করোনার পর কী হবে পূথিবীতে
বিশ্বনেতৃত্বে অদল-বদল সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে বিশ্ব পরাশক্তি হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু করোনায় হেরেই বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি এখন কোণঠাসা। চীনে করোনা পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ তখনো একে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে পাত্তা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ফলাফল : লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যাও বেশি। বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম। আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে বলাই যায়, যুক্তরাষ্ট্র এখন পরাশক্তি নয়। গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করছে চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ। চীনের করোনায় সামলে ওঠা, বিশ্বজুড়ে বন্ধুত্বপরায়ণ মনোভাব, দেশে দেশে সহযোগিতা, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামীর বিশ্ব নেতৃত্ব তাদের হাতেই আসতে পারে।
এ দিকে চীন গত ৩০ বছরে বিশ্বের নানা প্রান্তে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। চীন একাই বিশ্বশাসনের অদৃশ্য জাল বুনে রেখেছে। সেই জালে বাদ যায়নি কেউ। এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা, ইউরোপ সবখানেই তারা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। করোনার সময়ও তারা দেশে দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়ে সে সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে। অপরদিকে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে রাশিয়া এখন পর্যন্ত দারুণভাবে সফল। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার লড়াকু ও সতর্ক অবস্থান আগামীতে ইতিবাচক কিছু দেখাতে পারে। তাছাড়া উত্তর কোরিয়া এককভাবে বিশ্ব পরাশক্তি না হলেও বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের মনোভাব ও কর্মকা- ব্যাপকভাবে আলোচিত। করোনা যুদ্ধে পূর্ব সতর্কতা এবং বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন পদক্ষেপে সফল হয়েছে দেশটি। করোনায় বেঁচে থাকা উত্তর কোরিয়ার বর্তমান চিত্র সত্য হলে বিশ্বনেতৃত্বে আগামীতে পরিবর্তন আসতে পারে। অপরদিকে ভারত করোনার লড়াইয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়লেও পুরো ভেঙে পড়েনি। যাই হোক, করোনা-পরবর্তী বলে দেবে বিশ্ব নেতৃত্বের সুযোগ ভারত কতটা কাজে লাগাতে পারবে।
সভ্যতার সংকট
মানব সভ্যতা এক বিশাল সংকট মোকাবিলা করছে। বলা হচ্ছে, ১/১১-এর চেয়ে করোনাভাইরাস একটি বড় পরীক্ষা মানব জাতির জন্য। যার ফলে করোনা-পরবর্তী আর্থিক সংকট প্রকট হবে। দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলেও সতর্ক করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এটি একটি বিস্ময়কর ধাক্কা যা বিশ্ব ব্যবস্থাকে ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে। করোনাকালীন এই অভিজ্ঞতা দেশগুলোকে পুরনো সভ্যতায় নিয়ে যেতে পারে।
অর্থাৎ প্রত্যেক দেশ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে। ফলাফল : বহির্বিশ্বে কর্ম হারাতে পারেন অনেকে। তাতে বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। বেকারত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি যুক্ত হয়ে একটা কঠিন পরিস্থিতির আভাস দেয়। বিশ্বে জৈবিক ও সভ্যতা উভয় ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন আসবে। সরকারি-বেসরকারি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং স্বল্পমেয়াদি ত্যাগের লক্ষ্যে যোগাযোগ অর্জনের মতো দীর্ঘমেয়াদি অগ্রাধিকারগুলো থমকে যাবে। অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটের কারণে যুদ্ধবিগ্রহ বেড়ে যাবে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি পাবে।
অভিবাসী সংকট প্রকট হবে
শরণার্থী, অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থী; যে নামেই ডাকা হোক, এরা নিজ দেশ ছেড়ে দেশান্তরী হন কেবল উন্নত জীবনের আশায়। কিন্তু এসব অভিবাসীর জন্য করোনা-পরবর্তী যে সুখকর হবে না, তা দিব্যি টের পাচ্ছে বিশেষজ্ঞরা। করোনার প্রভাবে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধস নামবে। অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় ব্যর্থ রাষ্ট্র থেকে নিশ্চিত জীবনের আশায় লোকেরা ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাবে। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়টি দুই মহাদেশের দেশগুলো অভিবাসী গ্রহণে অপারগ হবে। তথাপি, আন্তর্জাতিক বাধা উপেক্ষা করে লোকেরা শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করবে। ইতিমধ্যে তুরস্ক চার কোটি সিরীয় শরণার্থীকে চিরকালীন চাপ সামাল দিতে নারাজ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। প্রয়োজনে তারা ইউরোপীয় সীমান্ত খুলে দেবে। মিসর, সুদান, মেক্সিকোর মতো দেশগুলো থেকে লোকেরা দলে দলে ইউরোপে ঢুকবে। ফলে, বিশ্বব্যাপী অভিবাসন সংকট আরও প্রকট হবে।
জাতীয়তাবাদের উত্থান
বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে রাজনৈতিক, সামরিক, জাতিগত ও মতাদর্শের নানা সংকট মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে জাতীয় পরিচয়, বেঁচে থাকার অধিকার। ইতিমধ্যে ছয় কোটি ৫৬ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছে। করোনা-পরবর্তী আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিপরীতে দেশে দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটবে। কারণ, করোনার ক্রান্তিকাল শেষ হলে লোকেরা নিশ্চিত জীবনের আশায় দেশান্তরী হবে। অনেক দেশে অভিবাসীর ঢল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটবে। খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ, শস্য রপ্তানি ইত্যাদি কারণে জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দেবে। ইতিমধ্যে দেশে দেশে শরণার্থী শিবিরগুলোয় ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। করোনার কারণে তা আরও প্রকট হচ্ছে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে অভিবাসীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে স্থানীয়রা। ইউরোপের অসংখ্য দেশে বিগত সময়ের রক্তক্ষয়ী সংঘাতও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বাড়বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
আজ এই পরীক্ষা তো কাল আরেক। করোনা-পরবর্তী স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার কদর বাড়বে কয়েক গুণ বেশি। যেমন-ডেঙ্গুর মৌসুমে জ্বর হলেই বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর পরীক্ষার পরামর্শ দেন, তেমনি যে এলাকায় করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়বে, সেই এলাকায় কারও সাধারণ সর্দি-জ্বর হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হতে পারে। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনাভাইরাসটি সম্পর্কে বারবার বলছে, পরীক্ষা পরীক্ষা আর পরীক্ষা। তা ছাড়া একটা দেশ তখনই বেশ বড় মাপের সামাজিক নিরীক্ষার জায়গা হয়ে যায়। যখন সবাই বাড়িতে থেকে কাজ এবং দূরত্ব মেনে যোগাযোগ বজায় রাখলে কী হয়? স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে চলে গেলে কী ঘটবে? স্বাভাবিক সময় হয়তো কোনো দেশের সরকারই এ ধরনের কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রাজি হতো না। বর্তমান করোনার এমন সংকটময় মুহূর্ত বলেই বিশ্বের অনেক দেশের সরকার এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।
স্বাস্থ্য সচেতনতার অভ্যাস
মানব সভ্যতা এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে লোকেরা বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন পালন করছে। ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই হোক, ভাইরাস প্রতিরোধ বা সতর্কতার উপায় হিসেবে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করছে। হ্যান্ড গ্লাভস বা স্যানিটাইজার ব্যবহার তো হয়ে গেছে নিত্যদিনের সঙ্গী। অনেকে এখন ভিড় এড়িয়ে চলছেন। কারও জ্বর-সর্দি হলেই তার ধারে কাছেও ভিড়ছেন না। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে নানা মহলে। অর্থাৎ সবাই একটি নিয়মিত অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। হয়তো একদিন করোনা ঝড় থেমে যাবে। কিন্তু মানব সভ্যতায় যে আঁচড় পড়েছে, তা হয়তো থেকে যাবে চিরকাল। অর্থাৎ লোকেরা আজ যে অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন তা হয়তো থেকে যাবে চিরকাল। প্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগ বেড়ে যাবে। তবে দরিদ্র এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলো বিশেষত অপ্রস্তুত এবং দুর্বল থাকবে।
অর্থনৈতিক পালাবদল
করোনা-পরবর্তী বিশ্ব ও আগের বিশ্ব এক হবে না। লকডাউন কতদিন থাকবে কেউ জানে না। লকডাউন হঠাৎ করে উঠবে না। ভ্যাকসিন না ওঠা পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব থাকবেই। কল-কারখানাগুলো খুলে দিলে সামাজিক দূরত্ব রাখতে শ্রমিকের সংখ্যা কমাতে হবে। সামাজিক দূরত্ব রেখে কাজ চালিয়ে নিতে হবে। লকডাউনের কারণে স্বাস্থ্য খাত, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনা ও যানবাহন ছাড়া বাকি সব খাতেই কার্যক্রম থেমে গেছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতি আগের চেয়ে নিম্নমুখী হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনীতির এমন দূরবস্থা কেউ দেখেনি। হয়তো করোনা-পরবর্তী মানবজাতি এমন দুঃসময়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
আইএমএফের মতে, ‘এ বছর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইতালি, স্পেন-সব দেশের জিডিপিই অনেক নিচে থাকবে। ভারত, চীনের জিডিপি জিরোতে না নামলেও থাকবে একদম তলানিতে। ১৯৭৬ সালের পর এবারই চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম হবে।’
প্রযুক্তি ব্যয় হ্রাস
মহামারীর প্রভাব কমাতে বড় কোনো বিনিয়োগের কথা চিন্তা করাই যাচ্ছে না। বর্তমানে জৈব-প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে বৃহত্তম বিনিয়োগ শুরুর সুস্পষ্ট জায়গা। তথাপি করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সময় প্রযুক্তির উৎকর্ষতা যে ভীষণভাবে কাজে আসছে তা মানতেই হবে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে অনলাইন নির্ভরতা বাড়ছে। অনলাইন স্কুলিং বা হোম স্কুলিং, অনলাইন অফিস বা ওয়ার্ক অ্যাট হোম, অনলাইন ব্যাংকিং এবং কেনাকাটা এখন যাপিত জীবনের ভরসা। কারণ একটি দেশ বা জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও অনলাইন নির্ভরতা বাড়ছে ব্যাপক হারে। করোনা-পরবর্তী সময় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবটি হবে এই সময়। অর্থাৎ ডিজিটাল বিপ্লব। তখন কল-কারখানাগুলোতে ব্যাপক হারে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আসবে পরিবর্তন। আগের শিল্প বিপ্লবে দেখা গেছে মানুষ যন্ত্রকে পরিচালনা করেছে।’ তবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিগত দিকে বড় বিনিয়োগ কমে যাবে। ফলে প্রযুক্তিগত ব্যয় হ্রাস পাবে।
বাজার হারাবে উন্নয়নশীল দেশ
করোনা-পরবর্তী সবচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর। অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের বাজার হারাবে। বলা ভালো, বৈশ্বিক রপ্তানিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থান এখন অনেক শক্তিশালী। বৈশ্বিক রপ্তানিতে ২০০০ সালে যেখানে এ দেশগুলোর অবস্থান ছিল শতকরা ২৯ দশমিক ৭ ভাগ, ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ ভাগে, আর ২০১৯ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায় এ অবস্থান শতকরা ৪৪ ভাগ। এতে করোনা-পরবর্তী সময়ে ধস নামবে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা এই দেশগুলোর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ব্যর্থতা, বেকার সমস্যা বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি খাতে ধস উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বড় সংকটের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। যেহেতু এখন থেকেই বৈদেশিক অর্থনীতিতে একটা মন্দাভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।
বিশ্বায়ন যুগের অবসান
করোনাভাইরাস-পরবর্তী দেশে দেশে সরকার, অর্থনীতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে। তবে এটা ঠিক, করোনা-পরবর্তী বিশ্ব আর আগের বিশ্ব এক হবে না। পরিবর্তনটা হবে অস্বাভাবিকভাবে ভিন্ন এবং মৌলিক। নতুন অনেক কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে মানব জাতিকে। কিছু কিছু পরিবর্তন স্থায়ী হয়ে উঠবে। যেমন- ডলার-পাউন্ড পকেটে নিয়ে পণ্য না পাওয়ার অভিজ্ঞতা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক নাগরিকের জন্য জীবনে এই প্রথম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সীমান্ত বন্ধ এবং জরুরি অবস্থার মতো ঘটনা। বিশ্বজুড়ে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছে। অর্থনৈতিক গোলকায়নের জন্য এ রকম অবস্থা দীর্ঘ মেয়াদে বিপর্যয়কর। বড় ধরনের মন্দার মুখে পড়েছে সমগ্র বিশ্ব। রাষ্ট্রগুলো মদদ চাইছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির কাছে।
এত দিনকার ‘সিস্টেম’-এর ত্রুটির দিকে কেউই অঙ্গুলি নির্দেশ করতে চাইছে না। বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য, প্রকৃতি ও পরিবেশকে অগ্রাহ্য করে কেবল পুঁজির স্বার্থ দেখার দীর্ঘ ঐতিহ্য এবার কেবল নৈতিকভাবেই নয়, কার্যকারিতার দিক থেকেও চ্যালেঞ্জে পড়েছে। করোনা নামক অদৃশ্য এই শত্রুর কারণে বিশ্বায়ন যুগের অবসান হতে যাচ্ছে। বিশ্বায়নের কারণে বিশ্ব উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে চলাচলে আরও বিধিনিষেধ আসবে। বিশ্ব আর আগের মতো উন্মুক্ত থাকবে না। ইউরোপ-আমেরিকার মতো মহাদেশের অনেক দেশে ভিনদেশিদের প্রবেশ, বসবাস, চাকরি কিংবা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করবে। মানুষের এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। এতে করে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে বিশ্বায়ন-পরবর্তী যুগে নতুন এক বিশ্বব্যবস্থা। তবে যত যাই হোক, অদ্ভুত এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ।