এফ-৩৫ থেকে একটি সুবিধা বেশি আছে পাক-চীনের তৈরি জেএফ-১৭ জঙ্গিবিমানের

0

চায়নিস চেঙ্গদু অ্যারোস্পেস করপোরেশন ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত মিগ-২১ ফিশবেড়ের লাইসেন্সের আওতায় তার স্থানীয়ভাবে নির্মিত এফ-৭ জঙ্গিবিমানের বড় ধরনের আধুনিকায়নের কথা জানায়। নতুন এফ-৭-এ ইঞ্জিনকে নোস টিপ থেকে সরিয়ে ফিউজিলাজে নিয়ে যাওয়ায় নোসে আরো শক্তিশালী রাডার স্থাপনের জায়গা সৃষ্টি হয়।

এর ২১ বছর পর নতুন আধুনিকায়ন করার বিমানের নাম রাখা হয় জেএফ-১৭ থান্ডার। এটি এখন পাকিস্তান ও মিয়ানমারের বিমানবাহিনীর যুদ্ধমিশনে অংশ নিচ্ছে। নাইজেরিয়াও এই বিমানের অর্ডার দিয়েছে।

নতুন ডানা, আধুনিক ডিজাইন ও আরো শক্তিশালী ইঞ্জিনে নির্মিত জেএফ-১৭ এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট লাইন ফাইটার। 

মূলত জেএফ-১৭ হলো মিগ-২১-এর চূড়ান্ত রূপ। আমেরিকার স্টেলথ ফাইটার, ইউরোপিয়ান কনকর্ড, রাশিয়ার সু-২৭ যখন আকাশে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, তখন জেএফ-১৭ বড় ধরনের বিবর্তন ঘটিয়েছে।

সোভিয়েত মিগ করপোরেশন ১৯৫০-এর দশকের শুরুতে কাজ শুরু করে। ওই সময় বেশির ভাগ বিমান বাহিনী খুবই দ্রুতগামী জেট ফাইটার চাচ্ছিল। তাত্ত্বিকভাবে টপ স্পিড ছিল ম্যাচ ২। আর মিগ-২১ এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তাছাড়া এর সহজ, একক-ইঞ্জিন লেআউট, উচ্চতায় সক্ষমতা তাকে বেশ কাঙ্ক্ষিত বিমানে পরিণত করে।

তবে মিগ-২১-এর কিছু সমস্যাও ছিল। এটি নিয়ন্ত্রণ করা ছিল কঠিন কাজ। এর ক্যানোপি দৃষ্টি সক্ষমতায় সমস্যা সৃষ্টি করে। এক ঘণ্টার কমব্যাট ফ্লায়িংয়েই এর অনেক গ্যাসের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু তা সত্ত্বেও মিগ সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশগুলোর জন্য হাজার হাজার বিমান তৈরী করে। চীনসহ অনেক দেশ লাইসেন্স নিয়ে নিজস্ব মডেলের বিমান নির্মাণে অগ্রসর হয়। ৬০ বছর পরও শত শত মিগ-২১ আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সক্রিয় রয়েছে।

চীনের এফ-৭ হলো মিগ-২১-এর অনেক উন্নত সংস্করণ। এই অপেক্ষাকৃত উন্নত পাইলট ভিসিবিলিটি, স্থানীয়ভাবে নির্মিত ইঞ্জিন, পাশ্চাত্যের কিছু অ্যাভোনিক্সের মাধ্যমে এই বিমান অনেক কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে অনেক বড় ও আরো শক্তিশালী রাডারের কারণে এফ-৭-এ গতি ছিল কিছুটা কম। এ কারণে ১৯৮৯ সালে জিউজিলেজ সাইডে ইঞ্জিনটি সরিয়ে নেয়ার কথা চিন্তা করা হয়।

পাকিস্তান ১৯৮০-এর দশকে এফ-৭ কিনে। এসময় মার্কিন বিমান নির্মাতা গ্রুম্যানকে নিয়োগ করে চেঙ্গদুর সাথে এই বিমান উন্নত করার কাজে সামিল হতে। কিন্তু তিয়ানানমেন স্কয়ারে গণহত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ চীনের ওপর অবরোধ আরোপ করলে আমেরিকান-চায়না সহযোগিতার অবসান ঘটে।

পরমাণু পরীক্ষার কারণে পাকিস্তানও অবরোধের শিকার হয়। তবে এক দশক ধরে কাজ করার পর মিগ-২১ আরো আধুনিক রূপে জেএফ-১৭ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

চীন, পাকিস্তান ও রাশিয়ার প্রকৌশলীরা যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ বিমানের মতো আরো উন্নত ডানা যুক্ত করে। এর গতি বাড়ানোর পদক্ষেপও গ্রহণ করে।

জেএফ-১৭-এর জন্য রাশিয়া আধুনিক আরডি-৯৩ ইঞ্জিন প্রদান করে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নতুন জেটের নাকে চীনের কেএলআই-৭ রাডারের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। এর ফলে স্থল ও আকাশ থেকে বিমানটি তার টার্গেট শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

চীনে ২০০৬ সালে এর উৎপাদন শুরু হয়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মালিকানাধীন স্থাপনায় এর নির্মাণকাজ সরে আসে। আর বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বিমান বাহিনীই কোনো বিমান নির্মাণ করল। ইসলামাবাদ ২০১০ সালে প্রথম থান্ডার স্কয়াড্রন উদ্বোধন করে। ওই বছরই নতুন জেটগুলো তার বোমা হামলার মিশনে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সন্দেহজনক উগ্রবাদী অবস্থানে বোমা বর্ষণ করে। 

দক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে ইসলামাবাদ ১৬০টি জেএফ-১৭ বিমানের অর্ডার দেয়। এটিই আগামী ৩০ বছর পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধান ভরসায় পরিণত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১০০টি বিমান বাহিনীতে সক্রিয় রয়েছে।

প্রতিটি বিমানের মূল্য প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার। ফলে জেএফ-১৭ বিমান সম্ভবত বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে সস্তা বিমান। উল্লেখ আমেরিকার এফ-৩৫ স্টেলথ বিমানের প্রতিটির দাম প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার।

জেএফ-১৭ স্টেলথি না হলেও এটি একই ধরনের ক্ষিপ্র। তাছাড়া কাছাকাছি অবস্থানে থেকে আকাশযুদ্ধে জেএফ-১৭ এফ-৩৫ এবং অন্য যেকোনো বিমানের চেয়ে ভালো। 

তাছাড়া জেএফ-১৭ বেশ কিছু বিপজ্জনক অস্ত্রও বহন করতে পারে। 

জেএফ-১৭ মিগ-২১-এর নতুন রূপ হলেও এটি পুরোপুরি বদলে যাওয়া একটি যুদ্ধবিমান। সেইসাথে এটি সস্তাও। এমন কথা এফ-৩৫ ও অন্যান্য যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে বলা যায় না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com