বাড়ছে প্রাণহানি কমেছে টেস্ট
করোনায় মৃত্যুর মিছিল লম্বাই হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। অন্যদিকে পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্তও কম হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ, পরীক্ষার ফি বাস্তবায়ন এবং কিট সংকটের কারণে পরীক্ষা কম হতে পারে। ওদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে করোনা শনাক্তের ১২০ দিনের মাথায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৫২ জনে। এ পর্যন্ত মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুরুষদের মৃত্যুর হার ৭৯ দশমিক ১৪ শতাংশ (১৬২৪ জন) এবং নারীদের মৃত্যুর হার ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ (৪২৮ জন)। দেশে ৮ই মার্চ করোনার রোগী প্রথম শনাক্ত হয় আর প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ই মার্চ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২ হাজার ৭৩৮ শনাক্ত নিয়ে দেশে মোট করোনার রোগী শনাক্ত হলো ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। গতকাল করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিং থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৪টি, আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৮৮টি। এখন পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৩৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯০৪ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭২ হাজার ৬২৫ জন।
২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৪ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৬২৪ জন; যা শতকরা ৭৯ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং নারী ৪২৮ জন; যা শতকরা ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মারা যাওয়া ৫৫ জনের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।
মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ জন, বরিশাল বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী বিভাগে একজন, খুলনা বিভাগে ৬ জন, সিলেটে ২ জন, রংপুর বিভাগে ৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে একজন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৪১ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪ জন।
এখন পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে ১০২৮ জন (রাজধানীতে ৪৯৯ জন), ময়মনসিংহে ৫১ জন, চট্টগ্রামে ৫৫৭ জন, রাজশাহীতে ৯৯ জন, রংপুরে ৬৩, খুলনায় ৯০, বরিশালে ৭৮ এবং সিলেট বিভাগে ৮৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪৪৯ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ হাজার ৭১৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৪৮৩ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৫৭ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৩০ হাজার ৮৭২ জনকে।
গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৮৮৭ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩২ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৫৩৫ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ৩ লাখ ১২ হাজার ৫৩০ জন। মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৪ হাজার ৫০২ জন।
এদিকে গত তিন দিন ধরে দেশে ধারাবাহিকভাবে নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে। শনাক্তও মিলছে তুলনামূলক কম। ৪ঠা জুলাই পরীক্ষা হয় ১৪ হাজার ৭২৭টি, শনাক্ত হয় ৩ হাজার ২৮৮ জন। আর ৩রা জুলাই পরীক্ষা হয় ১৪ হাজার ৬৫০টি, শনাক্ত মিলে ৩ হাজার ১১৪ জন।
করোনার পরীক্ষা ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য, বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার ফি নির্ধারণের বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছে। টাকা নেয়ার কারণে কমতে পারে। আরো কয়েকদিন দেখতে হবে। যদি কমতে থাকে, তখন প্রমাণিত হবে টাকা নেয়ার কারণে হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন এ বিষয়ে বলেন, গত সপ্তাহের কিট সংকটের কারণে পরীক্ষা কম হতে পারে। ওই নমুনাগুলো এখন পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষার ফি’র কারণে কম পরীক্ষা হলে এজন্য আরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।