মুসলিম, অন্তঃসত্ত্বা ও একটি ভারতীয় কারাগার: করোনা সংক্রমণকালে সিএএ-বিরোধীদের দমন
ভারতে গত মাসে কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশটি হাজার হাজার বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে।
কিন্তু চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা (প্রথম সন্তান) সফুরা জারগার তাদের মধ্যে ছিলেন না। বরং তাকে নয়া দিল্লির তিহার জেলে পাঠানো হয়েছে।
ভারতের বিতর্কিত মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সময় যে ৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল পিএইচডির ছাত্রী সফুরা তাদের অন্যতম।
সফুরা জামিয়া মিল্লিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের ছাত্রী। ১০ এপ্রিল আটক হওয়ার পর তিনি কারাগার থেকে মাত্র দুবার স্বামীর সাথে কথা বলতে পেরেছেন। দুবারই ফোনের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৫ মিনিট করে, তারপর ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে গেছে বলে তার স্বামী জানিয়েছেন।
সফুরা তার স্বামী ও তার পরিবারকে বলেছেন, তাকে ভালোভাবেই রাখা হয়েছে। স্বামী বলেন, সফুরা কঠিন চরিত্রের। তবে সার্বিকভাবে বলা যায়, একজন গর্ভবতী নারীকে যে ধরনের পরিচর্যা করা দরকার, তা হচ্ছে না।
পুলিশ অভিযোগ করছে, ফেব্রুয়ারির সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় সফুরা ছিলেন প্রধান ষড়যন্ত্রকারী। ওই সহিংসতায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। তার বিরুদ্ধে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে ইউএপিএ আইনের আওতায়। এই আইনে আটক ব্যক্তিকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বিনা বিচারে আটক রাখা যায়।
তবে ওই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন যে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করছিলেন। দাঙ্গার সূচনা করেছে হিন্দুরা, তারাই মুসলিম বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করছে যে পুলিশ সশস্ত্র হামলাকারীদের থামাকে কিছুই করেনি, এমনকি তাদের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সফুরাকে দিল্লি পুলিশ হেফাজতে নেয়ার কয়েক দিন আগে দাঙ্গা ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া অ্যালুমনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি শিফা-উ-রহমানকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ ২৮ বছর বয়স্ক এমপিএর ছাত্র গুলশিফা ফাতিমা, প্রখ্যাত অ্যাক্টিভিস্ট খালিদ সাইফিকেও আটক করেছে। সবাইকেই ইউএপিএ আইনে আটক করা হয়।
স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিস্ট আয়েশা রেনা মনে করেন, সন্ত্রাস দমন আইনে ছাত্র নেতাদের আটক করার মাধ্যমে সরকার ভবিষ্যতের সব ধরনের বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, সরকার আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ভণ্ডুল করার জন্য সবকিছু করর চেষ্টা করছে। তবে আমরা আবার সংগঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, করোনাভাইরাস লকডাউন শেষ হওয়ামাত্র আবার প্রতিবাদে নামব। আইনটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।
করোনাভাইরাস বিস্তারের মধ্যে ইসলামফোবিয়া বৃদ্ধি ঘটে ভারতে। তখনই হয় এসব গ্রেফতার। করোনায় ভারতে এ পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে ৭৮ হাজার।
মার্চে সংক্রমণের একটি ক্লাস্টার পাওয়া যায় নয়া দিল্লিতে তাবলিগি জামাতের সমাবেশ থেকে। চার হাজার সংক্রমণের জন্য এই সমাবেশকে দায়ী করা হয়। আর সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বিদেশীসহ ওই সমাবেশের সাথে সম্পৃক্ত ২০ হাজারের বেশি লোককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রোধ উস্কে দিতে ভুল তথ্য-সংবলিত ভিডিও প্রচার করা হয়।
সফুরা ও তার পরিবারও ট্রলের শিকার হয়েছেন। এর বিরুদ্ধে দিল্লির নারী অ্যাক্টিভিস্টরা সোচ্চার হয়েছেন। তারা ট্রোলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।
সারা ভারত লকডাউনে থাকায় সফুরার মুক্তির জন্য ইন্টারনেটযোগেই কেবল আন্দোলন করা সম্ভব হচ্ছে। সফুরার সমস্যাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, তাকে মুক্তি দেয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে।
সফুরা পুরো রমজান মাস কারাগারে কাটিয়ে দিলেন। আগামী সপ্তাহে ঈদের তার পরিবার তাকে কাছে পাবে কিনা তা অনিশ্চিত। কিন্তু তবুও তার স্বামী এখনো বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখছেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আদালত তাকে শিগগিরই মুক্তি দেবে।