কোভিড-১৯ নিয়ে ভারতীয়দের মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণার বিরুদ্ধে আরব নেটিজেনদের পাল্টা আঘাত

0

আরববিশ্বের সামাজিক গণমাধ্যম কয়েক সপ্তাহ ধরে মুসলিমবিদ্বেষী ও আরববিরোধী মন্তব্যের জন্য ভারতীয়দের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের এক সদস্যা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে ভারতীয়রা যদি বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক মন্তব্য করা অব্যাহত রাখে তবে তার দেশে কর্মরত ভারতীয়দের ‘জরিমানা করা হবে ও চলে যেতে’ বাধ্য করা হবে।

প্রিন্সেস হেন্দ আল কাসিমির বক্তব্যটি প্রকাশ পায় ১৬ এপ্রিল টুইটারে। এর সাথে ভারতীয় এক প্রবাসীর টুইটারে দেয়া হুমকির স্ক্রিনশটও জুড়ে দেয়া হয়। ওই প্রবাসী ‘ইসলামি তাবলিগি সন্ত্রাসীদের হত্যার’ হুমকি দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ভারতে কোভিড-১৯ বৃদ্ধির জন্য তাবলিগি জামাতকে দায়ী করা হচ্ছে।

এরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপির এমপি তেজস্বী সূর্যের ২০১৫ সালের একটি টুইট অনলাইনে প্রচারিত হতে থাকে। তার মন্তব্যটি মর্যাদাহানিকর হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। তেজস্বী বলেছিলেন, ৯৫ ভাগ আরব নারী ‘গত কয়েক শ’ বছরে কখনো অর্গাজম উপভোগ করেনি।’

দুবাইভিত্তিক নারী ব্যবসায়ী নূরা আলঘুরাইর উল্লেখ করেন, তেজস্বীর ওই মন্তব্য মর্যাদাহানিকর। তিনি তাকে ‘আরব ভূমি সফরের বিরুদ্ধে’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এরপর তেজস্বী মন্তব্যটি টুইটার থেকে সরিয়ে ফেলেন।

হায়দরাবাদের মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রধান আফরোজ আলম বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক রক্ষা করে চলে এবং কখনো মুসলিম প্রধান্যপূর্ণ কাশ্মির অঞ্চলে নয়া দিল্লির দমন অভিযানের নিন্দা করেনি। এমনকি ২০১৪ সাল থেকে বিজেপি শাসনে মুসলিমদের ওপর হামলার বিরুদ্ধেও কথা বলেনি।

কিন্তু এখন ভারতে মুসলিমবিরোধী প্রচারণার বিরুদ্ধে আরব দেশগুলোতে প্রকাশ্যে ব্যাপকভাবে সমালোচনা হচ্ছে। এটি নজিরবিহীন ও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। চলতি সপ্তাহে উপসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত সাংবাদিক, আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি খারাপ আচরণের বিষয়টি তুলে ধরেছেন সামাজিক মাধ্যমে।

তাদের অনেকে অকারণে মুসলিমদের হত্যার কথা বলেছেন, অনেকে বলেছেন, মুসলিমদের প্রতি আরএসএসের আক্রমণ অগ্রহণযোগ্য। তারা আরএসএসকে সন্ত্রাসী গ্রুপ আখ্যায়িত করে উপসাগরে তাদের নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার ভারতে টুইটারে “#Islamophobia_in_India” ট্রেন্ড হতে থাকে। এটি আরো ক্ষোভের সৃষ্টি করে। কারণ এতে বলা হয় যে ভারতে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে মুসলিমরা। মোদি সম্প্রতি যদিও বলেছেন যে কোভিড-১৯-এর সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু তার কথায় তেমন কাজ হয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ইসলাফোবিয়া বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে ভারতের সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি মঙ্গলবার বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু ও মুসলিমদের জন্য ভারত হলো স্বর্গ।’

উপসাগরীয় দেশগুলোতে এত দিন ধারণা ছিল যে ভারত হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ, উদার দেশ। কিন্তু ওই ধারণা এখন বদলে যাচ্ছে। এমনকি ভারতের বন্ধু হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবভিত্তিক প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক খালিদ আল মাইনা বলেন, ভারতের ওই খ্যাতি এখন নর্দমায় ডুবে গেছে।

তিনি বলেন, ভারতের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক হ্রাস পেয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিজেপি ও আরএসএসের বিদ্বেষমূলক প্রচারণা গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, এখানকার লোকজন সত্যিই ক্রুদ্ধ হয়ে আছে।

তবে সামাজিক মাধ্যমের এই ক্রোধ কি মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ভারতের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে? উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলোতে (সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার ও সৌদি আরব) প্রায় ৮৯ লাখ ভারতীয় কাজ করে। 

এসব দেশের সাথে ভারতের বার্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই অঞ্চল থেকেই ভারত তার ৮০ ভাগ তেল আমদানি করে। এসব দেশের সাথে অপেক্ষাকৃত ভালো সম্পর্ক রাখার জন্য আমিরাত ও সৌদি আরব মোদিকে সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব প্রদান করেছে।

তবে মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের আফরোজ আলম বলেন, সুশীল সমাজ যদি ভারতে মুসলিমদের দূরে ঠেলে দেয়ার কাজটি করতে থাকে, তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর সরকারগুলোও তা নিয়ে কথা বলতে পারে।

বিজেপির বৈদেশিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত এক নেতা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আরব দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক খুবই দৃঢ়, মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণায় কোনো প্রভাব পড়বে না।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটরে স্কলার ইন রেসিডেন্স জন ক্যালাব্রেস বলেন, বিদ্যমান বিপুল অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে উপসাগরীয় নেতারা সম্ভবত ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা বা দৃশ্যমান অবরোধ আরোপ করবে না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com