ইংল্যান্ডে ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে
করোনা ভাইরাসে সারাবিশ্বের মতো ইংল্যান্ডও বিপর্যস্ত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯৫, মারা গেছে ১৮ হাজার ১০০ জন। এই অবস্থায় এর ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত ব্রিটেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ক্রিস হোয়াইটি।
তিনি বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার ও তা সহজলভ্য হতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। ততদিন পর্যন্ত শারীরিক দূরত্বের মাধ্যমেই এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব। এবং সেটাই করে যেতে হবে।’
ক্রিস হোয়াইটি বলেন, ‘আমাদের হাতে প্রতিষেধক আসা পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে ভাল পদক্ষেপ এবং সেটা (ভ্যাকসিন আসা) অনেক সময়ের ব্যাপার। আমি মনে করি আমাদের বাস্তবধর্মী চিন্তা করা দরকার। আমাদের অন্যান্য সামাজিক পরিমাপগুলোর ওপর ভরসা করতে হবে। প্রতিষেধক না পাওয়া পর্যন্ত এগুলোই আমরা মেনে চলতে পারি।’
প্রতিষেধক আসলেও সহজলভ্য হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। সেজন্য আমাদের আরও সচেতন হতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দেশে দেশে যেভাবে লকডাউন করা হচ্ছে, শুধুমাত্র এভাবে লকডাউনের মাধ্যমেই করোনার প্রকোপ থামানো যাবে না। এমনকি শারীরিক দূরত্বও হয়তো আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত রাখা জরুরি বলে মনে করছেন তারা। আগামী কয়েক বছর এভাবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা গেলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা অনেক কমবে বলে মনে করছেন তারা। কারণ এতে করে সংক্রমণ খুব বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।
হার্ভার্ড গবেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাস হয়তো অন্যান্য কিছু রোগের মতো মৌসুমভিত্তিক হয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ শীতের দিনগুলোতে এই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। শীতের মৌসুমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে।
সে কারণে এককালীন শারীরিক দূরত্ব করোনা প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়; বরং দীর্ঘ সময় ধরেই তা মেনে চলা জরুরি। সে কারণে আরও কয়েক বছর শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিভিন্ন জনসমাগম কমিয়ে আনা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে সরাসরি করোনায় সংক্রমণের ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। সে কারণেই এখন করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে লোকজনকে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া এখন কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি কোভিড-১৯’র একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন আজ বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন চূড়ান্তভাবে মানবদেহে প্রয়োগের ব্যাপারে আশাপ্রকাশ করেন। এ জন্য ভ্যাকসিনটির কয়েক লাখ ডোজ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তারা।
ব্রিটেনে এটি প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। প্রথম দফায় ৫১০ জনের ওপর এই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এজন্য স্বেচ্ছাসেবী খুঁজছে ব্রিটেন।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং ইউনিভার্সিটি হসপিটাল সাউথাম্পটন লোকজনকে এই গবেষণা কাজে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এপ্রিলের শেষ নাগাদ করোনার একটি ভ্যাকসিনের মানবদেহে পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন।
করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এই মুহূর্তে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি গবেষক দল কাজ করছে। এর মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চালিয়েছে। গত মাসে প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালান যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বিজ্ঞানীরা।