সিপিইসিকে টার্গেট করতে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলো ঐক্যবদ্ধ

0

পাকিস্তানের বালুচ ও সিন্ধি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলো ঘোষণা করেছে যে চীনা স্বার্থগুলোতে হামলা করতে তারা একটি জোট গঠন করেছে। পাকিস্তানে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের নিরাপত্তা ব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্যেই দৃশ্যত এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর কনসোর্টিয়াম বালুচ রাজি আজোই সানগার বা বিআরএএস গত ২৫ জুলাই এক মিডিয়া রিলিজের মাধ্যমে ঘোষণা করে যে তারা সিন্ধুপ্রদেশ রেভ্যুলশনারি আর্মির সাথে জোট গড়েছে। স্বল্প পরিচিত এই সংগঠনটি সিন্ধু প্রদেশে সক্রিয়। আর বালুচিস্তান হলো একটি প্রদেশ।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সিন্ধু ও বালুচিস্তান সমানভাবে চীনা সম্প্রসারণবাদ ও নির্যাতনের শিকার। চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে চীনের লক্ষ্য হলো সিন্ধু ও বালুচিস্তানকে অনুগত রাখা ও বাদিন থেকে গোয়াদার পর্যন্ত উপকূল ও সম্পদ দখল করা। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অন্তর্ভুক্ত সিপিইসির মধ্যে বেশ কিছু অবকাঠামোগত প্রকল্প রয়েছে। 

বালুচ বিদ্রোহীরা দাবি করছে যে জুনে করাচির পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে হামলাটি চালানো হয়েছিল সিন্ধি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তায়। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা স্থানীয় মিডিয়ায় বলে, বালুচ জঙ্গিদের সহায়তায় সিন্ধি বিদ্রোহীরা এখন আরো ভয়াবহ হামলা চালাতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করে, এই জোট সিপিইসির জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারলেও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের ওই ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পকে থামিয়ে দিতে পারবে না।

ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মালিক সিরাজ আকবর বলেন, বালুচ ও সিন্ধি সশস্ত্র গ্রুপগুলো চীন ও পাকিস্তানকে তাদের প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য করার মতো অবস্থায় নেই।

তবে বিশ্লেষকেরা বলেন, জোট গড়ার ফলে সিপিইসি কার্যক্রমে নিরাপত্তা ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের অধ্যাপক মোহন মালিক বলেন, কাশ্মির থেকে করাচি ও গোয়াদর পর্যন্ত বিস্তৃত সিপিইসি প্রকল্পগুলোর ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হামলা চালাতে পারে।

বিআরএএস ২০১৯ সালের মে মাসে গোয়াদারের একমাত্র ফাইভ স্টার হোটেল পার্ল কন্টিনেন্টালে হামলা চালায়। এতে চার হোটেলকর্মী নিহত হয়। হামলায় চীনা কোনো নাগরিক নিহত হয়নি। তবে সেখানে প্রায়ই চীনারা অবস্থান করে।

ISSUE-3-ENG-03-08-2020-Pak-2

অবশ্য আকবর মনে করেন, নতুন জোট গঠিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আবার নিরাপত্তা সদস্য যত বাড়ানো হবে, বিদ্রোহীরা স্থানীয় জনগণকে তত সহজে বোঝাতে পারবে যে প্রকল্পগুলো আসলে তাদের সম্পদ শোষণের জন্য তৈরী করা হচ্ছে।

চীনা প্রকল্পগুলোকে টার্গেট করতে বালুচ ও সিন্ধি বিদ্রোহীদের সহায়তা করার জন্য ভারতকে দায়ী করে আসছে পাকিস্তান। পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে হামলার জন্য গত মাসে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দায়ী করেন ভারতকে। ইমরানের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।

নতুন বিদ্রোহী জোট গঠনের সাথে বিশ্লেষকেরা ভারত-চীন সামরিক উত্তেজনার সম্পর্ক দেখতে পাচ্ছেন। মালিক বিশ্বাস করেন, নয়া দিল্লি-বেইজিং নিরাপত্তা উত্তেজনার পরিণতিতে উপমহাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা ও ছায়াযুদ্ধ অনিবার্য বিষয়। তিনি বলেন, ভারত ও চীন এখানকার দেশগুলোর আনুগত্য লাভ এবং অপরের প্রতি বৈরিতা প্রদর্শনের জন্য তীব্র ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠবে।

ওয়েস্টমিনিস্টার ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সোস্যাল সায়েন্সের প্রধান দিবেশ আনন্দ বলেন, চীনার অবস্থান সম্প্রসারিত হওয়ায় ও চীনা অর্থনৈতিক কার্যক্রম সরাসরি প্রভাব ফেলায় অনেক সময় বিরূপ স্থানীয় সম্প্রদায়ের পাল্টা আঘাত অনিবার্য।

তার মতে, পাকিস্তানকে এখন অপেক্ষা করতে হবে। সিপিইসি আসলেই অন্তর্ভুক্তিমুলক উন্নয়নের মেশিন, নাকি কোন প্রেস্টিজ প্রজেক্ট তা একটি বড় প্রশ্ন। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com