শ্রমিক কল্যাণের ‘চাঁদার’ কোটি টাকার হদিস নেই

0

রাজশাহীতে ট্রাক শ্রমিকদের কল্যাণে রাস্তা থেকে তোলা টাকার হদিস মিলছে না। সেই টাকার হিসেব নিতে শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর ট্রাক শ্রমিকরা জড়ো হয়। এনিয়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এর ভেতরে পড়ে এক ট্রাকচালক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার নাম সোহরাব আলী (৩৫)। তিনি একজন ট্রাকচালক ছিলেন। তার বাড়ি নগরীর খোজাপুর এলাকায়।

শুক্রবার (১৫ মে) দুপুর আড়ায়টার দিকে নগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। শ্রমিক সোহরাবের মৃত্যুর খবরে বিক্ষোভ করে অন্য শ্রমিকরা। এসময় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই শ্রমিকের মরদেহ ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে আনা হলে আরেক দফা বিক্ষোভ করে শ্রমিরকা। এসময় নিজেদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। পরে পুলিশের পাহারায় নিহত শ্রমিক সোহরাবের মরদেহ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ট্রাক শ্রমিকরা জানায়, সকাল থেকে শ্রমিকরা ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। টাকার হিসাবের দাবিতে অবরুদ্ধ করে রাখেন জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে। তখন মনির হোসেন নামে এক ট্রাকচালক বলেন, শ্রমিকদের উন্নয়নের নামে সড়কে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। কিন্তু এখন সেই টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি জানান, তাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬০০ জন। সম্প্রতি তাদের ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী কিছু শ্রমিককে ডেকে ৮ কেজি করে চাল ও ২ কেজি করে আলু দিচ্ছিলেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ বেকায়দায় পড়ে নিয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগই সেই চাল-আলু প্রত্যাখান করে তাদের টাকার হিসাব চেয়েছেন।

সেদিন ১১ মে হিসাব দেয়া হবে বলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জানান। কথামতো তারা সেদিন ইউনিয়ন কার্যালয়ে যান। কিন্তু হিসাব না দিয়ে আবারও ১৫ মে দিন দেয়া হয়। কথামতো তারা এ দিনও এসেছেন। কিন্তু তাদের জানানো হয়েছে হিসাব প্রস্তুত করা হয়নি। তাই তারা অবস্থান নিয়েছেন।

সাজ্জাদ আলী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ তিন বছর। গত ১৭ এপ্রিল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই কমিটির কাছে হিসাব প্রস্তুত থাকার কথা। কিন্তু টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে হিসাব প্রস্তুত নেই বলে মনে করেন তিনি।

সাজ্জাদ ধারণা করেন, তিন বছরে এই কমিটির কাছে অন্তত ১৫ কোটি টাকা গেছে শ্রমিকদের উন্নয়নের নামে। কিন্তু এখন তাদের দিন চলছে না। তারা টাকার হিসাব চাওয়ায় বর্তমান কমিটির কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

সাজ্জাদ বলেন, হাতাহাতির মধ্যে পড়েছিলেন ট্রাকচালক সোহরাব আলী। তিনি রোজাও রেখেছিলেন। এ রকম পরিস্থিতিতে তার রক্তচাপ বেড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাথায় পানি দেয়া হয়। এরপর তাকে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মন বলেন, টাকার হিসাব চাইতে এসে এক শ্রমিক মারা গেছেন। তার মরদেহ ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে আছে। শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে তহবিলে জমানো টাকা থেকে সহায়তা দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন রাজশাহীর ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলীও তাদের পক্ষ নিয়েছেন। বলেছেন, শ্রমিকদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়ে করোনাকালে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন ইউনিয়নের সভাপতি।

এর আগে শুক্রবার সকাল থেকে শ্রমিকরা আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইতে নগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এর ভেতরে পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোহরাব আলী নামের এক ট্রাকচালক মারা যান। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে সাধারণ সম্পাদক ঘোড়ামারা কার্যালয় থেকে ইউনিয়নের নিজস্ব ভবনে গিয়ে বসেন। সেখানেই টাকা দিতে চাওয়ায় তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

শনিবার (১৬ মে) দুপুরে আক্কাস আলী জানিয়েছেন, শ্রমিকরা এই দুঃসময়ে এসে টাকা চাইছেন। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। আমি এই মতই দিয়েছি। আগামী রোববারের মধ্যে সব হিসাব-নিকাশ করে যেন শ্রমিকদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয় সেই প্রস্তাবও দিয়েছি। সে কারণে লোহার রড ও লাঠিশোটা নিয়ে সভাপতি ফরিদ আলী, যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম সাবর ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান হেলিনসহ তাদের অনুসারি শ্রমিকরা আমার ওপর হামলা চালায়।

তিনি জানান, সভাপতি ফরিদ আলী শ্রমিকদের টাকা দিতে চান না। সে জন্যই তার ওপর হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করবেন বলেও জানান শ্রমিক নেতা আক্কাস আলী। এ বিষয়ে কথা বলতে ফরিদ আলীকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

নগরীর শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম খান বলেন, আক্কাস আলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com