রিজেন্ট-জিকেজির অনুমোদন পাওয়া, গণস্বাস্থ্যের কিটের না পাওয়া

0

করোনার জাল সার্টিফিকেট নিয়ে এখন আলোচনায় রয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জিকেজি। তাদের ভুয়া করোনার সার্টিফিকেটের কারণে দেশের বাইরেও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

একইভাবে এক সময় আলোচনায় ছিল করেরানা শনাক্তে গণস্বস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিট। দীর্ঘ সময়েও তাদের কিটের অনুমোদন মেলেনি। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলছেন, রিজেন্ট, জিকেজির মতো হাসপাতাল করোনার নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন পেলেও দীর্ঘ সময়েও গণস্বাস্থ্য তার কিটের অনুমোদন এখনো পায়নি। 

নানা আলোচনা-সমালোচনার পর গত ৩০ এপ্রিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিএসএমএমইউতে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে অনুমতি দেয়। এরপর ১৩ মে বিএসএমএমইউতে প্রথম দফায় কিট জমা দেয় গণস্বাস্থ্য। একইসঙ্গে পরীক্ষা খরচ বাবদ ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জমা দেয় তারা।

১৭ জুন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত ‘জিআর কভিড-১৯ ডট ব্লট কিট’ অ্যান্টিবডি চিনতে পারলেও সংক্রমণের প্রথমভাগে করোনাভাইরাস শনাক্তে কার্যকর নয় বলে প্রতিবেদন দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মূল্যায়ন কমিটি। 

এরপর ৫ জুলাই উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্তের কিটের ওপর আলোচনা করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার দপ্তরে ডেকে পাঠান গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীদের। সেখানে আকে দফা আলোচনায় কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলেও কবে তাদের কিট বাজারে আসবে তা অজানা। 

এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) যে পদ্ধতিতে আমাদের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করল, আর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুযায়ী যে মূল্যায়ন করল, দুটির মধ্যে কোনো মিল থাকল না। এ মিল না থাকার পরিণতিতে দেশের উদ্ভাবিত কিট এখন পর্যন্ত অনুমোদন পেল না। এখন আবারও আমাদের পরীক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবাসীরা পাঁচ, ১০ বা ২০ হাজার টাকায় করোনার জাল সার্টিফিকেট কিনে বিদেশে গেলেন এবং সেখানে গিয়ে তাদের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হলো। দেশে করোনার পরীক্ষা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে— আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে এমন সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে বেশি লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।’

করোনা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে কথিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেকেজি হেলথ কেয়ার লিমিটেড ও রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তাদের অনুমোদ দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাবি হাসপাতাল দুটি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং এটা তারা ধারণাও করতে পারেননি।

রিজেন্ট হাসপাতালকে অনুমোদন দেওয়া বিষয়ে তারা জানায়, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকে জানায় অধিদপ্তর নিজেরাই এসব হাসপাতালের অনুমোদন দিতে পারে। এ জন্য কারো অনুমতির প্রয়োজন হয় না। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছেন, তিনি অধিদপ্তরের আমন্ত্রণেই অনুমোদন স্বাক্ষরের দিন উপস্থিত ছিলেন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারকে (জেকেজি) অনুমোদন দেওয়া বিষয়ে বলে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপেরও স্বত্ত্বাধিকারী। ওভাল গ্রুপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ ২০১৮-এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে। চিকিৎসা পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনেরও একাধিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে। কোভিড সংকট শুরু হওয়ার পর উক্ত আরিফুল চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আসেন এবং জানান যে, তিনি জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক। জেকেজি গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায়। এসব বুথের মাধ্যমে পিসিআর পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিসিআর ল্যাবরেটরিগুলোকে সরবরাহ করা হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকারকে কোনো অর্থ দিতে হবে না। ধারণাটি ভালো এবং কোভিড পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন এই বিবেচনা থেকে ওভাল গ্রুপের সাথে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় জেকেজি গ্রুপকে অনুমতি দেয়া যায় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনে হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই ব্যাখ্যার পর কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে এর মহাপরিচালককে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, শুধু রিজেন্ট বা জেকেজি নয় আরও অনেক বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য বেরিয়ে আসছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, রিজেন্টের ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মন্ত্রণালয় থেকে নানা ধরনের নির্দেশনা আসছে। ফাইল তলব করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কোনো কাজই হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন চিঠি চালাচালি করছে। একজন আরেকজনের ওপর দায় চাপাচ্ছে। নিজেরা প্রতারক তৈরি করে এখন সেই প্রতারকদের পেছনে সময় ব্যয় করছে।

তিনি বলেন, ‘এখন সরকার বলছে, প্রবাসীরা দেশের বাইরে যাওয়ার সময় কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হবে এবং সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে এটি নিতে হবে। এতে সমস্যার সমাধান তো হবেই না, উল্টো আরও অনিয়ম-দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানি বাড়বে। ধরুন, একজন মানুষ যে আজ নমুনা পরীক্ষা করতে দিলেন, তিনি সরকারের প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার ফল পাবেন পাঁচ, সাত, ১০ বা ১৫ দিন পরে। এখন নমুনা দেওয়ার দিন হয়তো তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু, মাঝে যে এই ১০-১৫ দিন সময় অতিবাহিত হলো? এই ১০-১৫ দিনের মধ্যে যে কোনো দিনই তো তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

আর এর সমাধান হলো গণস্বাস্থ্যের কিট, এমনটা জানিয়ে তিনি এর দ্রুত অনুমোদন দিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আবার যদি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হয়, সেটাও দ্রুতগতিতে করে অনুমোদনের ব্যবস্থা করুন। তাহলে আমরা নিজেদের উদ্যোগে, নিজেদের খরচে, নিজেদের লোকবল দিয়ে বিমানবন্দরে বিদেশগামী যত যাত্রী আছে, তাদের সবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেবো। সরকার যদি আন্তরিক হয়, আমাদেরকে সহযোগিতা করে, তাহলে আমরা অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশ থেকে কাঁচামাল এনে কিট উৎপাদন করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারব। এখানে দরকার শুধু সরকারি পর্যায়ের বাধা দূর করে আমাদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com