শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা মানবতাবিরোধী: রিজভী
সরকারের প্রণোদনা নিয়েও পোশাক মালিকদের শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা ‘অমানবিক ও মানবতাবিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করে বলেন, পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ‘র সভাপতি জুন মাস থেকে শ্রমিক ছাটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রণোদনার পাঁচ হাজার কোটি টাকা নেয়ার পর এই ঘোষণা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শ্রমিকদের জীবন জীবিকাকে আমলে না নিয়ে ছাঁটাইয়ের কথা বলা চরম অমানবিক ও মানবতাবিরোধী। তাদের এই ঘোষণায় অন্যকোনো দুরভিসন্ধি থাকতে পারে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। রিজভী বলেন, আপতকালীন ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার বাইরে পোষাক কারখানার মালিকদের নগদ সহায়তা দেয় সরকার। এতো সুবিধা পাওয়ার পরও এই চরম দুঃসময়ে তারা হঠাৎ করেই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের এই ঘোষণা দিয়ে তারা অমানবিক কাজ করেছেন। পোশাক কারাখানায় শ্রমিক ছাটাই অব্যাহত আছে। লকডাউনে শুরুর পর থেকে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক ছাটাই করা হয়েছে। তাদের রুজি রোজগার বন্ধ হওয়ায় পরিবার নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছে। এই সময়ে শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা করে ছাটাই অন্যায্য।
‘করোনা মোকাবিলার প্রকল্পে দুর্ণীতি আখড়া’ রুহুল কবির রিজভী বলেন, মহাদুযোর্গপূর্ণ মুহুর্তেও সরকারের দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির চিন্তায় মগ্ন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরী সহায়তা’ প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ সেফটি গগলস (প্লাস্টিকের চশমা), একলাখ ৭ হাজার পিপিই, ৭৬ হাজার ৬‘শ জোড়া বুট জুতা কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার মূল্য ধরা হয়েছে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেকগুন বেশি। পত্র-পত্রিকার সংবাদ এসেছে যে, ৫‘শ থেকে ১০০০ হাজার টাকা মূল্যের প্রতিটি গগলসের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকায়। প্রতিটি পিপিই‘র বাজারমূল্য হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা যা প্রকল্পে ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭শ টাকা, বুট জুতার দাম ৩‘শ থেকে ৫‘শ টাকা যা প্রকল্পে ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫‘শ টাকা। মহামারীর এই দুর্দিনেও সাগরচুরির মহাউল্লাহে মেতে উঠেছে তারা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে করোনা মোকাবিলার প্রকল্পে স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদির কেনা চেয়ে সফটওয়্যার, ও্য়েবসাইট উন্নয়ন, ডাটাবেজ তৈরি, সেমিনার অনুষ্ঠান, যানবাহনসহ পরামর্শখাতে ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘ভেন্টিলেটর আমদানির কার্যাদেশে বিলম্ব’ রিজভী বলেন, সরকার ভেন্টিলেটর আমদানির পরিকল্পনা নিলেও এখনো কেনার কার্যাদেশ দেয়নি। আমদানির আগেই সেখানে দুর্ণীতির কালো থাবা বিস্তার করেছে। খবরে বলা হচ্ছে, দুর্নীতির কারণে এই কার্যাদেশ দিতে দেরি হচ্ছে। অপ্রিয় হলেও সত্য এই সরকারের জন্মই যেহেতু নিশিরাতে জনগনের ভোট চুরির মাধ্যমে ফলে সবাই মনে করে দুর্নীতি, চুরি-জোচ্চুরি এই সরকারের মূলভিত্তি। ভেন্টিলেটর, আইসিইউ, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালের বেড আর করোনা আক্রান্ত মানুষের চিকিতসা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এই সরকার। উন্নয়নের ফাঁপা গল্পের মাঝে যে একটা বাতাসযুক্ত বেলুন ছিলো করোনার সামান্য ধাক্কায় সেটা ফুটো হয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, দেশের গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, করোনা মৃত্যুর চেয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুন। মৃত্যুর পর কারো পরীক্ষা করার সুযোগ পাওয়া গেলে জানা যাচ্ছে, ‘করোনা পজেটিভ’। তবে এ্সব খবরে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই। একটি দল একটানা এক দশকের বেশি ক্ষমতায় থাকার পরও মানুষ যখন বিনা চিকিতসায় মারা যায়, এমনকি একবারে ৫/৬ হাসপাতাল ঘুরেও চিকিতসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না।
‘তারেক ও তার পরিবার নিয়ে অপপ্রচার’ রিজভী বলেন, সম্প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার পরিবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এই সম্পর্কে মনগড়া অসত্য তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। এতদ্বারা জানানো যাচ্ছে যে, এই পরিবেশিত তথ্যগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিমূলক। কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠি হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে এই মনগড়া মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, পরমকরুনাময় আল্লাহতালার অশেষ রহমতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সুস্থ ও সুরক্ষিত আছেন। এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।