বাধ্যতামূলক দাহ: শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের জন্য দুঃস্বপ্ন

0

‌‘ডাইয়িং হোয়াইল মুসলিম’ মিমটি হয়তো ৯/১১-পরবর্তী সময়ে বহুল আলোচিত ‘ফ্লাইয়িং হোয়াইল মুসলিমের’ মতো ব্যাপক পরিচিতি পাবে না। বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সে ওই সময় মুসলিমদের আলাদা করার কারণে ইসলামফোবিয়া নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল।

কিন্তু শ্রীলঙ্কার প্রেক্ষাপটে মিমটি এখন জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দেশটিতে মুসলিমদের লাশও তাদের ধর্মীয় রীতির লঙ্ঘন ঘটিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কায় কোভিড-১৯-এ মৃত্যুবরণকারী নবম ব্যক্তিটি ছিলেন এক মুসলিম নারী। তার পরিবারকে দাফন-কাফনের সুযোগ না দিয়ে তার লাশ কলম্বোর মুদেরাতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না।

এই মর্মান্তিক ও পরিকল্পিত অবহেলার দায়দায়িত্ব কে নেবে? কে পোড়া ছাই আবার হাড়-মাংশে পরিণত করবে, যাতে তাকে মর্যাদার সাথে দাফন করা যায়, ছাইদানিতে না ভরে?

এসব প্রশ্নের জবাব কখনো পাওয়া যাবে না। কারণ শ্রীলঙ্কার দ্ব্যর্থতাপূর্ণ অতীতের আলোকে বলা যায়, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় এবং শেষ ঘটনাও নয়।

এখন পর্যন্ত যে চার মুসলিমকে পোড়ানো হয়েছে, ওই নারী চতুর্থ। তবে আরেকজন ছিলেন ভাগ্যবান। তিনিও একই পরিণতি বরণ করা থেকে রক্ষা পেয়েছেন স্থানীয় নগর পরিষদের প্রধানের হস্তক্ষেপে।

লাশ পোড়ানোর এসব ঘটনা প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ। এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রোধ আর যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। মনে রাখতে হবে ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ অবসানের পর থেকে তারা বর্ণবাদের শিকার হচ্ছে, এখন তা আরো বাড়ছে।

পোড়ানো কেন?

এক কথায় বলা যায়, শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলছে যে কোভিড-১৯-এ মারা যাওয়া সব লোককে (তিনি যে ধর্মের লোকই হন না কেন) পোড়ানো হবে।

কিন্তু একটু ভালোমতো নজর দিলেই বোঝা যাবে, মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়াই। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া নির্দেশিকা পর্যন্ত পালন করা হয়নি।

এ ধরনের বিভাজনমূলক নীতি গ্রহণ করা সরকারের জন্য ঠিক হয়নি। কারণ এখন সময় হলো ঐক্যবদ্ধভাবে মহামারিটি মোকাবিলা করার। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়েই শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মহাপরিচালক হু-এর ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

হু জানিয়েছে, মুসলিমদের লাশ দাফন করা যাবে।

কিন্তু শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ তা মানতে রাজি নয়। শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথমে জানায় যে লাশ দাফন করা হরে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হবে। কিন্তু দেখা যায়, এই দাবির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। মুসলিমদের লাশ দাহ করার কোনো অজুহাত না পেয়ে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ অবশেষে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আউড়াতে থাকে।

ইতোমধ্যেই জাতিসঙ্ঘ স্পেশাল র‌্যাপোটিয়ার্স ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো শ্রীলঙ্কা সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওইসব অনুরোধ গ্রাহ্য করা হয়নি।

এমনকি শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলের নেতা সাজিত প্রেমাদাসা পর্যন্ত মুসলিমদের দাফন করার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শেষকৃত্য আয়োজন করার ব্যাপারে বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করার তীব্র সমালোচনা করেছেন।

ইতিহাসের ক্ষত

শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতা পায় ১৯৪৭ সালে। তখন থেকেই মুসলিম ও তামিল সংখ্যালঘুরা আইনগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। ওই সময় থেকেই সাম্প্রদায়িক হানাহানি, জাতিগত উত্তেজনা বিরাজ করছে।

তবে ২০০৯ সাল থেকে মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চলছে ব্যাপকভাবে। আর ২০১৯ সালের ইস্টার সানডে বোমা হামলার পর থেকে শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা আরো বিপদে পড়ে। ওই ঘটনাটি মুসলিমদের বিপর্যয়কর অবস্থায় ফেলে দেয়।

ইসলামফোবিয়ার মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এই করোনাভাইরাসের সময় তা আরো প্রকটভাবে দৃষ্টিগোচর হতে থাকে।

এখন যদি এ থেকে মুক্তি পাওয়া না যায়, তবে কোনোকালেই পাওয়া যাবে না। আর এখানে ব্যর্থতা মানে পুরো মানবতার ব্যর্থতা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com