এই সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নেই: ফখরুল

0

করোনা ভাইরাস সংক্রামণ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তে সরকার ‘মেগা প্রকল্প’কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ‘দেশের স্বাস্থ্যখাতে তাদের (সরকার) প্রায়োরিটিতে নেই। তারা এই জায়গাটাতে কোনো প্রাধান্য দেয় না। তাদের প্রধান্য একটাই যে, তারা মেগা প্রকল্প তৈরি করবে এবং মেগা প্রকল্পে মেগালুট করবে এবং দুর্নীতির‌ একটা মহোৎসব চলবে।’

সোমবার (২২ জুন) দুপুর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

ফখরুল বলেন, ‘ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত কিট এখনো সরকার অনুমোদন দেয়নি। সব কিছুর পেছনে তাদের (সরকার) যে উদ্দেশ্যটা কাজ করেছে বা করছে সেই উদ্দেশ্যটা হচ্ছে দুর্নীতি। তারা জনগণের সমস্যা সমাধান করার কোনো কাজ করতে চাননি কখনো এবং করবেনও না।’

‘একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে- এটা একটা একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার। একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার কখনোই জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে না। গণতান্ত্রিক একটি সরকার, গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা এটাই একমাত্র এই ধরনের যে বিশ্ব মহামারী সেই মহামারীকে মোকাবিলা করার উপযুক্ত হতে পারে।’

বিএনপি মহাসচিব সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আসুন এই দুঃসময়ে আমরা জনগণের পাশে দাঁড়াই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, জীবিকাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। একই সঙ্গে এই রাষ্ট্র যেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারে তার জন্য আমরা সবাই কাজ করি।’

বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবের উদ্যোগে চিকিৎসক ও চিকিৎসক পরিবারকে সহযোগিতার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা সার্ভিস, মুমুর্ষ রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবারহ, প্লাজমা ডোনার তালিকা প্রণয়ন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা কার্যক্রম উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিএনপি মহাসচিব ইন্টারনেটের মাধ্যমে বক্তব্যের পর ড্যাবের মগবাজার অফিসের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ অন্যান্য কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে, ভঙ্গুর। আমাদের চিকিৎসকদের চিকিৎসা করবার জন্য যে সুরক্ষা দেয়া, সেই সুরক্ষা দেয়ার সুযোগটুকু তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। এখনো যেটা করেছেন সেটা কতটুকু আমরা জানি না।’

‘আমরা কিন্তু এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছি, আমরা আমাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেছি। আমাদের পরিস্কার অর্থে বলেছি, এমনকি যারা চিকিৎসা করছেন করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের জন্য বড় বড় যে হোটেলগুলো রয়েছে, সেই হোটেলগুলোকে নিয়ে নেয়া হোক, তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হোক।’

করোনা ভাইরাস শনাক্ত পরীক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। আজকের পত্রিকায় দেখলাম যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ধরনের প্যান্ডেমিককে যদি মোকাবিলা করতে হয় সবার কাছে যে জিনিসটা দরকার সেটা হচ্ছে সঠিক তথ্য। তারা সঠিক তথ্যটাও দিচ্ছে না, সঠিক তথ্য দেশের মানুষ সঠিকভাবে পাচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘ আক্রান্তের ব্যাপারে দেখেছেন এই পরীক্ষা এতোটুকু পর্যাপ্ত নয়। এতো অপর্যাপ্ত যে সেটার সঠিক চিত্র তুলে ধরছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে যে শতকতরা ২৩ জন শনাক্ত হচ্ছে। অর্থাত ১০০ জনে ২৩ জন শনাক্ত হচ্ছে। পরীক্ষায় সরকারের কোনো সক্ষমতা নেই।’

‘যেহারে সংক্রামণ বেড়েছে এবং বাড়ছে প্রতিনিয়ত এটা সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতো যদি সরকার প্রথম থেকে আন্তরিক হতো এবং সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতো।’

দেশের অর্থনীতি ও জীবিকা সচল রাখতে বিএনপির দেয়া প্যাকেজ প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ আমরা স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি প্যাকেজ দিয়েছি প্রথম দিকে যাতে করে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় এবং একই সঙ্গে জীবনকেও রক্ষা করা যায়। দুর্ভাগ্য আমাদের সরকার সেই বিষয়গুলোতে কোনো মতেই তারা কোনো বলা যায় যেকোনো নজরই দেননি এবং তারা কোনো গোচরেও আনার চেষ্টা করেননি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কারণ আপনারা জানেন প্রথম দিকে তারা ত্রাণ শুরু করেছে, সেই ত্রাণে চুরি একটা মহোৎসব শুরু হয়েছে। কে কত চুরি করবে সেই কম্পিটিশন চলছিলো। এমন কি আপনার বিছানার তলে খাটের নিচে সোয়াবিন তেলের একেবারে আড়ত্ বসিয়ে দেয়া এই ধরনের ঘটনা আমরা পত্র-পত্রিকার মধ্যে দেখেছি।’

‘অপর দিকে আমরা দেখলাম কি আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণাল এবং অধিদফর তাদের…। আমি জানি না তাদের কতটুকু এর মধ্যে সম্পৃক্ততা আছে, আবার পাওয়াও গেছে। আমরা যখন দেখলাম যে, সেখানেও আপনার মাস্ক স্যানিটাইজার, পিপিই এসব সামগ্রি ক্রয় করার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি আমরা লক্ষ্য করেছি।’

সংসদে উপস্থাপিত ২০২০-২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ আপনারা দেখেছেন বাজেট দিয়েছে এই সময়ের মধ্যে। আমরা গোটা জাতি আশা করেছিলাম এবারকার বাজেটটা আপদকালীন বাজেট।মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালগুলোকে ইকুপ্ট করা হবে।’

‘অক্সিজেনের জন্য মানুষ পাগল হয়েছে আছে কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যাবে। সিলিন্ডার নেই, আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটার নেই। এসব প্রথম থেকে বলা হয়েছে যে, এসব জরুরীভিত্তিতে যোগাড় করা হোক, ব্যবস্থা করা হোক। তারা সেটার দিকে কেনো গরজ করেনি।’

করোনা ভাইরাস সংক্রামণ পরিস্থিতির মধ্যে জনগনের পাশে দাঁড়ানোর ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে আমরা প্রায় দুই কোটির উপরে মানুষের কাছে আমাদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে পেরেছি।’

‘আমরা জনগণের সঙ্গে আছি, জনগণের পাশে থাকবো। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ যে একটা অদৃশ্য যে শত্রু, সেই শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং যাবো।’

ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. আবদুস সেলিমের পরিচালনায় ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিলসহ চিকিৎসক নেতারা বক্তব্য রাখেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com