মহামারী থাকুক বা না থাকুক, আফগানিস্তানে শান্তির ব্যাপারে ভুল করার মতো অবস্থায় নেই যুক্তরাষ্ট্র

0

করোনাভাইরাস মহামারী যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে। তবে এসবের কয়েকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় স্থগিত করতে পারছ না। পরাশক্তিগুলোর এমন কিছু দায়িত্ব থাকে, যা অন্য দেশগুলোর থাকে না।

গত ১৩ এপ্রিল আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদ ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে সই হওয়া শান্তিচুক্তিটি বাস্তবায়নে ‘বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো’ নিয়ে তালেবানের সাথে আলোচনার জন্য কাতার রওনা হয়েছেন। তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সফলভাবে বন্দী বিনিময় হওয়ার প্রেক্ষাপটে খালিলজাদের সফরটি হচ্ছে। এটি চুক্তিটি বাস্তবায়নে একটি ইতিবাচক দিক।

তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি সই হয়েছে, তাতে উভয় পক্ষই বেশ কিছু ছাড় দিয়েছে। ওয়াশিংটন পর্যায়ক্রমে সৈন্য প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে। তারা আগামী ১৩৫ দিনে সৈন্য কমিয়ে ৮,৬০০ করবে। আর আল-কায়েদা, আইএসআইএসের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবান। তারা আফগান সরকারের সাথেও আলোচনায় বসার বিষয়টি মেনে নিয়েছে। চুক্তিতে ব্যাপকভিত্তিক বন্দী বিনিময়ের কথাও রয়েছে।

চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার ভাগাভাগি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব লকডাউনে থাকলেও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে শান্তিচুক্তিটি বাস্তবায়নের তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা হবে একটি ভুল। ১৯ বছরের যুদ্ধ ও হাজার হাজার আফগান, মিত্র ও আমেরিকান সৈন্যের জীবনের বিনিময়ে এই তাড়াহুড়ায় হবে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী বেইজিং ও মস্কোর জয়।

পরাশক্তি ও আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের উচিত হবে কাবুল সরকারকে সমর্থন করা এবং তালেবানের সাথে চূড়ান্ত সমাধানের দিকে নজর রাখা। আমরা কেবল আঞ্চলিক খেলোয়াড়ের ওপর ছেড়ে দিতে পারি না। মধ্য এশিয়া ও বিশ্বের আরেকটি জিহাদি আঞ্চলিক সঙ্ঘাত মঞ্চ দেখা উচিত হবে না। 

আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে যেকোনো মার্কিন নীতির অংশ হওয়া উচিত মধ্য এশিয়ার বড় শক্তি কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের। উভয় দেশই বোঝে যে আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নের জন্য আফগানিস্তানের শান্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেসও জানিয়েছেন।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর তালেবানের ওপর হামলা চালানোর জন্য নিজের সামরিক ঘাঁটি মার্কিন সৈন্যদের ব্যবহার করতে দিতে প্রথম মধ্য এশিয়ার যেসব দেশ প্রস্তাব দিয়েছিল, তার অন্যতম ছিল উজবেকিস্তান। এরপর থেকে আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় দেশটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে আছে। উজবেকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের জন্য ইউএসএইড নতুন করে এক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। 

আফগানিস্তানের শান্তিপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসদমন নীতির নেতা কাজাখস্তান সবসময়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শুরু থেকেই কাজাখস্তান নর্দার্ন ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। 

কাজাখস্তানের জুসান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে সিরিয়া ও ইরাক থেকে জিহাদি ব্রেনওয়াশ হয়ে আসা নারী ও শিশুদের পুনর্বাসন করার জন্য। আফগানিস্তানের তরুণরা যাতে সন্ত্রাসীদের খপ্পরে না পড়ে সেজন্য পাশ্চাত্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে কাজাখস্তান। আফগান নারীদের জন্য শিক্ষা কর্মসূচিও চালু করা হয়েছে কাজাখস্তানের মাধ্যমে। শত শত আফগান নারী কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করছে।

এ কারণে কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানে আফগানদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের স্থায়ী, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

পাশ্চাত্যের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন দোহায় সই হওয়া চুক্তিটির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। করোনাভাইরাস মহামারী স্পষ্টভাবেই সম্পদ ও শীর্ষ নেতাদের মনোযোগ দাবি করছে। তবে পরাশক্তির মতো সাবলীলভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com