ধর্ষণের শিকার নারীদের ন্যায় বিচার দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ভারতের আইন ব্যবস্থা

0

জুনের শেষ দিকে ভারতের কর্নাটকের হাই কোর্ট ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে আগাম জামিন দেয়। রায়ের বক্তব্যে বিচারপতি কৃষ্ণ দিক্ষিত অভিযোগের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বলেন, কথিত ধর্ষণের শিকার ওই নারী ধর্ষণের পর ‘ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন’ বলে যে কথা বলা হয়েছে, সেটা ভারতীয় নারীদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক। এবং আমাদের নারীদের সাথে যখন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্ম করা হয়, তখন তারা এভাবে আচরণ করে না।

বিচারকের রায়ের ধরন নিয়ে মূলধারার মিডিয়া এবং সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিশেষ করে ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্ম করা’ অংশটির জন্য। এই ধরনের শব্দ রোমান্টিক উপন্যাসে ব্যবহার করা হয়, কথিত ধর্ষণের ক্ষেত্রে নয়।

রায়ের কয়েক সপ্তাহ পরে দুই শতাধিক আইনজীবী ও আইনের শিক্ষার্থী আদালতের কাছে চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানায়, যেখানে বিচারকের দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন’ হিসেবে মন্তব্য করা হয় এবং সমাজের নারীদের ব্যাপারে তার পর্যবেক্ষণ বিবেচনাহীন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

ওই প্রতিবাদের পর বিচারপতি দিক্ষিত তার রায় থেকে ওই বাক্যটি বাদ দেন, কিন্তু তার রায় একই থেকে যায়। ফলে মামলার অভিযোগকারী নারী – এবং তার মতো আরও হাজারো নারী যারা ভারতের আইনি ব্যবস্থার মধ্যে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে, যারা আইনি ব্যবস্থার লিঙ্গ বৈষম্য এবং আদর্শ ভারতীয় নারীর আচরণের ব্যাপারে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।

সামাজিক প্রেক্ষাপটে, ভারতে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে আসাটা নারীদের পক্ষে খুবই কঠিন। কারণ এ জন্য তাদেরকে আপত্তিকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং অনেক আপত্তিকর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়। ২০১২ সালে সুজাতা জর্ডানকে যখন গাড়িতে আটকে পাঁচজন ধর্ষণ করেছিল এবং এ জন্য তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তখন পুলিশ অফিসাররা তাকে যে সব প্রশ্ন করেছিল, তার মধ্যে একটি হলো ধর্ষণের সময় সে কোন ভঙ্গিতে ছিল। জর্ডান এর পর তার পরিচয় গোপন রাখার আবেদন করেন এবং প্রেস সাক্ষাতকারে তার সাথে যে সব আচরণ করা হয়েছে, তার সব কিছু প্রকাশ করে দেন।

একজন বিচারপতি হলেন নারীদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কারণ আদালতের সামনে যাওয়ার আগে নারীদেরকে বেশ কয়েক দফা তদন্তের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আসতে হয়। এ ধরনের রায় ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে জনগণের মতকে বদলে দেয় এবং ধর্ষিতাকে দোষারোপের সংস্কৃতি আরও জোরালো হয়। নারীদের যদি নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা রিপোর্ট করতে হয় এবং অপরাধের বিচার পেতে হয়, তাহলে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আদালতের ভাষা পরিবর্তন করতে হবে।

আইনি যুক্তিতর্কের জায়গায় নীতিবাক্য শোনানোর কোন স্থান নেই। কর্নাটকের নারীর অভিযোগ এটা ছিল না যে, তার অনিচ্ছায় তার সাথে যৌনকর্ম করা হয়েছে, বরং তাকে বর্বরভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর এ রকম ট্রমার ধাক্কা সামলাতে ঘুমিয়ে পড়ার অধিকারও তার আছে।


আইনি ব্যবস্থার দায়িত্ব হলো অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে সহায়তা ও ন্যায় বিচার দেয়া, তাদের আচরণের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা নয়। সমবেদনা যদি দেখানো সম্ভব না-ও হয়, সে ক্ষেত্রে অন্তত বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখাটা আদালতের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু তাও দিতে ব্যর্থ হয়েছে ভারতের আদালত।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com