করোনা নিয়ে চীনকে দোষারোপ : কী চায় যুক্তরাষ্ট্র?

0

করোনাভাইরাস সঙ্কটের বিষয়ে আমেরিকান রাজনীতিবিদদের অতি সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ায় মনে হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যত দ্রুত সম্ভব এটা স্পষ্ট করে দেবে যে, আমেরিকা একক উদ্যোগের পরিবর্তে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের দিকে অগ্রসর হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ না করারও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অবশ্য যখন ক্ষমতার বৈশ্বিক ভারসাম্য পরিবর্তনের প্রয়াসের কথা আসে তখন কোনও আমেরিকান সরকারকে উদাসীন থাকতে দেখা যায় না। মার্কিন প্রশাসন শিগগিরই বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য চীনকে দায়ী করতে তার সহযোগীদেরও রাজি করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে ইতোমধ্যে কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া অনুরূপ অভিযোগ করতে শুরু করেছে।

এটি কারও জন্য অবাক হওয়ার বিষয় নয় যে, বিশ্বের দু’টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বৈরিতা সামনে আরও জোরদার হচ্ছে। এর প্রভাব পুরো বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন শিগগিরই চীনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, মার্কিন ঋণ দায়বদ্ধতা বাতিল করার বিষয় বিবেচনা করতে পারে এবং চীনকে শাস্তি দেয়ার জন্য নতুন বাণিজ্য নীতিমালা তৈরির মতো বিভিন্ন সরঞ্জামের ব্যবহার শুরু করতে পারে। এতে মনে হচ্ছে যে, আগামী মাস এবং বছরগুলোতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীনা সংঘর্ষ এবং সঙ্ঘাতগুলো আরও গভীর ও তীব্র হবে। মার্কিন সরকার যখন রাজনৈতিক, কৌশলগত ও সামরিক ক্ষেত্রে বিরোধ ও সংঘর্ষ প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন দেশটি একাধিক ফ্রন্টে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অর্থাৎ দ্বিপক্ষীয় সঙ্ঘাত কেবল বাণিজ্য-যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এক কথায়, করোনাভাইরাস সঙ্কট যদি ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনকে বিপন্ন করে, তবে তিনি চীনের বিরুদ্ধে অনেক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবেন। তবে দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসংযুক্ততা ও পরস্পরের নির্ভরতার কারণে চীনকে এমন শাস্তি দেয়া সহজ হয় তো হবে না। কারণ চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজস্ব সম্পদ এবং টুলসগুলোকে একত্র করার ক্ষমতা রাখে।

এসব কারণে চীনকে দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করতে মনোনিবেশ করছে দেশটির সরকার। দেশটির মূল বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি এবং সামরিক কৌশলগত সামর্থ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। মার্কিন প্রযুক্তি রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে যাতে চীন সঙ্কটে না পড়ে তার বিকল্প সন্ধানেরও চেষ্টা করছে। চীনকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। চীনের প্রতি মার্কিন সামরিক হুমকি মোকাবেলায় চীন তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার সম্প্রসারণ এবং তার কৌশলগত আঘাত হানার সক্ষমতা জোরদার করার বিষয়টিও জরুরিভাবে ভাবছে।

চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সঙ্ঘাত বাধার অর্থ হবে বিশ্বের অন্য ছোট-বড় শক্তিগুলো তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ কারণে হান্টিংটনের থিউরির বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, ইসলাম এখন প্রধান মনোযোগ আর হবে না, যেটি ২০ বছর ধরে আমরা দেখে আসছি। ইসলামিক শক্তির সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন দুই দেশই সমান্তরালভাবে সমঝোতার সম্পর্ক কামনা করতে পারে। এর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের ওপরও দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে।

গ্লোবাল টাইমস বলেছে, মার্কিন মিত্রসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশকে একত্রিত করতে চীনা উদ্যোগ অবশ্যই বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে চীনের এই দেশগুলোর সাথে সাধারণ স্বার্থ প্রসারিত করতে হবে, পার্থক্য প্রসারের পরিবর্তে তা সঙ্কীর্ণ করার চেষ্টা করতে হবে এবং তাদের বোঝাতে হবে যে, একটি শক্তিশালী চীন তাদের জাতীয় স্বার্থেই প্রয়োজন রয়েছে এবং বিদ্যমান পার্থক্যগুলো তাদের সাথে চীনের সম্মানজনক সম্পর্কে প্রতিবন্ধক হবে না।
তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে যতটা যুদ্ধক্ষেত্রের সামনে নিয়ে আসতে চাইছে বেইজিং কিন্তু সেভাবে চাইছে

না। চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন-মার্কিন সম্পর্কে অতীতের স্তরে ফিরে আসা যদি অসম্ভব হয়ে পড়ে, তবুও শীতল যুদ্ধ ধরনের সঙ্ঘাত এড়ানো এখনও সম্ভব। চীনের মার্কিন উস্কানিতে সহজেই সাড়া দেয়ার বিষয়টি এড়ানো উচিত এবং আমেরিকার সাথে কৌশলগতভাবে চলাচলের জন্য ধৈর্য রাখতে হবে বেইজিংকে।

বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই চীনকে উসকে দেয়, অন্য কিছু দেশ চীনের সাথে লেনদেন করার ক্ষেত্রে তাদের সুবিধা বাড়ানোর সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে চীনকে হয় যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে অথবা কৌশলগতভাবে এগুলো সহ্য করতে হবে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হওয়া সহজ নয়। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে চীনের শান্ত থাকাই উচিত।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com