প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে নতুন রেকর্ড
জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স বাড়ানোর পরও ধাপে ধাপে চুক্তিতে নিয়োগের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এখন বছরের পর বছর চুক্তিতে পুনঃনিয়োগ চলছেই। এ নিয়ে প্রশাসনে বেশ অসন্তোষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার অবশ্য বিভিন্ন সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বিশেষ করে অবসরের বয়স বৃদ্ধির সময় তত্কালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছিলেন, আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হবে না।
বিশেষায়িত কর্মসম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ বিবেচনায় রাষ্ট্রপতির কোটায় আগে মোট পদের ১০ শতাংশ পদে চুক্তিতে পুনঃনিয়োগের বিধান ছিল। কিন্তু বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এ বিধান বাতিল করে যত খুশি তত নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এর পর থেকেই চলছে চুক্তির হিড়িক। অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এমনকি যেসব কর্মকর্তার যোগ্যতা, সততা এমনকি আদর্শিক ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তারাও নানা পথে চুক্তিতে পুনঃনিয়োগ বাগিয়ে নিচ্ছেন।
লেজিস-লেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব শহিদুল হক তিন দফায় পাঁচ বছরের চুক্তিতে এখনো বহাল আছেন। সাবেক এক মন্ত্রীর মেয়ের জামাই এটিই তার বড়ো পরিচয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন তার চলাফেরা ছাত্রলীগের সঙ্গে ছিল এমন তথ্য মেলে না।
৫৭ থেকে চাকরির অবসরের বয়স এখন ৫৯ বছর করা হয়েছে। ঐ কর্মকর্তা ৫৯ বছর পার করার পর এখন আরো পাঁচ বছরের জন্য চাকরি করছেন। অর্থাৎ নিজের বয়স ৬৪ বছর পর্যন্ত তিনি চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ এই বিভাগে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন যারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে—এক জামায়াত নেতার আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ হয়। তখন সরকার আইন সংশোধন করে আপিল করার সুযোগ নিতে আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। সংশোধিত আইনটি যখন সংসদে পাঠানো হয় তখন দেখা যায়, আইনের কার্যকারিতা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, সরকার যে ক্ষেত্রে আপিল করতে চাইছে সেটি হচ্ছে না। তখন সংসদ থেকে আবার আইনের কপি ফেরত নেওয়া হয় এবং আইন কার্যকরের সময়সীমা সরকারের সুবিধামতো পর্যায়ে নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এই কর্মকর্তার বারবার বিদেশ ভ্রমণ, বিনা অনুমতিতে বিদেশে অবস্থান নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৫৯ বছরের পর এখন দুই ধাপে আরো চার বছরের চুক্তিতে কাজ করছেন খন্দকার শহিদুল্লাহ। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের আবাসিক ভবনের বালিশ প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়ার তিনি জড়িত। বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামিমের দখলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রায় সব কাজ কীভাবে থাকল, সে বিষয়টি তিনি তদারকি করেননি। অভিযোগ আছে—যেসব কর্মকর্তা সেখানে দুর্নীতিবাজ বলে পরিচিত তাদের অনেককে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৫৯ বছরের পর আরো দুই বছরের জন্য চুক্তিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন আসাদুল ইসলাম। এরকম সরকারের নানা দপ্তর-অধিদপ্তরে চুক্তিতে এখন কাজ করছেন ২০০ কর্মকর্তা। এর মধ্যে রেলওয়েতে অনিবার্য কারণেই বেশি সংখ্যায় রয়েছেন।
চুক্তির ধারাবাহিকতা বিএনপি-জামায়াত আমল থেকে শুরু হলেও এখন সেটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিএনপির সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিক ধাপে ধাপে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োজিত ছিলেন। এ ছাড়া আর কেউ এক বা দুই বছরের বেশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি। কিন্তু এখন গড়পড়তা চুক্তি হচ্ছে। আর সেটি দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত গড়াচ্ছে।
অপরদিকে এরকম বাস্তবতায় যারা সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে আছেন তারাসহ অধস্তন সব স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। একজনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলে নিচের পাঁচটি পদের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকে যায়।