করোনায় বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের আশঙ্কা জাতিসংঘের
করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারিতে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু, রোগ, বাধ্যতামূলক আইসোলেশন, দারিদ্র্যতা ও উদ্বেগের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, বিশ্বজুড়ে সরকারদের করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এ বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক দেভোরা কেস্তেল বলেন, আইসোলেশন, আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক টানাপোড়ন- এসবকিছু মানসিক দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে বা করতে পারে। কভিড-১৯ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে নির্দেশনা ও এক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এমনটা বলেছেন তিনি।
কেস্তেল বলেন, মানসিক রোগের সংখ্যা ও জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারদের উচিৎ করোনা মোকাবিলায় এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া। তিনি আরো বলেন, এই মহামারিতে বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকা ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এর মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ।
বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন অঞ্চল ও সমাজের বিভিন্ন অংশকে মানসিক উদ্বেগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে, স্কুল ও বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে থাকা শিশু ও তরুণরা এবং প্রতিদিন হাজারো করোনা আক্রান্তকে সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা। চোখের সামনে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তাদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।
ইতিমধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কভিড-১৯ এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। সাইকোলজিস্টরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যেই শিশুদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা মানসিক সহায়তা চাওয়ার হারও বাড়ছে। এছাড়া, গৃহ নির্যাতনও বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতের বাইরে বহু মানুষ শারীরিক আইসোলেশন ও স্বাস্থ্যজনিত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বহু মানুষ। এছাড়া, সংক্রমণ, মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যদের হারানোর ভয়ে জাপটে ধরছে অনেককে।
প্রতিবেদনটি আরো জানায়, করোনার অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে জীবীকা ও আয় হারাচ্ছেন অনেকে। আরো অনেকে ঝুঁকির সম্মুখীন। প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়া ভুয়া তথ্য ও গুজব মহামারিটি নিয়ে নানা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা হারিয়ে ফেলছে মানুষ। বাড়ছে দুশ্চিন্তা। প্রতিবেদনটিতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি কোটি কোটি মানুষের তীব্র দুর্ভোগ কমাতে আহ্বান জানানো হয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রশমন করতে বলা হয়েছে। এর আওতায় রয়েছে, মানসিক সেবায় বিনিয়োগ বাড়ানো, জরুরি ভিত্তিতে মানসিক সেবা প্রদান, বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থদের নিয়ে কাজ করা ইত্যাদি।