ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করবেন না

0

আফগানিস্তান থেকে এই বছর মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কথা ভাবছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে অনেক মার্কিনিই মনে করেন, আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত তাদের এমন এক শত্রুর সামনে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করছে যাদের তারা অনেক আগেই পরাজিত করেছে। সেই দিক থেকে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তকে ভুল বলেই ভাবছেন তারা।

অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল ও সাবেক সিনেট জো লিবারম্যান ও সাবেক উপ-সেনা প্রধান জ্যাক কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ওয়াশিংটন পোস্টে।

দীর্ঘদিন ধরেই আফগানিস্তানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক মার্কিন সৈন্য। তারা আজও আফগানিস্তানে এমন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে যারা এখনো নিজ বাড়িতে থাকা মার্কিনিদের হত্যার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি হয়তো আফগানিস্তানকে নতুন করে দেশ গঠন কিংবা আবার উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করছে না, কিন্তু সেখান থেকে তাদের প্রত্যাহার আফগানদের পাশাপাশি মার্কিনিদেরও চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিমান হামলার পরপরই আফগানিস্তানে প্রবেশ করে মার্কিন সৈন্য। লক্ষ্য ছিল, হামলার জন্য সেখানকার যে ঘাঁটি ব্যবহার হয়েছিল, সেটিসহ আল-কায়দাকে সমূলে ধ্বংস করা। মাত্র এক বছরের মধ্যেই মার্কিন সেনাবাহিনী তাদের লক্ষ্য পূরণ করে। আর তখন থেকেই আল-কায়দা কিংবা এখনকার ইসলামিক এস্টেটকে আবারো সংগঠিত না হতে দিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর ফিরে আসার লড়াইয়ের শুরু।

সবকিছু ঠিক রেখে আফগানিস্তান ত্যাগের সেই লড়াই এক নতুন মোড় পায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি নেয়া এক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। এই বছরই আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত সৈন্য সংখ্যা মাত্র ১০ হাজারেরও নিচে নামানোর সিদ্ধান্ত আসে হোয়াইট হাউজ থেকে। এই সংখ্যা নিঃসন্দেহে সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধরত মার্কিন সৈন্যদের সংখ্যার দশ ভাগের এক ভাগ।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মার্কিন সৈন্যরা সেখানে রাষ্ট্র গঠনের কাজ করছে না। আবার তারা সেখানে নিয়মিত মিশন কিংবা যুদ্ধেও জড়াচ্ছে না। এমনকি তারা সেখানকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা কিংবা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে তালেবানদের বিপক্ষে যুদ্ধে সহায়তাও করছে না। বরং তারা সেখানে আছে শুধু আল-কায়দা এবং ইসলামিক এস্টেটকে প্রতিহত করতে। আফগানিস্তান কোনো ঘোষিত যুদ্ধক্ষেত্র নয়, যেখান থেকে যুদ্ধ শেষে সৈন্য প্রত্যাহার করাই আমেরিকার মূল লক্ষ্য, বরং মার্কিন সেনাদের সেখানে থাকাটা জঙ্গিদের প্রতিহত করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে পরিণত হয়েছে।

গত বছরের পেনসাকোলা সামরিক ঘাঁটিতে হামলাটি ছিল আল-কায়দার পরিকল্পিত একটি হামলা। ইয়েমেন বসে তারা এই হামলার পরিকল্পনা করলেও এতে আশানুরূপ সাফল্য আসেনি তাদের। এর পেছনের কারণ ইয়েমেনে মার্কিন বাহিনীর তৎপরতা, আল-কায়দা নেতাদের হত্যা এবং তাদের আশ্রয়স্থল নষ্ট করে দেয়া। তবে এই হামলা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, যদি জঙ্গিরা আফগানিস্তানের মতো ইয়েমেনেও তাদের নিরাপদ ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারে, তাহলে তারা অবশ্যই মার্কিনিদের উপর একের পর এক হামলার পরিকল্পনা করবে।

যদিও ট্রাম্প কথা দিয়েছেন, যদি মার্কিনিদের উপর হামলা হয়, তাহলে সৈন্য প্রত্যাহারের পরও আফগানিস্তানে থাকা জঙ্গিদের উপর মার্কিন হামলা হবে। তিনি হয়তো ইয়েমেনের কথা ভেবে এই বক্তব্য দিয়েছেন। তবে আফগানিস্তান আর ইয়েমেন কিন্তু এক নয়। উপসাগরীয় দেশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো সময় ইয়েমেন, সোমালিয়া, সিরিয়া এবং লিবিয়ার উপর হামলা করতে সক্ষম, সেখানে সেনা মোতায়েন থাকুক বা না থাকুক। তবে আফগানিস্তানের বিষয়টি এখানে ভিন্ন। দেশটি সমুদ্রতট থেকে প্রায় ৭০০ মাইল ভেতরে এবং অসংখ্য সুউচ্চ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। ফলে এই ভূখণ্ডের না থেকে এখানে হামলা চালানো একরকম অসম্ভব। আর এই মুহূর্তে সেখান থেকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও সৈন্য প্রত্যাহার করা মানেই এতোদিন ধরে অর্জিত সব সাফল্যকেই হাতছাড়া করা।

আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত সেনা সদস্যদের সেখানে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। নিয়মিত সামরিক বাজেটের একটি ছোট্ট অংশই যথেষ্ট। আর পুরো বাজেটের কাছে এতো কিছুই না। কিন্তু তাদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করা মানেই প্রতিটি মার্কিন নাগরিকের উপর একটা হুমকি চলে আসা। এমনকি সেখানে মোতায়েনকৃত সেনাদের নিহত হওয়ার ঘটনাও যদি আসে, তাহলে বলাই যায়, আফগানিস্তানে নিহত মার্কিন সেনা সদস্যদের সংখ্যা এতোদিন ধরে একেবারেই নগণ্য ছিল, এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের জীবন রক্ষার্থে এই ত্যাগ করতে মার্কিন সেনারা সর্বদাই প্রস্তুত ছিল এবং থাকবে।

তাই রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দয়া করে মার্কিন বাহিনীর উপর জোর করে এই অপ্রয়োজনীয় পরাজয় চাপিয়ে দেবেন না। আমাদের শত্রুদের সামনে থেকে এভাবে পিছু হটা আমাদের জন্য চরম অবমাননাকর। আপনি হয়তো ঠিকই বলেছেন, কেবল জাতি গঠনে আফগানদের সহায়তা করার জন্য আমরা চিরকাল আফগানিস্তানে থাকতে পারি না এবং থাকা উচিতও নয়। কিন্তু সে কারণে আমরা সেখানে যাই নি, আর এই কারণে আজও আমরা সেখানে অবস্থান করছি, তা নয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com