সীমিত আয়ের দরিদ্রদের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়েছে বাজেটে : জামায়াত

0

বাজেট জনবান্ধব নয় এবং এতে দেশের সীমিত আয়ের বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মনে করছে করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল সন্ধ্যায় বাজেট প্রতিক্রিয়ায় দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, বাজেট এবং এতে প্রবৃদ্ধির যে হার ধরা হয়েছে তা বাস্তবতাবিবর্জিত ও কল্পনানির্ভর। বিদায়ী বছরের মতো প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েও সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সব স্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে। বাজেটের প্রায় ৩ শতাংশের ১ শতাংশই ঋণনির্ভর। এই ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই সরকারের নাভিশ্বাস উঠে যাবে। সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা আরো বৃদ্ধি পাবে। ব্যাংকিং খাতকে আরো সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। আর্থিক শৃঙ্খলা আরো ভেঙে পড়বে।

মিয়া পরওয়ার বলেন, বিশ্বব্যাংক এবারের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১.৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে তা কমে ১ শতাংশে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী তা গোপন রেখে নতুন বছর প্রবৃদ্ধির ৮.২ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তা কাগুজে লক্ষ্যমাত্রায় পরিণত করেছেন ও জাতিকে মিথ্যা আশার বাণী শুনিয়েছেন। বাস্তবে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব। তিনি বলেন, গোটা জাতি যখন অপর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণ, দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত, তখন এ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ মোটেই যথেষ্ট নয়। চলমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেটের ১০ শতাংশ হওয়া দরকার।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, দারিদ্র্যদূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় গুরুত্ব দেয়া হলেও এ ক্ষেত্রে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়নি। বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সবার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার গতানুগতিক বক্তব্য ছাড়া নতুন কোনো ব্যবস্থার কথা বলা হয়নি। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষকদের উৎপাদনের উপকরণের মূল্য হ্রাসের কোনো কথা বলা হয়নি। বরং রাসায়নিক সারের গত বছরের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ কৃষি খাতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। এ খাতকে বাজেটে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, প্রবাসীদের মধ্যে যারা কর্মহারা হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করছেন তাদের পুনর্বাসনে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় সুপার সাইক্লোন আমফানের কথা বললেও আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২৬টি জেলার পুনর্বাসনে কোনো বরাদ্দের কথা বলেননি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও বাস্তবতার নিরিখে করমুক্ত আয়ের সীমা অন্তত চার লাখ টাকা হওয়া উচিত। মহিলাদের জন্য আয়মুক্ত করসীমা সাড়ে চার লাখ টাকা করা দরকার। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সরকার গত বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এ সময় রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছিল ৫০ শতাংশ। এবার যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেটি অর্জন অসম্ভব। স্বাভাবিক অবস্থায় রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৮-২০ শতাংশের ঘরে ছিল। করোনাকালে ৫০ শতাংশের কোঠায় রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। কাজ হারিয়েছে ৬২ শতাংশ মানুষ। অথচ অর্থমন্ত্রী ১৪ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছে বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য পেশ করেছেন। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর আয় ও কর্মসংস্থানের কোনো দিকনিদের্শনা বাজেটে নেই। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। মূলত দলীয় এবং দলীয় পছন্দের লোকদের কালো টাকার পাহাড়কে সাদা করার সুযোগ দেয়ার জন্য বাজেটে এ প্রস্তাব রাখা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা মনে করি যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে করফাঁকি দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা লক্ষ করছি জাকাতের টাকার ওপর কর আদায় করা হয়। আমরা জাকাতের টাকা করমুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করি। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, আবাসন ও স্বাস্থ্যবীমার বিষয়ে বাজেটে ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। তিনি বলেন, গত বছরের বাজেটও সরকার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েও সংশয় রয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com