২০ পুলিশ প্রত্যাহারের পর তদন্তকাজ শুরু
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান কক্সবাজারে এসে পৌঁছান। এরপর বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে এক সমন্বয় সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তকাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যেই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জসহ ২০ সদস্যকে প্রত্যাহার করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ লাইনে রাখা হয়েছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের আগে কিছু বলা সমীচীন নয়। সরকার এর সঠিক কারণ খুঁজে সামনে এনে দোষীকে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর। নিহত মেজর সিনহার পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এর আগে প্রত্যক্ষদর্শীরা কয়েকটি সরকারি সংস্থাকে জানায়, গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসেন সিনহা। প্রায় এক মাস তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শ্যুটিং করেন। ৩১ জুলাই বিকেলে সঙ্গী সিফাতকে নিয়ে সিনহা কক্সবাজার থেকে টেকনাফের শামলাপুর পাহাড়ে যান। এ সময় সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার পরনে ছিল কমব্যাট টি-শার্ট, কমব্যাট ট্রাউজার ও ডেজার্ট বুট। সন্ধ্যা ও রাত্রিকালীন শ্যুটিং শেষ করে তারা রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাহাড় থেকে নেমে আসার সময় স্থানীয় কয়েকজন লোক ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দেন এবং শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। পাহাড় থেকে নেমে সিনহা সিফাতকে নিয়ে নিজস্ব প্রাইভেট কারে ওঠেন। রাত ৯টার দিকে তারা পৌঁছান শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে। পুলিশের সংকেত পেয়ে সিনহা গাড়ি থামান এবং নিজের পরিচয় দিলে প্রথমে তাদের চলে যাওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। পরে পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাদের ফের থামান এবং তাদের দিকে পিস্তল তাক করে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। সিফাত হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পেছনের দিকে গিয়ে দাঁড়ান। সিনহা গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার পরপরই পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত তাকে তিনটি গুলি করেন। গুলি করার পরপরই রাত পৌনে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় জনগণ ও সার্জেন্ট আইয়ুব আলী। তখন গুলিবিদ্ধ সেনা কর্মকর্তাকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পান তারা। আইয়ুব আলী ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করতে চাইলে পুলিশ পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেওয়ার পর পুলিশ তার হাত থেকে মোবাইল ফোনসেট ও তার পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়। ওইদিন রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে আনা হয় একটি মিনিট্রাক। ট্রাকে ওঠানোর সময়ও সিনহা জীবিত ছিলেন এবং নড়াচড়া করছিলেন। এরপর সিনহাকে নিয়ে ট্রাকটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পৌঁছায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর। তখন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সিনহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাশেদ তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে গুলি করে। পুলিশ শুরুতেই তার বিরুদ্ধে মাদক রাখার অভিযোগ আনে। যদিও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা এমনকি ধূমপানও করতেন না।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পুনর্গঠিত তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এ কমিটিতে রামুর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের মনোনীত একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে রয়েছেন। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন। এছাড়া এর আগে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলীকে এ তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছিল। গত শনিবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে কক্সবাজার জেলার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছিল। পরে ওই কমিটি পুনর্গঠন করে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে নেতৃত্বে আনা হয়। এ কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস অনুসন্ধান করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেবে।
বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সব পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার : সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ নিহতের ঘটনায় বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জসহ সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় তাদের প্রত্যাহার করে কক্সবাজার পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার তদন্তের স্বার্থে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা পুলিশ সদস্যকে ইতিমধ্যে কক্সবাজার পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে নতুন করে আরও ২০ পুলিশ সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তদন্তের আগে কথা নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : গত রবিবার ধানম-িতে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহতের ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের আগে কিছু বলা সমীচীন নয়। তিনি বলেন, সাবেক সেনাসদস্য নিহতের ঘটনা দুর্ঘটনা হোক বা যাই বলেন ঘটনা তো একটা ঘটেছে। এটা অস্বীকারের কিছু নেই। সরকার এর সঠিক কারণ খুঁজে সামনে এনে দোষীকে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর। আপনারা সাংবাদিকরা যতদূর শুনেছেন তা আপনাদের মধ্যে থাক। আমি যা শুনেছি তা আমার মধ্যেই থাকুক। তদন্ত কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাবেক সেনাসদস্য নিহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত প্রকাশের পরই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো যাবে। এর আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করলে তা তদন্তের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি, এখনো তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। তবে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়টিও তদন্ত কমিটির ওপর নির্ভর। বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের পর যা বেরিয়ে আসবে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে কতখানি সঠিক বা ভুল তা তদন্তের পর জানা যাবে।
এদিকে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার মা নাসিমা আক্তার উত্তরায় নিজ বাসায় সাংবাদিকদের গতকাল বলেন, আমার ছেলে বাস্তবের একজন নায়ক ছিল। সে সাহসের সঙ্গে মৃত্যুকে বরণ করেছে। সে কোনো কাপুরুষ ছিল না। একজন জাতীয় বীর ছিল। সে ছিল একজন সত্যিকারের প্রেরণাদাতা। আমাদের সব আত্মীয়, সব বন্ধু তার কাছ থেকে জীবনের উৎসাহ পেত। সে সবসময়ই হাস্যোজ্জ্বল এক চমৎকার মানুষ ছিল, যে সবসময়ই মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং অন্যদের সুখী করতে চেষ্টা চালাত। অপরের সুখের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই ছিল তার অন্যতম ব্রত। সে ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশকে যে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসত। আমার ছেলে ছিল দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সে সমুদ্র ভালোবাসত। সমুদ্রসৈকতে বই পড়তে পড়তে সময় কাটাতে চাইত। শৈশব থেকেই আমার ছেলে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ছিল। সারাবিশ্ব ভ্রমণের এক প্রগাঢ় সাধ ছিল তার, যেজন্য সামরিক বাহিনী থেকে সে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছিল। আমি তাকে নিষেধ করিনি। তার হিমালয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল। ছেলেটা হাইকিং পছন্দ করত, জাপানে একটা সাইকেল ট্যুরে যেতে চেয়েছিল। চাকরি থেকে অবসরের পরপরই সে তার এ স্বপ্নগুলো ছোঁয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, এর মাঝে করোনা মহামারী চলে এলো। দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হওয়ার কদিন পর সে জানাল যে, তাকে নিয়মিতই বাইরে যাতায়াত করতে হয় এবং আমি একজন বয়স্ক মানুষ, তাই তার এই চলাফেরা আমার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এরপর সে বলল যে, রাজশাহী যাবে কিছুদিনের জন্য, সেখানে তার এক বন্ধুর মা (যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন) এক বিশাল লাইব্রেরি করেছেন। ছোট থেকেই সে প্রচুর বই পড়ত। তাই তাকে আমি যেখানে যেতে দিলাম। বললাম পড়াশোনা করতে। যখন সে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে ছিল, ছুটিতে বাংলাদেশে আসত না। তার বদলে দুই মাসের ছুটিতে ইউরোপ গিয়ে গাড়ি করে হাজার হাজার মাইল ড্রাইভ করে নিজে নিজে ঘুরেছিল। এটা আমার খুব ভালো লেগেছিল কারণ ছেলেটা অন্তত নিজের একটা স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছিল। আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল এই সিদ্ধান্তের প্রতি। তিনি বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রতি রাতে সে আমার মশারি টানিয়ে দিত। আমার সব ওষুধপত্র নিজে নিজেই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখত, যাতে আমার বুঝতে বিন্দুমাত্র সমস্যা না হয়। যখনই বাড়ির বাইরে যেত, সবসময়ই নিজের চাবি নিয়ে যেত, যাতে আমাকে বিরক্ত না করতে হয় দরজা খোলার জন্য। তারপর কক্সবাজারে এক মাসের জন্য থেকে একটা তথ্যচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা জানাল। আমি সম্মতি দিয়েছিলাম। সে বিয়ে করেনি আর আমিও তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইনি। ২৬ জুলাই ছিল ওর জন্মদিন। অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে সে যে রিসোর্টে ছিল সেখানে এক বাক্স চকলেট পাঠিয়ে ছিলাম। কোরবানির ঈদের সময় ছেলেটা আমাকে কক্সবাজারে গিয়ে ওর সঙ্গে ঈদ করতে বলছিল, কারণ তথ্যচিত্রের শ্যুটিংয়ে নাকি আরও কয়েক দিন সময়ের দরকার ছিল। অসুস্থতার কারণে আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আমার ছেলে একজন শহীদ। একজন বীরের রক্ত এবং মায়ের অশ্রু বৃথা যেতে পারে না। পরম করুণাময় তাকে জান্নাতে আশ্রয় দেবেন।
আমার ভাই জীবনে একটা সিগারেট পর্যন্ত খায়নি, সিনহার বোন : মেজর (অব.) সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের দিন বেলা ১১টার দিকে উত্তরা থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ আমাদের বাসায় আসেন। তারা এসে আমার ভাই সম্পর্কে নানান প্রশ্ন করেন। তারা ঘরে থাকা ছবিগুলোও দেখেন। তারা কনফার্ম হতে চেয়েছিলেন আমার ভাই আর্মিতে ছিল কি না। তারা ছবিও তুলে নিয়ে যান। পুলিশ সদস্যরা আমার ভাই সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করলেও একটি বারের জন্য বলেনি যে সে আর নেই। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু আমার ভাই তো জীবনে একটা সিগারেট পর্যন্ত খায়নি। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তো ভাইকে আর বাস্তবে পাব না। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যারা জড়িত, তাদের বিচার হোক।
কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে, তদন্ত কমিটির প্রধান : গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, আজ থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এজন্য কমিটির অন্যান্য সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দিনব্যাপী বৈঠক করেছি। বৈঠকে আমরা তদন্তের স্বার্থে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছি। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে যেখানে যেতে হবে যেখানে যাওয়া হবে। যার যার সঙ্গে কথা বলা দরকার তাদের সঙ্গে কথা বলব। পুরো তদন্ত কাজটি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কক্সবাজার হিল ঢাউন সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। কমিটিতে আছেন, ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী।
পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সিনহাকে বনানী কবরস্থানে দাফন : বনানীর সামরিক কবরস্থানে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। গত সোমবার তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মেজর (অব.) সিনহার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পুলিশের মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাতকে। সিফাতের অপরাধ, পরস্পর (সিনহা ও সিফাত) যোগসাজশে সরকারি কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র তাক করা ও মৃত্যু ঘটানো। এর বাইরেও সিনহা ও সাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও মামলা করেছে পুলিশ। উদ্ধার দেখানো হয় ৫০ পিস ইয়াবা ও ২৫০ গ্রাম গাঁজা।
জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে জানানো হয়েছিল এ কথা। এজাহারে আছে? তাহলে পড়ে বলতে হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিনহার সঙ্গে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হলেও তদন্তের পর যে দোষী হবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।