‘হোয়াইট হাউজের সন্ত্রাসীদের নেতাকে ভালোভাবেই চেনেন ইরানিরা’
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে সংলাপ ও নতুন চুক্তি সইয়ের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব বেশ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে তেহরান।
ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবের জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন: ইরান ও পরমাণু সমঝোতার অপর শরিকরা কখনোই আলোচনার টেবিল ছাড়েননি। বরং আপনার উপদেষ্টারা-যাদের বেশিরভাগই বহিষ্কৃত হয়েছেন-তারা বোকামিপূর্ণ জুয়া খেলেছেন। এটা এখন আপনার ওপরই নির্ভর করছে যে কখন আপনি ভুল সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর টুইট বার্তায় ইরানের কারাগারে বন্দি মার্কিন এক নাগরিককে মুক্তি দেয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন: বড় ধরনের সমঝোতার জন্য আমেরিকার নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।
ট্রাম্প দাবি করেন যে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আবারও জয়ী হবেন, আর তাই নির্বাচনের অপেক্ষায় বসে না থেকে ইরান এখনই আলোচনায় বসলে আরও ভালো চুক্তি করা সম্ভব হবে। এ কথা বলে ট্রাম্প এ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইরান আসন্ন এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর বিজয়ের আশা করছে এবং পরবর্তী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভালো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে চায়।
কিন্তু ইরান বেশ জোরালোভাবে পরমাণু বিষয়ে কোনো নতুন আলোচনা বা সমঝোতার প্রস্তাব ও সম্ভাবনা নাকচ করে আসছে। ইরানের সংসদের নয়া স্পিকার বাকের কলিবফ আমেরিকার ধ্বংসাত্মক নানা পদক্ষেপের মোকাবেলায় দৃঢ়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সুরা মুহাম্মাদের ৩৫ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন যেখানে মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা কখনও দুর্বল বা হতাশ হয়ো না এবং শত্রুদের কাছে অমর্যাদাপূর্ণ সন্ধি বা শান্তির প্রস্তাব দিও না যখন তোমরাই শ্রেয় বা উন্নত অবস্থায় রয়েছে। আর আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে রয়েছেন এবং তিনি তোমাদের কাজের প্রতিদান বা পুরস্কার কম করেন না।
ইরানের নীতি নির্ধারণী পরিষদের সচিব মোহসেন রেজায়িও বলেছেন, আমেরিকা নিজের তৈরি চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। এরপরও দেশটির সঙ্গে আলোচনার অর্থ হলো বিষপান করা।
ইরানের সংসদ স্পিকারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, সভ্য জাতি হিসেবে ইরানিরা হোয়াইট হাউজের সন্ত্রাসীদের নেতাকে ভালোভাবেই চেনেন যে সন্ত্রাসীরা সুন্দর পোশাকে সজ্জিত। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প এক হাতে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেজর জেনারেল কাসেম সুলায়মানিকে হত্যার নির্দেশ দিতে ও অন্য হাতে ইরানের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দিতে পারেন না।
মার্কিন সরকার সব সময়ই দাম্ভিকতা নিয়ে সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে থাকে। ট্রাম্প যখন করোনা মোকাবেলায় অদক্ষতা ও বর্ণবাদ বিরোধী গণ-বিক্ষোভের কারণে খুবই বেকায়দায় তখনও ইরানকে চাপে ফেলে সংলাপে বসতে বাধ্য করার ও নতজানু করার দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্প মার্কিন জনগণকে দেখাতে চান যে তিনি শান্তিকামী ও পররাষ্ট্র বিষয়ে সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করছেন।
ইরান যখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, চাপ ও সামরিক হুমকিকে মোকাবেলা করতে সক্ষম তখন আলোচনার হুমকি বা প্রলোভনে ইরানের ইসলামী নেতৃবৃন্দ ভুল করবেন না-এটাই স্বাভাবিক। মার্কিন সরকারের সঙ্গে একবার আলোচনায় বসে ইরান যে ধোঁকা খেয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইরানি নেতৃবৃন্দের সবাইই এখন একসুরে বলছেন যে মার্কিন সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসবে না ইরান, সে আলোচনা দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক – যাই হোক না কেন।
বারাক ওবামার নেতৃত্বে মার্কিন সরকার ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করলেও ২০১৮ সালের মে মাসে ট্রাম্প ওই চুক্তি বাতিল ঘোষণা করেন। কিন্তু এরপর নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে ইরানকে বহুবার সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে আসলেও ইরান তা নাকচ করে আসছে।