ক্যাম্পাসের ঐতিহ্যবাহী গাছ কেটে সমালোচনায় রাবি প্রশাসন

0

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটক হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই নজরে পড়ে সারি সারি পাম গাছ। প্রায় ৫০ বছর পুরোনো গাছগুলো সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেটে ফেলেছে। সেই গাছগুলো কেটে ফেলে রাখার ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেন এই গাছগুলোকে কাটা হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে প্রশাসনের দাবি, পাম গাছগুলোতে ‘ছত্রাক’ ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে গাছের পাতাগুলো শুকনো হয়ে ঝড়ে যাচ্ছিল। অনেকগুলো গাছ মারাও গেছে। তাই কৃষি প্রকল্প সকল নিয়ম মেনে গাছগুলো কেটে একই জায়গায় নতুন গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।এ নিয়ে কৃষি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, গাছগুলো অনেক আগেই মারা গেছে। সকলেই এই ফিস্টেল পাম গাছগুলোর দশা সম্পর্কে অবগত আছেন। সেগুলোতে অজ্ঞাত কারণে ছত্রাক লেগেছিল। প্রায় সব গাছেই এ ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ে। শুধু পাম গাছ নয়, আশেপাশের অন্য গাছগুলোতেও ছত্রাকটি ছড়িয়ে পড়ে। তাই আমরা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া সেখানে পুনরায় বোটল পাম গাছ লাগানো হবে।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় যে আমরা গাছগুলো কেটেছি, বিষয়টি এমন নয়। এগুলোর কাঠের মূল্যও বেশি নয়, যে তা বিক্রি করে প্রশাসন লাভবান হবে। তবে যারা এ গাছগুলো দেখে অভ্যস্ত, ভাল লাগার জায়গা থেকে তাদের খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গাছগুলোর অবস্থাও দেখতে হবে। কেন সেগুলো কাটা হয়েছে, তা জেনে সমালোচনা করা উচিত। 

পাম গাছগুলোতে ছত্রাক লাগার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবীর বলেন, গাছগুলো আরও আগেই কাটা দরকার ছিল। আমি মনে করি- অনেক দেরিতে কাটা হয়েছে। কারণ সেগুলোতে থাকা ছত্রাক আশেপাশের গাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি মানুষের গায়ে পড়লেও তা থেকে রোগ ছড়াতে পারে।

তবে অধ্যাপক গোলাম কবীরের সাথে দ্বিমত পোষণ করে একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক ও গবেষক ড. মনজুর হোসেন বলেন, গাছের ছত্রাক থেকে কখনই মানুষের শরীরে রোগ-ব্যাধী ছড়াবে না। এটা ভুল কথা। গাছগুলো এতোদিন সৌন্দর্য ছড়ালো, সেগুলোর পরিচর্যা করা যেত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেত। গাছের গোঁড়া খুঁড়ে সার-পানি দিলে নতুন করে সবুজ হয়ে উঠতে পারতো। সেটা কী আমরা করেছি?

এদিকে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। আর এই সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গাছগুলোকে কেটে ফেলেন। দীর্ঘদিন ধরে গাছগুলোর অপরিচর্যার কারণে কয়েকটি গাছ মারা গিয়েছে। কিন্তু এভাবে সারিতে সারিতে গাছগুলো কেটে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রত্যেক ছুটিতেই এভাবে গাছ কেটে সাবাড় করেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছবিগুলো পোস্ট করে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

রাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম.এ.কে আজাদ তাঁর ফেসবুকে গাছ কেটে রাখার বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘করোনা তোদেরকেও বাঁচতে দিল না! আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের তথা প্রশাসন ভবনের সামনে সারি সারি দাঁড়ানো পাম গাছগুলো কেটে ফেলা হলো। জানিনা তাদের কি অপরাধ ছিল। নাকি তারা করোনা প্রতিরোধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বহু বছর ধরে কালের স্বাক্ষী এরা। আর কোনো দিন তোদের দেখা হবে নারে! ক্ষমা করিস তোরা!’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com