চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হাইব্রিড যুদ্ধে সহযোগী ভারত
লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) চীনের সাথে ভারতের সর্বশেষ সঙ্ঘাত হোক, চীন থেকে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে ভাগিয়ে নিতে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করা হোক কিংবা আসন্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে করোনা বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া তদন্তের দাবি নিয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষ গ্রহণ হোক, ভারত নিঃসন্দেহে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন-সমর্থিত হাইব্রিড যুদ্ধকে আরো তীব্র করে তুলছে। নতুন মিত্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের লক্ষণ হিসেবেই ভারত কাজটি করছে।
ভেঙে গেছে ব্রিকস
ব্রিকসকে একসময় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনাময় একটি সংস্থা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল। কিন্তু ওই দিন আর নেই। ভারত ও চীনের মধ্যে বিরাজমান মারাত্মক মতপার্থক্যের কারণে ব্রিকসের সম্ভাবনা কখনো প্রবল না হলেও এই সংগঠনের প্রবক্তারা কিন্তু সেগুলো পাত্তা না দিয়ে জোরালোভাবে এর পক্ষে কথা বলেছিল।
ভারত যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্টে সই করে, তখনই সে আমেরিকার নতুন মিত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করেছিল।
এরপর থেকে ভারত পুরোপুরি পেন্টাগনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে। এর মাধ্যমে চীনকে মোকাবেলা করার জন্য ভারতকে ক্ষমতায়ন করা হয়। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে খোদ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ পর্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মোদির সামরিক পাগলামি
ভারত সম্প্রতি অধিকৃত কাশ্মিরের লাদাখ অঞ্চল ও দংলং মালভূমির (ভারতীয় মিডিয়া একে বলে দোকলাম। এর ফলে নয়া দিল্লির প্রতি সহানুভূতিশীল পাশ্চাত্যের মূলধারার মিডিয়া ও আল্ট-মিডিয়া সম্প্রদায় একে এই নামেই ডাকে। এখানেই ২০১৭ সালে তিন মাস ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছিল) কাছে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) চীনের সাথে সঙ্ঘাতে মেতে ওঠে। ওই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটার শঙ্কা তৈরী হয়েছিল।
লাদাখের পরিস্থিতি এতই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠেছিল যে খবরে প্রকাশ পেয়েছে যে ঘটনাস্থলে চীন বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার উড়িয়ে এনেছিল, আর ভারত কয়েকটি জঙ্গিবিমান পাঠিয়েছিল।
চীনভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে ভাগিয়ে নেয়ার ভারতীয় চেষ্টা
এই সঙ্ঘাতের প্রেক্ষাপটে ছিল চীন থেকে বিদেশী কোম্পানি ভাগিয়ে নেয়ার ভারতীয় আগ্রাসী প্রয়াস। চীনবিরোধী উদ্দীপনার আলোকে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করতে চেয়েছে ভারত।
এসব কোম্পানি যাতে কোনো সমস্যা ছাড়াই ভারতে আসতে পারে সেজন্য লুক্সেমবার্গের দ্বিগুণ আয়তনের জমি প্রস্তুাব করা হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এটা ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের অংশবিশেষ। তিনি বিদেশী কোম্পানিগুলোর চীন ছেড়ে যাওয়াকে উৎসাহিত করছেন। তিনি চাচ্ছেন এসব কোম্পানি যেন চীন ছেড়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মিত্র দেশে পাড়ি জমায়।
উল্লেখ্য, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) প্রবল বিরোধী ভারত। ভারত এর বিরোধিতা করার কারণ হিসেবে বিআরআইয়ের ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্টটি ভারতের দাবি করা এলাকার ভেতর দিয়ে গেছে বলে জানায়। আবার চীনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিতে ভারতের চেয়ে ভালো মিত্র আর পেতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র।
প্রক্সি ভারতের মাধ্যমে হু-তে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র
সফট পাওয়ার ফ্রন্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনের (ডব্লিউএইচএ, এটি হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও’র পরিচালনা সংস্থা) নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারে ভারত। চলতি মাসের শেষ দিকে জাপানের কাছ থেকে নেতৃত্ব যেতে পারে ভারতের হাতে। সংস্থাটি চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের সাথে তাল মেলাচ্ছে ভারত।
এমনকি তাইওয়ানকে সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিষয়টিও অনুমোদন করতে পারে ভারত। তবে চীন ইতোমধ্যেই ভারতকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে তা করা হলে ভারতীয় নেতৃত্ব এক চীন নীতিকে লঙ্ঘন করবে।
চীনের বিরুদ্ধে ইন্দো-আমেরিকান হাইব্রিড যুদ্ধ
সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকান-সমর্থিত হাইব্রিড যুদ্ধ আরো তীব্র করছে ভারত। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের ভারত সফরের পর থেকেই ভারত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র আনুষ্ঠানিক ব্যাপকভিত্তিক বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদার।
উভয় দেশই চীনকে সংযত করার বিশাল কৌশলগত লক্ষ্যকে লালন করে। উভয় দেশই এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করছে।
সামরিক, অর্থনৈতিক বা সফট পাওয়ার- সবস্থানেই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জোট একযোগে কাজ করছে চীনকে বেকায়দায় ফেলার জন্য। ভারত এখন সন্দেহ করছে যে চীন তার উপকূলে একটি দ্বীপ নির্মাণ করছে, এর ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটতেই থাকবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকরই হবে।