বিএনপির জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন সেলের সংবাদ সম্মেলন

0

তারিখঃ ২৫ জুন, ২০২০।

জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

আসসালামু আলাইকুম।

করোনার এই মহামারীর সময় আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং সরকারেরদায়িত্বহীন ও সমন্বয়হীন এবং অদূরদর্শী কর্মকান্ডের কিছু চিত্র তুলে ধরছি:

আপনারা জানেন, সারা বিশ^ আজ কোভিড নাইনটিন নামক অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এর আঘাতে স্থবির হয়ে আছে গোটা বিশে^র মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এই চরম দুর্যোগে বিপর্যস্ত দেশের সব শ্রেনী-পেশার মানুষ। প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। যদিও লাশের মিছিলে যুক্ত হওয়া একেকজন মানুষ সরকারের কাছে কেবলই একটি সংখ্যা মাত্র, কিন্তু স্বজনহারা পরিবারের কাছে তিনিই ছিলেন অমূল্য সম্পদ। এমন অবস্থায় আপনি, আমি কেউই নিরাপদ নই। শনাক্ত হওয়ার সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই যা প্রায় প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রতিটি পরিবারেই সংক্রমিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগে যতটা আক্রান্ত হওয়ার ভয়, তার চেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্থ এই ভেবে যে, ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়া যাবে কি-না?

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

সারাদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। সরকারি হিসেবেই ইতোমধ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত (২৩ জুন) মারা গেছেন ১৫৪৫ জন। গত ২ সপ্তাহ যাবত প্রতিদিনই গড়ে মারা যাচ্ছেন ৪১ জন মানুষ। অথচ ১ম দেড় মাসে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ১০ জনের নিচে। সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে লাশের সারি। একইভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছেন সাড়ে ৩ হাজারের মতো মানুষ। যদিও একদিনে পরীক্ষা করা হচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার নমুনা। যদি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তো তবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো আক্রান্তের সংখ্যা, সেটি সহজেই অনুমান করা যায়। ২৩ জুন পর্যন্ত ৪ মাস হতে চললেও ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে সারাদেশে মাত্র ৬ লাখ ৬৭ হাজার ১১ টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। আর এই নমুনায় শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ১৯৮ জন। শনাক্তের প্রথম দিকে মৃত্যুর হার অনেক কম থাকলেও এখন বাড়ছে লাগামহীনভাবে। শনাক্তের ৭৯ তম দিনে প্রথম ৫০০ জন মৃত্যু ছাড়ালেও পরবর্তী ১৬ দিনের ব্যবধানে ২য় বারের মতো ৫০০ ছাড়ায় আর সর্বশেষ মাত্র ১২ দিনে মৃত্যু ছাড়ায় ৫০০ জনে। পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী ২১৫ টি দেশের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে নমুনা পরীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম। বিভিন্ন দেশের গবেষণায় বলা হয়েছে,মূলত বয়স্ক ও অন্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরই মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে তুলনামূলক কম বয়সী মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন বেশি। ফেব্রæয়ারির শেষে চীন ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ ভাগের বয়স ছিলো ৬০ এর ওপরে। সেখানে বাংলাদেশে ৪ জুন পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬১ ভাগের বয়স ছিলো ৬০ এর নিচে। আর বাকি ৩৯ ভাগের বয়স ৬০ এর ওপরে।

প্রিয় কলম সৈনিক,

বিশে^র বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশি ভাইবোনেরা আক্রান্ত ও মারা গেলেও সঠিক তথ্য নেই সরকারের কাছে। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকায় অনেক প্রবাসীর মৃত্যু হলেও তাদের পাশে দাড়ায়নি সরকার। শুধু সৌদি আরবেই এ পর্যন্ত করোনা ও উপসর্গে মারা গেছেন ৪১৫ জন। এর মধ্যে সেবা দিতে গিয়ে জীবন হারিয়েছেন ৫ জন চিকিৎসক। করোনায় পর্যন্ত ফ্রন্টলাইনার্স (চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী) বৈশি^ক হারে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। কর্তব্যের আহŸানে এ পর্যন্ত চিকিৎসক জীবন দিয়েছেন ৫১ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯৩ জন, নার্স এবং টেকনোলজিস্ট ৪ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে মোট পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজারের অধিক। জীবন উৎসর্গ করেছেন ৩২ পুলিশ সদস্য। মাঠের যোদ্ধা সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৪ জন (২৩ জুন পর্যন্ত)। আর করোনায় প্রাণ দিয়েছেন ৭ অকুতোভয় সৈনিক। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন কমপক্ষে ৬ জন। এছাড়া দেশের খ্যাতনামা শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ গুনীজন হারানোর অপূরনীয় ক্ষতি কোনোদিন কাটাতে পারবে না দেশ। এখনও করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাজারো নাগরিক। জানি না কতোজন ফিরবেন আমাদের মাঝে? আবার করোনার প্রকৃত তথ্যও গুম করছে গুম-খুনের এই সরকার। জনমনে ধারণা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে যে মৃত ও আক্রান্তের সঠিক চিত্র লুকিয়ে রাখছে ক্ষমতাসীনরা। এই যেমন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে করোনা উপসর্গ নিয়ে। গত ১০ দিনের (বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত) হিসাব অনুযায়ী ২৩ জুন সারাদেশে ১৭ জন, ২২ জুন ১৯ জন, ২১ তারিখে ১৬, ২০ তারিখে ১৭, ১৯ জুন ৩৪, ১৮ জুন ১৮, ১৭ জুন ১৬, ১৬ জুন ২৪, ১৫ তারিখে ১৭ জন, ১৪ তারিখে ১৬ ও ১৩ তারিখে ৩০ জন মারা গেছেন জ¦র, কাশি ও শ^াসকষ্ট নিয়ে। যার বেশিরভাগই হিসাবে আসছে না। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সরকারি হিসেবে মারা গেছেন ৬৪ জন। কিন্তু উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৩৬০ জন। অর্থাৎ উপসর্গে মারা গেছেন ৫ গুন বেশি মানুষ। যার প্রমাণ এসেছে ২৩ তারিখের গণমাধ্যমগুলোতেই। গত ২ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হয়। তারপর ২২ জুন রাত পর্যন্ত অর্থ্যাৎ ৫১ দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের

করোনা ইউনিটি ৭৪৯ জন মারা গেছেন। প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। তারপর দুই মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট খোলা হয়নি। সে হিসেবে ঢাকায় উপসর্গ ও উপসর্গহীন মৃত্যুর বড় অংশ হিসাবের বাইরে থেকে গেছে। এর বাইরে অনেকে উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও মৃত্যুর পর তাদের করোনা পরীক্ষা করা হয়নি বলেও গণমাধ্যমে নানা খবর এসেছে। সে হিসেবে ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলসহ অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে তুলনা করলে ঢাকার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা উপসর্গ ও উপসর্গ ছাড়াই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের হার ২০ থেকে ২৩ শতাংশ। অর্থ্যাৎ প্রতি ১০০ জনে ২৩ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। ২২ জুন দেশের একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনেও এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইকোনোমস্টিও প্রতিবেদন করেছে এই সংখ্যা নিয়ে। তারা বলছে, শুধু ঢাকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে সাড়ে ৭ লাখ। যা সরকার ঘোষিত সারা দেশের আক্রান্তের সংখ্যার থেকেও ৭ গুণ।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

সরকার তাদের বিভিন্ন গোঁজামিলের তথ্য গোপন করতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। গত ৮ মার্চ রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের খবর দেওয়া হয়। এরপর কয়েকদিন সংবাদ সম্মেলন করা হলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে পরে তা সংবাদ বুলেটিনে রূপ নেয়। এখন শুধু করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুসহ কিছু তথ্য দেওয়া হয়, কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো সুযোগ নেই। এতেও স্পষ্ট, সরকার মনগড়া তথ্য প্রকাশ করেই শুধু পার পেতে চাচ্ছে। তাছাড়া পরীক্ষার ফল পেতে ৩ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলেও অনেক অভিযোগ আসছে। যেখানে একজন করোনা রোগী আক্রান্তের কয়েকদিন পর শ্বাসকষ্টে ভুগেন, সেখানে পরীক্ষার ফল পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার শামিল বলে আমরা মনে করি। এ মুহূর্তে দিনে পিসিআর মেশিনে শুধু ঢাকায় অন্তত ১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা উচিত। সাথে র‌্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ,জোনভিত্তিক লকডাউন করে যদি সেখানে উপসর্গ এবং উপসর্গহীনদের ব্যাপকভাবে নমুনা পরীক্ষা করা না হয়, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্যের আবিষ্কৃত কীটের কথা উল্লেখ করতে হয়। পিজি হাসপাতাল বলছে, এই কীটের এন্টিবডি পরীক্ষার সফলতা ৭০ শতাংশ। পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার সফলতাও ৭২ শতাংশের বেশি নয়। তাহলে কেন এই কীটের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এন্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে না। বরং এ নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে করোনা রোগীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, বিদেশ থেকে কীট আদমানির করতে চায় স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে স্বল্পমূল্যে কীট থাকা সত্তে¡ও কেন বাইর থেকে আনতে হবে। এর পেছনে কী কমিশন বাণিজ্য লুকিয়ে আছে?

সুপ্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

সরকার হিসাবের সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ঢাকা শহরের কিছু কবর স্থানে লাশ দাফনের চিত্র এই বছরের চিত্র ও বিগত বছরের চিত্র তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে ২০১৯ সালের মে মাসে ৭৭৭টি। আর এ বছর মে মাসে দাফন করা হয়েছে ১০৩৪টি। আর চলতি জুনের প্রথম ১৫ দিনে লাশ দাফন করা হয়েছে ৫১৫টি। এর অধিকাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীদের লাশ। আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফনের জায়গাও কমে যাচ্ছে। রাজধানীর পোস্তগোলা শশ্মানে ২০১৯ সালে ৭৬টি। চলতি বছরের জুন মাসের শুধু প্রথম ১৫ দিনে লাশ সৎকার করা হয়েছে ৮৫টি। জুরাইন কবরস্থানে চলতি বছরের মার্চে থেকে জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১২০২টি লাশ দাফন করা হয়েছে। অন্য দিকে ২০১৯ সালের ঐ সময়ে ৮৪৯ টি লাশ দাফন করা হয়েছিল। অর্থ্যাৎ করোনায় মৃত্যু অনেক বেড়েছে; তাই লাশ দাফন হয়েছে বেশি। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঢাকায় যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের অনেককে নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

সুপ্রিয় কলম যোদ্ধা,

২২ জুন এই অবৈধ সরকারের খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, করোনার বর্তমান সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে প্রতি মাসে আক্রান্ত হবে কমপক্ষে ১ লাখ মানুষ। চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলকে বিদায় জানানোর পর সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন। কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, করোনা প্রকোপ ৩ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। পরে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সমালোচনার মুখে তার এমন বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। জনগণ মনে করেন সরকারের চাপে তিনি বা তারা এভাবেই তথ্য লুকান বা গোপন করেন। এর আগে সরকারের মন্ত্রীরা উদ্ভট সব মন্তব্য করে করোনা নিয়ে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন তারা নাকি করোনার চেয়েও শক্তিশালী। প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সরকার থাকতে করোনা এদেশে কিছুই করতে পারবে না। অথচ সে নিজেই করোনার আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি। এছাড়া চীনের উহানে করোনা দেখা দেয়ার পর থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জনগনকে বারবার মিথ্যে আশ^াস দেয়া হয়েছিল যে

তারা করোনা মোকাবেলায় সর্বোতভাবে প্রস্তুুত। যা ছিল জনগণের সাথে প্রতারণা। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের এমন লেজেগোবরে অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এড়াতে একের পর এক বদলি নাটক সাজালেও বাস্তবে তা কোন কাজে আসছে না। মাস্ক, গেøাভস, পিপিই কেনায় পাহাড়সম দুর্নীতি হলেও নাটের গুরুরা ধরাছোয়াঁর বাইরে অথচ এসব নি¤œমানের সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে অগ্রভাগের সৈনিক চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবন চরম হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। মুগদা হাসপাতালে মাস্ক কেলেঙ্কারি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে দুইটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বাইরে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি অনুসন্ধান কমিটি করে। এর বাইরে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। অতীতে নানা দুর্নীতির ঘটনায় আমরা এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন করতেই দেখেছি, কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণ করার নজির নেই। সে বাস্তবতায় এই কমিটির ভবিষ্যত বুঝতে বাকি নেই আমাদের। আর ত্রাণ চুরির যে চিত্র দেশবাসী গণমাধ্যমে দেখেছে তাতে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায় যে কারো কিন্তুু আওয়ামী লীগারদের যেন কিছুতেই চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেছিলেন ”সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি”। সরকারপন্থী কতিপয় দলবাজ চিকিৎসকের দায়িত্বহীন বক্তব্য ও ভুলবার্তা বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণসহ অনেক বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভির টকশোতে আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসক বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আহমেদুর কবীর বলেছিলেন, তিনি শতভাগ নিশ্চিত বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আসবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোটাই বিপরিত।

করোনা ভাইরাসের থাবা বাংলাদেশে আঘাত হানার পর পুরো স্বাস্থ্যখাতের চরম অব্যবস্থাপনা প্রমাণ করে, শুধু রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আজ পর্যন্ত দেশের সকল জেলা শহরে টেষ্ট করার সুযোগ এখনও সৃষ্টি করা হয়নি এবং দৈনিক টেষ্টের সংখ্যা ২০ হাজার অতিক্রম করতে পারে নি। যে কারনে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ ভাবে কমিউনিটতে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর বিষয়টিকে প্রথম থেকে অবহেলা করেছে। যার কারণে হটস্পট রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের ৫টি জেলাতেই মোট রোগীর প্রায় ৮০%।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে করোনার পরীক্ষা কেন্দ্র নেই ৪৩টি জেলায়। এই হলো ধোঁকাবাজ আওয়ামী লীগের কথিত উন্নত দেশের চেহারা। প্রথমে সরকার বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষায় ৫০০টাকা নির্ধারণ করে দিলেও সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০০টাকা। তাহলে কোথায় যাবে দেশের সাধারণ মানুষ? ডঐঙ বারবার করোনা পরীক্ষার ওপর জোর দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন কই? মাত্র ৬৬টি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে, যার ৩৩টি ঢাকায় আর সারাদেশের জন্য রয়েছে মাত্র ৩৩টি ল্যাব। অন্য দিকে টেষ্ট কিটের অভাব এবং নমুনা সংগ্রহের হয়রানী পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই শুধু একদিনের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নামমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে অদক্ষ টেকনোলজিস্ট দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে যা মোটেই নিরাপদ নয়। শুধু বরিশালের ৬টি জেলার জন্য মাত্র ১টি পরীক্ষাকেন্দ্র, যেখানে দিনে সর্বোচ্চ ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। এই বিভাগের বরগুনা জেলা থেকে ঢাকার একটি বেসরকারি পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হলেও তিন বারে ১০০ এর বেশি নমুনা বাতিল হয়েছে নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। এছাড়া প্রায় প্রতিদিন ৫/৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ থাকছে নানা কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যথেষ্ট সময় হাতে পেলেও তা কাজে লাগায়নি সরকার। এটা স্পষ্ট হয় যে১৭ই মার্চ বিশেষ একটি উৎসব নিয়ে ব্যস্ত থাকায় করোনার মত ভয়াবহ মহামারীকে তেমন আমলে নেয়নি ক্ষমতাসীনরা। ৮ই মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের ঘোষনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরকারের অব্যবস্থাপনায় বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন রাখা নিয়ে গোলযোগ, গার্মেন্টস খোলা নিয়ে নাটক, করোনার সংক্রমণের উর্ধ্বমুখীর মধ্যে সাধারণ ছুটি বাতিল করা, হাসপাতাল নির্বাচন ও প্রস্তুতিতে কালক্ষেপন, জনবল নিয়োগে বিলম্ব, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয় ও বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে ঘাটতি, কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় সমন্বয়হীনতা। যার কারণে সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তার হয়েছে। সরকার লকডাউন না দিয়ে সাধারন ছুটি ঘোষনা করে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়। বাস্তবতা হলো ছুটি একজন নাগরিক তার মত করেই কাটাতে পারেন। অজানা কোন কারণে প্রথমে লকডাউন ঘোষনায় সরকারের আপত্তি ছিল জনগণ তা জানতে চায়। পরবর্তীতে রেড, ইয়োলে, গ্রীণ জোনে ভাগ করে মানুষকে শুধু এলাকায় আটকে রাখার ওপরে জোর দেয়া হয়। নমুনা সংগ্রহে বুথ স্থাপনসহ স্বাস্থ্যগত ও দৈনন্দিন কর্মকান্ড উপেক্ষিত থেকে যায়। যা বুমেরাং হয়ে যায়। বর্তমানে ঢাকার বাইরে ১৫ জেলায় ছোট ছোট ১০০ টিরও বেশি স্থানে রেড জোন ঘোষনা করলেও সেটি কার্যকর হচ্ছে না। উদাহরন হিসেবে বলতে পারি যশোর সদর, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গার বেশিরভাগ জায়গায়ই দোকানপাট খোলা, যানবাহন চলছে , চলছে আড্ডা। যেখানে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে করোনা রোগীদের ব্যাপারে সঠিক ডাটা-ই নেই, সেখানে কীভাবে ঢাকায় জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যকর করা সম্ভব? এটি একেবারেই অবাস্তব। যদি গোঁজামিল দিয়ে জোনভিত্তিক লকডাউন করা হয়, তাহলে তা বিজ্ঞানসম্মত হবে না। শুধু ধারণার ওপর ভিত্তি করে লকডাউন করলে তাতে কোনো সুফল-ই আসবে না। এ ধরনের ঢিলেঢালা লকডাউন শুধু কাগজে-কলমে থাকবে, কিন্তু কার্যকর কিছুই নয়।

রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মুগদা, যাত্রাবাড়ি, ধানমন্ডি, রাজারবাগ, বাবুবাজারসহ পুরনো ঢাকার প্রায় সব এলাকায় সংক্রমণ অনেক বেশি। কিন্তু সে হিসেবে ওই সব এলাকায় পর্যাপ্ত হাসপাতাল নেই। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পুরো রাজধানীতে ১৫টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট করা আছে। এসব হাসপাতালে চিকিৎসার মান এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবসহ নানা অভিযোগ তো আছে। এছাড়া শয্যাস্বল্পতা, আইসিইউ ও অক্সিজেন সরবরাহের তীব্র সংকট তো রয়েছে। অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ সংকট তীব্র। অধিকাংশ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা নেই।’ এর বাইরে নন কোভিড হাসপাতালে গিয়ে রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগও বিস্তর। সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাও এসেছে পত্রপত্রিকায়।

সাংবাদিকবৃন্দ,

গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘ কোভিড-১৯-এর সময় জীবিকা, ক্ষতি ও সহায়তা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি আয় কমেছে রেস্তোরাঁর কর্মীদের। তাদের রোজগার কমেছে ৯৯ শতাংশ। রোজগার কমার ক্ষেত্রে এর পরের অবস্থানে আছেন ভাঙারির কর্মীরা। তাদের রোজগার কমেছে ৮৮ শতাংশ। রিকশাচালকদের আয় কমেছে ৮৪ শতাংশ। দিনমজুরের আয় কমেছে ৮৩ শতাংশ। শিল্পীসমাজের আয়ও কমেছে ৮৩ শতাংশ। মালি ও কারখানার কর্মীদের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ। এছাড়া দক্ষ শ্রমিকদের ৭৯ শতাংশ, কৃষিশ্রমিকদের ৭৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ৭৩ শতাংশ, দোকান, সেলুন, পার্লারের রোজগার কমেছে ৭২ শতাংশ। পোশাককর্মীদের আয় কমেছে ৪৯ শতাংশ, কৃষকের ৪৪ শতাংশ, পিয়ন ও নিরাপত্তারক্ষীদের ৪৩ শতাংশ, অফিসের আনুষ্ঠানিক কর্মীদের কমেছে ৩৩ শতাংশ এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আয় কমেছে ২৭ শতাংশ।

অপর এক জরিপে দেখা যায়, কোভিড-১৯-এর কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বহুবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড় পারিবারিক উপার্জন কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। মহামারী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট ভয়াবহ দুর্যোগে ধনী-গরিব সবার আয় কমেছে; বিশেষ করে মধ্য ও নি¤œবিত্তের খাবারের সংস্থান-ই কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, এই শ্রেণীর হাজার হাজার মানুষ হয় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, নয়তো বেতন পাচ্ছেন না কিংবা যেখানে চাকুরি করছেন সেখানে বেতন কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। চাকুরিজীবীর বাইরে ছোট কিংবা মাঝারি গোছের ব্যবসায়ীদের সংসারে টানাটানি লেগেছে। যার কারণে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সঙ্গে জীবনযুদ্ধে টিকতে না পেরে শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটছেন অনেকে। এর সঙ্গে অনেক স্বপ্নও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

সারাদেশে করোনা চিকিৎসার করুন দশা ফুটে উঠেছে গণমাধ্যমে। খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রাজধানী ছাড়া করোনা আক্রান্ত কিডনী রোগীর ডায়ালাইসিসের কোন ব্যবস্থা নেই। ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় আইসিইউ বেড আছে মাত্র ৭টি। কতজন রোগী এই মুহুর্তে আইসিইউ সেবা নিচ্ছেন তার তথ্য জনসম্মুখে দিচ্ছেনা। অধিদপ্তর বলছে সারাদেশে করোনার জন্য নির্ধারিত ১১০টি হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ৩৩৯টি যদিও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগ বাদেই কমপক্ষে ৭২০টি আইসিইউ বেড থাকা জরুরী। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ৪৯ টি জেলায় করোনার জন্য আইসিইউ সাপোর্ট নেই। দেশে আইসিইউ নিয়ে চলছে নানা কেচ্ছা কাহিনী। অনেক ক্ষমতাবানরা বুকিং দিয়ে রেখেছেন। যদিও যাদের

প্রয়োজন তারা পাচ্ছেন না। দেশের আইসিইউ বেডের ৬০ ভাগ ঢাকার রোগীদের জন্য আর মাত্র ৪০ ভাগ সারাদেশের রোগীদের জন্য। চিকিৎসা সেবার নামে যে হরিলুট চলছে সেটি নিয়েও মাথাব্যথা নেই সরকারের। বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে একজন সাধারণ রিক্সাচালকও বুঝতে পারছেন দেশের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো কতটা ভঙ্গুর। জনসংখ্যার ঘনত্বে শহরাঞ্চলেও বিস্ফোরনের আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। চীনা বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো অবাক হয়েছেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন চীনা বিশেষজ্ঞ দল। নমুনা পরীক্ষা কম হওয়া এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লকডাউন হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তারা। নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে সফল দেশ চীনের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলের বক্তব্যে স্পষ্ট, বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে না। দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগে ‘প্রতিরোধ পরিকল্পনা’ যে নেওয়া হয়নি, তা এখন একেবারেই স্পষ্ট। খোদ আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩ টি হটলাইনে এ সংক্রমন সম্পর্কে জানতে, উপসর্গ এবং পরীক্ষা করাতে চেয়ে ফোন এসেছে ১ কোটি ২৭ লাখ। এ পরিসংখ্যানটিই বিশ্লেষণ করলেই ধারণা পাওয়া যায় প্রকৃত অর্থে দেশের কত মানুষ করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ বহন করছে। নিশ্চয় অপ্রয়োজনে কেউ ফোন করবেন না এমনটি বলাই যায়। সারাদেশে এই পর্যন্ত যে সকল বিএনপি নেতৃবৃন্দ করোনায় আক্রান্ত এবং আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন তাদের তালিকা উল্লেখ করতে চাই।

মোট আক্রান্তের সংখ্যা – মোট মৃতে্যুর সংখ্যা

১. রাজশাহী বিভাগ ০৫ জন

২. চট্টগ্রাম বিভাগ ৫০ জন – ১৪ জন

৩. কুমিল্লা বিভাগ ৫২ জন – ১৯ জন

৪. ঢাকা বিভাগ ১০১ জন – ৩৬ জন

৫. ময়মনসিংহ ১০ জন – ০১ জন

৬. খুলনা বিভাগ ৩০ জন

৭. সিলেট বিভাগ ২১ জন – ০২ জন

৮. ফরিদপুর বিভাগ ১৫ জন – ০১

জনমোট = আক্রান্ত ২৮৪ জন মৃত্যু – ৭৩ জন

এছাড়াও তালিকার বাইরেও বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।

সাংবাদিক বন্ধুরা,

ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা গরীবদের ত্রাণ না দিয়ে নানাভাবে লুটপাট করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গরীব ও অসহায় মানুষদের ত্রাণ বিতরণ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ত্রাণ বিতরণেও হামলা চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে আটক করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের মহাদুর্যোগকালীন সময়ে গত ২১ মে সাতক্ষীরা জেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার অসহায়, গরীব ও ছিন্নমুল মানুষদের মাঝে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যের পুত্র ও যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা দফায় দফায় বর্বরোচিত হামলা চালায়। ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একটি মাইক্রোবাসসহ কমপক্ষে ১৫-২০টি মোটর সাইকেল ভাংচুর এবং বেদম পিটিয়ে বহু নেতাকর্মীকে আহত করে।

এমনিভাবে ইতোপূর্বেও নারায়ণগঞ্জের মহিলা কাউন্সিলর ও মহিলা দল নেত্রী আয়শা আক্তার দীনা এবং ফেনীতে কৃষক দল নেতা আলমগীর চৌধুরী এবং ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন কমান্ডার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে গরিব ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। একই সঙ্গে ত্রাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। একইভাবে রাজশাহীর তানোর ছাত্রদল নেতা আবদুল মালেককে ত্রাণ বিতরণের সময় গ্রেফতার করে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও গতকাল জাতীয়তাবাদী যুবদল কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবকে সাদা পোশাকে পুলিশ বাহিনী আটক করে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেছে। এই মামলা, হামলা ও গ্রেফতার উপেক্ষা করে ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে বিএনপি’র উদ্যেগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সারাদেশে জেলায় জেলায় করোনা রোগীদের স্যাম্পল কালেকশন করে কোন পরীক্ষা ছাড়াই তা রেখে দেয়া হচ্ছে। এভাবে হাজার হাজার স্যাম্পলের স্তুপ জমা হয়ে গেছে। অধিকাংশ জেলায় করোনো টেষ্টের অভাবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে করোনা রোগীদের অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকদের বাসায় বাসায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।

শেষ করতে চাই এই বলে যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখনো চূড়ান্ত পিক সময় আসেনি বাংলাদেশের জন্য। যদি এমনটাই হয়ে থাকে তবে কি অপেক্ষা করছে এদেশের মানুষের জন্য, সেটি মারাত্মক ভয়ের কারণ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।

আল্লাহ হাফেজ,

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ

জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জিন্দাবাদ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com