করোনাকালে ডিজিটাল অধিবেশন করবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত ব্রিটেন। খাবার, জরুরি ওষুধ আর নিতান্ত প্রয়োজনীয় অফিস ছাড়া সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ। এই ক্রান্তিকালে দেশ পরিচালনায় সরকারের ভূমিকা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে সেজন্য প্রয়োজন পার্লামেন্টে আলোচনা সমালোচনা। কিন্তু করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বন্ধ পার্লামেন্ট। এনএইচএসসহ সরকারের নানা ভূমিকার সমালোচনা করে গত সপ্তাহে পার্লামেন্ট খুলে জরুরি আলোচনার প্রস্তাব করে বিরোধী লেবার লিডার কেয়ার স্টারমার। এছাড়া পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের কমিশনও অনুভব করে জরুরি আলোচনার। এরই প্রেক্ষিতে স্পিকারের উপস্থিতিতে ১৭০ জন এমপিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন -উত্তরের ব্যবস্থা করেছে হাউস অব কমন্স।
ব্রিটেনে এখন চলছে স্টর হলি ডে। এই সরকারি ছুটির শেষ হবে আগামী ২১ এপ্রিল। হাউস অব কমন্সের পরিচালনা পরিষদ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ভার্চুয়াল সংসদ করার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করলেও ২১ এপ্রিলের পর এমপিরা যখন ছুটি শেষে ফিরবে তখন তাদের অনুমোদন লাগবে। আর ওই অনুমোদনের পরই ডিজিটাল পার্লামেন্ট অধিবেশন বসবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ইতিহাসে এই প্রথম ডিজিটাল পার্লামেন্ট অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। প্রায় ৭০০ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে ১২০ জন এমপি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে জুম পদ্ধতিতে। আর ৫০ জন এমপি পার্লামেন্ট কক্ষে সোশ্যাল ডিসটেন্স অনুসরণ করে বসবে। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে পারবে। ডিজিটাল পার্লামেন্ট বিষয়ে সব এমপির সবুজ সংকেত পেলেই পার্লামেন্ট কক্ষে বড় ভিডিও স্ক্রিন বসানো হবে।
কমন্সের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েল বলেন, ডিজিটাল এই হাইব্রিড সমাধানটি সংসদ সদস্যকে তার জনগণের নিকটবর্তী হতে এবং কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সরকারকে তাদের তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যেতে সহায়তা করবে। স্যার লিন্ডসে আরো বলেন, ভার্চুয়ালি কাজ করার মাধ্যমে, ঘরে বসে থাকতে, এনএইচএসকে রক্ষা করতে এবং জনগণের জীবন বাঁচানোর দিকনির্দেশনায় এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে অনুসরণ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আরো চার ব্রিটিশ বাংলাদেশীর মৃত্যু
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় তাদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছেন তাদের স্বজনরা। তারপরও অনেকেরই খবর আসছে না সংবাদ মাধ্যমে। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মৃতদের আত্মীয় স্বজন। তারা মৃতদের ছবি কিংবা করোনায় মারা গিয়েছে তা বলতে নারাজ। আপাতত সরকারী সূত্রে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশিত না হলেও স্যোশাল মিডিয়ার পরিসংখ্যানেও রয়েছে মতভেদ। করোনায় মৃতদের তালিকা করারও চেষ্টা করছেন সংবাদকর্মীরা। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৯৭ জন বাংলাদেশী এই মহামারিতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
সর্বশেষ মৃত্যুবরণকারীরা হচ্ছেন
মোঃ শাহজাহান আলী
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে ইন্তেকাল করেছেন আরেক ইতালিয়ান বাংলাদেশী। তিনি লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বেন জনসন রোর্ড এর বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রয়েল লন্ডন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ফেসবুকে তার স্বজনরা জানিয়েছেন মোঃ শাহজাহান আলী, এসেছিলেন ইতালির ভিচেনসা থেকে। তার গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার ডেমরা এলাকায়। তার স্ত্রী ও দুই পুত্র রয়েছে।
আলতু মিয়া
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন কুইন্সপার্ক বাংলাদেশ এসোসিয়েশন এর সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ মুরব্বি আলতু মিয়া। তিনি লন্ডনের কুইন্সপার্কে হ্যারো রোড এলাকার বাসিন্দা। বুধবার পাডিংটন হসপিটালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের ওসমানী নগর থানার উমর পুর ইউনিয়নের হামতন পুর গ্রামে। তার ৬ ছেলে ৩ মেয়ে রয়েছে।
আব্দুস সাত্তার
বিলেতের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী সুমন শরীফের পিতা আব্দুস সাত্তার আনু মিয়া ইন্তেকাল করেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তার গ্রামের বাড়ী মৌলভীবাজার জেলার শমসের নগরের শিংরাউলী গ্রামে। তিনি তার স্ত্রী, এক ছেলে এবং চার কন্যা সহ বহু আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। শুক্রবার বিকাল ৩ টার সময় স্থানীয় গার্ডেন অফ পিস কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হবে বলে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে
সৈয়দ দুলু মিয়া
এদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন লিডস শহরের বাসিন্দা সৈয়দ দুলু মিয়া। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃতুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তার গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর ইশানকোনা গ্রামে।