ঘোষিত বাজেট জীবন বাঁচানোর বাজেট নয়, জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে: আশঙ্কা বিএনপির এমপিদের

0

২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট গত ১১ জুন ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু মানুষকে বাঁচানোর জন্য এই বাজেট ঘোষণা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

গতকাল বৃহস্পতিবারে বিকালে চলমান করোনা সংক্রামণ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্যদের বাজেট পর্যালোনা নিয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ অভিযোগ করেন তারা।

বিএনপির সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের পরিচালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির সাংসদ ওকিল আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, জাহেদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।

ওকিল আবদুস সাত্তার বলেন, সরকার করোনা সংকটের সময় যে অবাস্তব কথা বলতেছে সেটা সত্যিই দু:খজনক। এই সংকটের মুহূর্ত্বে একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে। সব দল থেকে লোক নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি করা হোক। কিন্তু সরকার এগুলোর কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। এর কারণে তারা কেউতো আর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না। যা ক্ষতিগ্রস্থ হবার সেটা আমরা হচ্ছি, আর দেশের সাধারণ মানুষ হচ্ছে। তাদের কাছে আমার অনুরোধ যে বাজেট ঘোষণা করেছেন আপনারা সেটা বাস্তবায়ন করুন। যদিও আমাদের কাছে এই বাজেট অবাস্তব এবং অস্পূর্ণ বাজেট মনে হয়।

গোলাম মোহম্মদ সিরাজ বলেন, গত দশ বছরে আওয়ামী লীগের যে পরিবর্তন। যাদের জন্ম মাটি থেকে হয়েছে সেই দলেরই মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উচ্ছেদ হয়ে গেছে। সেই দল এখন মানুষকে বিশ্বাস করে না। সেই দল দেশের মাটিকে বিশ্বাস করে না। সেই দলের আজ অদ্ভুত আচরণ। শুধু মাত্র তারা এসব করতে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। এবার যে বাজেট ঘোষণা হওয়া উচিত ছিল সেটা হলো আপদকালীন এবং সংকট উত্তরণের বাজেট। কিন্তু সেটা আমরা দেখিনি। এটা একটা স্বাভাবিক বাজেট বলে আমার মনে হয়েছে।

হারুনুর রশিদ বলেন, এই করোনার সময় যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে সেটাকে কোন মিডিয়ায় আমি দেখি নাই যে স্বাগত জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের যারা বাজেট বিশেষজ্ঞ তারা কেউ এই বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে সেটাও আমি দেখিনি। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সকলেই বলেছে, এটা একটা অস্বাভাবিক এবং কল্পনাবিলাসী বাজেট। করোনাকালীন সংকট উত্তরনের জন্য আমাদের যে রোডম্যাপ দরকার ছিল এই বাজেটে কোন ধরণের নির্দেশনা নাই। আমি এই বাজেট আলোচনায় সুস্পষ্টভাবেই বলতে চাই, সরকারে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে, তার একটাই কারণ যাতে করে তারা যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারে। সরকারে এই ক্ষমতার লোভের কারণেই আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। অপরাধে অভ্যস্থ একটা জাতিতে আমরা পরিণত হয়ে গেছি। আজকে কারা সবচেয়ে ক্ষমতাশালী? যারা দেশের ব্যাংক লুটেরা, যারা বিদেশে টাকা পাচার করছে, যারা মানব পাচার করছে, যারা মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তারাই আজকে দেশে সব চাইতে প্রভাবশালী। এই সরকারের এসব কর্মকান্ডের কারণেই পুরো জাতি আজ একটা দুর্ভোগের মধ্যে পতিত হয়েছে। এই দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের জন্য এর আগেই বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বাজেট প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে এবং করোনা উত্তরণে একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোকে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যেভাবে উপহাস করে কথাবার্তা বলেছেন এসবের প্রতিক্রিয়া জানানোর কোন ভাষা জানা নাই। প্রধানমন্ত্রীর মতো শীর্ষ জায়গা থেকে যদি বলা হয় অদৃশ্য শক্তির কাছে কি হার মানা যায়? সারা পৃথিবী যেখানে আজ বিপর্যস্ত সেখানে যে করোনা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যকর কথা আসে সেগুলো আসলেই দু:খজনক।

তিনি বলেন, এখন সরকারকে অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি রোডম্যাপ দিতে হবে। বাজেটের যে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্র দেয়া হযেছে সেটির কোনকিছু করা কোনভাবেই সম্ভব না।

সাংসদ আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা যদি করোনার সময়টা ভালোভাবে অতিক্রান্ত করতে চাই এবং অভিষ্যতে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো রাখতে চাই এটার ড্রাইভিং পজিশনে বসে সরকারকেই অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করতে হবে। আর্থিক অনুদানের জন্য সরকার যে লোনটা দিয়েছে এটা নিয়ে সারাদেশে খুব বাজে কথা হচ্ছে। সবাই বলতেছে, এই টাকা কোথায়? কিভাবে দেয়া হচ্ছে। আমি বলি কি, এসব না বলে সবকিছুর জন্য একটা মনিটরিং সেল গঠন করেন। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। আমি যতুটুকু জানি আমাদের সরকারের কাছে ৩৫ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ টাকা রয়েছে। এখন আমি বলব, এই মুহূর্ত্বে ব্যাংক থেকে লোন না নিয়ে রিজার্ভ টাকা থেকে ৫ বা ১০ মিলিয়ন ডলার ব্যাংকে দিয়ে দেন। ব্যাংকের ইকুইপমেন্ট যদি ঠিক থাকে তাহলে আবার আমাদের অর্থনীতি গড়ে ওঠবে। এবারের যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা হওয়া উচিত ছিলো করোনা ভিত্তিক অথবা মানুষ বাঁচাও ভিত্তিক। আমাদের যে বাজেট ঘোষণা হয়েছে এটা দিয়ে আমরা কাঙ্খিত লক্ষে যেতে পারবো না।

মোশাররফ হোসেন বলেন, এবারে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, এটার আকার এতোটাই বড় যে এর বাস্তবায়ন কিভাবে হবে? এই টাকা কোথা থেকে আসবে? এই করোনাকালীন সময়ে এর খবর অর্থমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টারা মনে হয় জানেন না। উন্নত বিশ্বে আমরা যেটা দেখেছি মূল বাজেট পরিচালনা করার জন্য ছয় মাসের এটা প্রাক বাজেট করা হয়। আমিও মনে করেছিলাম এই করোনা মহামারি মোকাবিলার জন ছয় মাসের একটা বাজেট দেয়া হবে। কিন্তু করা হয়েছে এর উল্টোটা। এই বাজেট একটা উচ্চবিলাশী বাজেট। এতো বড় বাজেটের অর্থের উৎসটা কোথায় সেটা কিন্তু অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেননি তার বাজেট বক্তৃতায়। বাজেটের উদ্দেশ্য যদি জনগণের উন্নয়ন হয়ে থাকে তাহলে এই বাজেটে আরো অনেক কিছু যোগ করা প্রয়োজন ছিল।

জাহেদুর রহমান বলেন, করোনা শুরু থেকেই সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মূলত তাদের এই ব্যর্থতার কারণেই দেশের এই হাল হযেছে। সরকারে এমন পদক্ষেপের কারণেই দেশের মানুষের জীবন আজ হুমকির মুখে পরে গেছে। করোনার এই মাহামরিতে সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে আমি মনে এই বাজেট ঘোষণা জনগণের আশা আখাঙ্কা কোনটাই পূরণ করতে পারেনি। উন্নয়ন বাদ দিয়ে মানুষের জীবনকে রক্ষা করাই হচ্ছে এখন বড় কথা। সরকারে উচিত হবে এখন মানুষকে বাাঁচানো। এটাই হওয়া উচিত মানুষের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু মানুষ বাঁচানোর লক্ষে কোন বাজেট হয় নাই। যেকোন সরকার ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়তো হবেই। কিন্তু দেশের জনগণের প্রতি না তাকিয়ে, এই মুহূর্ত্বে জনগণের যা প্রয়োজন সেই দিকে না তাকিয়ে, আজকে যদি উন্নয়নের দিকে সরকার চলে যায় তাহলে সেটার মাশুল আমাদের দেশের জনগণকে চরমভাবে দিতে হবে।

রুমিন ফারহানা বলেন, সংসদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেশন হচ্ছে বাজেট সেশন। কিন্তু এই বাজেট সেশন শুরুর সময় সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে আমরা বলতে শুনেছি অদৃশ্য ভাইরাসের ভয়েতো আর সবকিছু বন্ধ করে রাখা যাবে না। অদৃশ্য ভাইরাসকে আপনি ভয় নাই পাবেন, কারণ আপনাকেতো আর চিকিৎসার জন্য একটার পর একটা হাসপাতালে দৌঁড়াতে হবে না। যখন আপনি জানবেন বিশ্বের সর্বোচ্চ হাসপাতালে আপনার চিকিৎসার জন্য চার্টার্ড প্লেন রেডি করা আছে তাহলেতো আপনি এই অদৃশ্য ভাইরাস নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেনই। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এই বাজেট সেশননি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই বাজেট অধিবেশন আমরা ভার্চুয়ালির করার আহবান জানিয়েছেলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার সে প্রস্তাব মিডিয়াতে আসছে, সব জায়গায় প্রচার হয়েছে তারপরেও সংসদ ভার্চুয়ালি করা হয়নি। কিন্তু এর ফল যেটা হলো সম্পূরক বাজেট ঘোষণার একদিন পরেই সংসদ মুলতবি হয়ে গেছে। শুধু মাত্র ২৩ জুন বাজেটের উপর আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বাজেটের মতো জরুরি সেশন কেবল একদিনে আলোচনা করে বাজেট পাশ হওয়ার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই। আমার বিশ্বাস করোনার মতো একটা সংকটের মধ্যে যে বাজেট দিয়েছে সমালোচনা হবে সেটা সরকার আগ থেকেই আচ করতে পেরেছিল। সরকার চাইলেই একমাসব্যাপি ভার্চুয়ালি এই অধিবেশন চালাতে পারতো। যাতে করে সংসদ সদস্যরা মন খুলে তাদের মতামত দিতে পারতো। মূলত সরকারের ভ‚লগুলো ঢাকা দেয়ার জন্যই একদিনের মধ্যে বাজেটের আয়োজন করেছে তারা।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি নাকি উন্নত দেশের মতোই শক্তিশালী। গত কয়েকমাস ধরেই এমন প্রোপাকান্ডা শুনে আসছি। বিশ্বে করোনা সংক্রমণের দুই মাস পড়ে আমাদের দেশে করোনা সংক্রামণ দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই সময় সরকারের লোকেরা বলেছে তারা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। তাই আমি মনে করি, কথা দিয়ে যদি করোনা মোকাবিলা করা যেতো তাহলে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় চ্যাম্পিয়ন হতো। আমাদের মতো দেশে যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা লুটপাটের মধ্যে রয়েছে সেখানে রোগের প্রতিরোধের চেয়ে রোগের প্রতিষেধক নেয়াটাই জরুরি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com