করোনা মহামারি মানবাধিকার সংকটে রূপান্তরিত হতে পারে: জাতিসংঘ
করোনাভাইরাসের মহামারি মানবাধিকার সংকটে পরিণত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এই মহামারি কয়েকটি দেশকে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এটিকে অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বৃহস্পতিবার গুতেরেস বলেন, এই ভাইরাস যেমন আক্রান্ত করতে কোনও ধরনের বৈষম্য করেনি, তেমনি এই মহামারির প্রভাবও কোনও বৈষম্য করবে না। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ১১ হাজার ১৪৪ জন।
এই ভাইরাসের মহামারি মোকাবিলার সময়ে মানবাধিকার সংক্রান্ত নির্দেশনা এবং এই মহামারির ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এ সময় সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, আমরা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচার প্রভাব পড়তে দেখেছি, ঘৃণাবাদী বক্তব্যের বাড়ন্ত দেখেছি, দুর্বল জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে দেখেছি এমনকি কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার হুমকিকে স্বাস্থ্যসেবাকে ছাড়িয়ে যেতেও দেখেছি।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মহামারির সময়ে অভিবাসী, শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষেরাই বেশি দুর্বল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১৩১টিরও বেশি দেশ নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে কেবলমাত্র ৩০টি দেশ আশ্রয়প্রার্থীদের ঢুকতে দিচ্ছে। এই মহামারির সময়ে কয়েকটি দেশ নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে জানালেও এধরনের দেশের কোনও উদাহরণ তুলে ধরেননি তিনি।
সরকারগুলোকে স্বচ্ছতার সঙ্গে জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়ে অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, নাগরিক পরিসর ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো সাড়া দেওয়া হলো মানবাধিকার ও আইনের শাসন বজায় রেখে বৈষম্যহীনভাবে সাড়া দেওয়া।’
বিশ্বন জুড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কোটি কোটি মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানোর কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আশঙ্কা এর মাধ্যমে ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার পর সবচেয়ে মারাত্মক মন্দায় পড়তে পারে বিশ্ব। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষকে অভিবাসন নিতে না দিলে তা উত্তেজনা বাড়াবে আর নাগরিক অশান্তি তৈরিতে উস্কানি দেবে। গুতেরেস বলেন, ‘আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে: হুমকি হলো ভাইরাস, মানুষ নয়।’