই এ সভাটি অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানেই এসব বিষয় তুলে ধরা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।ওই সভায় নদীতীর সংরক্ষণে অতিরিক্ত ব্যয় এবং স্টাডি ছাড়াই নদী ড্রেজিংয়ের জন্য বড় অঙ্কের ব্যয় ধরায় এর যৌক্তিকতাও জানতে চাওয়া হবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আরসিসি পিলার করে যদি সাইনবোর্ড তৈরি করা হয় সেক্ষেত্রে ব্যয় একটু বেশিই লাগবে।

তবে এটা নির্ভর করে স্থান, মাটির অবস্থা, ডিজাইনের ওপর। কিন্তু আপনারা প্রশ্ন তুলতে পারেন, এত টাকা দিয়ে সাইনবোর্ড কেন করতে হবে? সেটি ঠিক আছে। আমরা বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখব। তাছাড়া পিইসি সভা হয়ই এসব ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য। তাই সেখান থেকে যে সুপারিশ দেয়া হবে আমরা তা মেনে নিয়ে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন মনিটরিং অনেক বেশি জোরদার করা হয়েছে। ফলে প্রকৌশলীরা যা ইচ্ছা ব্যয় ধরতে পারেন না। ভুল-ক্রটিও কম হচ্ছে। আশা করছি আগামীতে ভুল একেবারেই কমে আসবে।

স্থগিত হওয়া পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৭ হাজার মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাবদ ৬২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি মিটারের ব্যয় পড়ে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। যা অত্যন্ত বেশি।

নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের যৌক্তিকতাসহ ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি সম্পর্কে সভায় ব্যাখ্যা দিতে পারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়া নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের চেইনেজ, স্থান, নকশা ও কাজে ব্যবহৃত ম্যাটেরিয়ালের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে এ খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস করা যেতে পারে।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় ১৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং বাবদ ১৩৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের ব্যয় পড়ে ১৬৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রস্তাবিত কাজ নির্ধারণের বিষয়ে হাইড্রো-মরফোলজিক্যাল স্টাডি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়, তাই স্টাডি সংক্রান্ত তথ্য এবং নদী ড্রেজিংয়ের যৌক্তিকতা, স্থান, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা সম্পর্কে পিইসি সভায় উপস্থাপন করা যেতে পারে।

কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, ড্রেজিং বিষয়ে কারিগরি কমিটির প্রতিবেদনের ৫১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, নদীর মরফোলজি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই কাজ বাস্তবায়নকালীন অস্থায়ী চরগুলোর অবস্থান ও আয়তন পরিবর্তন হলে কিংবা না হলেও তখন প্রয়োজনীয় জরিপ কাজ সম্পাদন করা হবে। তারপর সে অনুযায়ী ড্রেজিংয়ের জন্য প্রস্তাবিত চ্যানেলের প্রয়োজনীয়তা, অবস্থান, দৈর্ঘ্য ও গভীরতা নির্ধারণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ বিবেচনায় প্রকল্প প্রস্তাবে ড্রেজিং কাজ অন্তর্ভুক্ত কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা বিবেচনার অবকাশ রয়েছে।

প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, বর্তমানে প্রকল্প প্রস্তাবের মধ্যে পণ্যের একক দর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। ফলে কোনো কাজের কি ব্যয় সেসব বিষয় বিস্তারিত দেখে তারপরই সুপারিশ করা হয়ে থাকে। তবে এই সাইনবোর্ড নির্মাণের প্রস্তাবটি আমরা ঠিকাদারের চুক্তির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে বলব। কেননা তারা কোটি কোটি টাকার কাজ করবে আর সামান্য সাইনবোর্ড দিতে পারবে না। এতে সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে। আর যদি সেটি সম্ভব না হয় তখন কস্ট অ্যানালাইসিস করে দেখা হবে একটি সাইনবোর্ড তৈরিতে ২ লাখ টাকা লাগবে কিনা।

সূত্র জানায়, ‘ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তেঁতুলিয়া নদীর গতিপথ ও নাব্য পুনরুদ্ধার এবং পটুয়াখালী জেলাধীন বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চঘাট হতে বরিশাল জেলাধীন বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা রক্ষা’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত নেই। তবে অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের সম্মতি নেয়া হয়েছে। এর মূল কাজই হচ্ছে নদীর তীর সংরক্ষণ ও নদী ড্রেজিং করা।

পিইসি সভার কার্যপত্রে বিভিন্ন খাতের ব্যয় কমিয়ে আনা এবং কিছু ব্যয় বাদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যেসব খাতে ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে- সেগুলো হচ্ছে ভ্রমণ, ফটোকপিয়ার ক্রয়, একটি টোটাল স্টেশন তৈরি, পেট্রল-লুব্রিকেন্ট, মুদ্রণ ও বাঁধাই, সাব সয়েল ইনভেস্টিগেশন খাতের ব্যয় কমিয়ে ধরতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে একটি মাল্টিমিডিয়া বাবদ এক লাখ টাকা, আসবাবপত্র বাবদ ৩ লাখ টাকা ও সেমিনার ও কনফারেন্স বাবদ ৬ লাখ টাকার সংস্থান বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com