গোটা বিশ্বে চাকরিচ্যুত হতে পারে লাখ লাখ মানুষ, ব্যবসায় নামতে পারে ধস

0

প্রাণঘাতী করোনার ছোবলে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখনও এর প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। তালা ঝুলছে কল-কারখানায়। থমছে আছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। আকাশপথ বন্ধ, বন্ধ গণপরিবহনও। দেশে দেশে প্রতিটি সেক্টরে বিপর্যয় নেমে আসছে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক এই মহামারীতে বিশ্ব অর্থনীতি এখন অচল। স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এ অবস্থায় বিশ্বে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা আরও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে, ব্যবসায়িক দুর্যোগে চাকরিচ্যুত হতে পারে লাখ লাখ মানুষ। একইসঙ্গে ধস নামতে পারে ব্যবসা বাণিজ্যে।

এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গণহারে কর্মী ছাঁটাই বা চাকরিচ্যুতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী যত মানুষ শ্রমবাজারে যুক্ত আছে, এই মহামারীর কারণে তাদের প্রায় অর্ধেক জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। আর এই সংখ্যা ১৫০ কোটি। আইএলও বলছে, যারা অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করে তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। খুচরা ব্যবসা এবং খাদ্য সেবা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই ভাইরাস মহামারীর ফলে লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইএলও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, বিকল্প কর্মসংস্থান বা আয়ের সুযোগ না থাকলে এই কর্মীরা এবং তাদের পরিবারের বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে।যুক্তরাষ্ট্রে গেল সপ্তাহে বেকার হয়েছেন আরও ৪৪ লাখ মার্কিনি। এ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে বেকারের সংখ্যা পৌঁছেছে ২ কোটি ৬০ লাখে। পরিস্থিতি কবে স্থিতিশীল হবে, সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্ব ১৯৩০ সালের চেয়েও ভয়াবহ মন্দা দেখবে- এমনই পূর্বাভাস দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফুটে উঠতে শুরু করেছে বাস্তব চিত্র। লকডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সপ্তাহে বেকার হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে দেশটিতে বেকার হয়েছেন আড়াই কোটির ওপরে মানুষ। যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মক্ষম ব্যক্তির ১৫ শতাংশ। দেশটিতে বেকার ভাতা পেলেও দিনযাপন করতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

করোনার কারণে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীনও সময়কালের সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে। তাদের অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগেই করোনাভাইরাসকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ‘সবচেয়ে খারাপ সংকট’ বলে অভিহিত করেছেন। বিবিসি গত ২১ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোক, অর্থাৎ প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ তাদের ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এত বেশি সংখ্যক মানুষ একই সময়ে, একটানা, এত দীর্ঘকাল তাদের ঘরে বন্দী থাকার নজির কখনো ছিল না। এক অদৃশ্য ভাইরাসের আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বব্যবস্থা। এই মহামারী শেষ হয়ে গেলে অর্থনীতির চাকা সচল হতে কত সময় লাগবে তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

এদিকে, আকাশপথ বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে অ্যাভিয়েশন সেক্টরে। সারা বিশ্বে বন্ধ আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী বিমান চলাচল। আর এই প্রভাব এসে পড়েছে বিমান সংস্থাগুলোর উপর, যার জেরে একের পর এক সংস্থা হাঁটছে কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকে। এবার কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকে পা বাড়াল ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। এয়ারলাইন্সের মালিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কনসলিডেটেড এয়ারলাইন্স গ্রুপের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার জানানো হয়েছে একধাক্কায় প্রায় ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে পারে তারা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সরকারিভাবে সংস্থার তরফে প্রত্যেক ট্রেড ইউনিয়নকে আসন্ন রিস্ট্রাকচারিং সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে তার প্রভাব পড়বে প্রায় প্রত্যেক ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্মীর উপরেই। ছাঁটাই করা হতে পারে ১২ হাজার কর্মী।’ এই মুহূর্তে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে মোট ৪৫ হাজার কর্মী রয়েছেন। 

হাউজিং ব্যবসায়ও বিশ্বব্যাপী ধস নেমেছে মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৮২ বিলিয়ন পাউন্ডের হাউজিং প্রোপার্টিজ বিক্রি আটকে গেছে। দেশটির শহরগুলোর হাউজিং মার্কেট বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে হাউজিং প্রোপার্টিজ ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট জুপলার। খবর বিবিসি বলছে, ‘জুপলারের গবেষকদের অনুমান, বিক্রি আটকে যাওয়া সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৮২ বিলিয়ন পাউন্ড। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকেও অন্যান্য সময়ের মতোই এক দশমাংশ সম্পত্তি বিক্রি হচ্ছিল। করোনার কারণে তা কমে যায়। অথচ এই বসন্তকাল সাধারণত হাউজিং পোপার্টিজ বিক্রির জন্য উপযুক্ত সময়। এবার সেচিত্রটা একেবারেই ভিন্ন।’

বিশ্বব্যাপী বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই যে শুধু সংকটে তা নয়, করোনার প্রভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের শনির দশা। তাদের কিছু ব্যবসা আর কোনোদিনই পুনরায় চালু নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ‘গ্লোবাল ডিজাস্টার রিকভারি গ্রুপ (ডিআরআই)। সংস্থাটি মূলত বিভিন্ন সংকট পরবর্তী সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় সচল রাখতে সহযোগিতা করে থাকে। তাদের মতে, করোনা পরবর্তী সময়ে যখন অর্থনীতির চাকা পুনরায় চালু হবে, তখন অনেক ব্যবসা-বাণিজ্যই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। গ্লোবাল ডিজাস্টার রিকভারি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ক্লো ডেম্রোভস্কি বলেছেন, ‘বৈশ্বিক এই মহামারির চলে যাওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে। আগের পরিস্থিতি একেবারেই থাকবে না। আমাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য পুরোপুরি বদলে যাবে।’

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে কথিত প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে ভাইরাসটির প্রথম সংক্রমণ ঘটে। যদিও চীনের এ দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরপর মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এই ভাইরাসে বিপুলসংখ্যক মানুষকে প্রাণ হারাতে দেখছে বিশ্ব। এরই মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যা ৩০ লাখ পেরিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রাণহানি হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষের।

(সূত্র : ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য অবলম্বনে)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com