খেলাপি ঋণে জর্জরিত হওয়ার আশঙ্কা ব্যাংক খাতের

0

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নীতিমালা শিথিল করায় বাড়তি টাকার সরবরাহ এবং সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে খেলাপি ঋণে জর্জারিত হয়ে পড়বে ব্যাংকিং খাত- এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এ জন্য ব্যাংকারদের তেলে মাথায় তেল দেয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ঋণের জোগান দেয়া হলে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় বেড়ে যাবে। ঘুরে দাঁড়াবে দেশের থমকে যাওয়া অর্থনীতি। এ কারণে রাঘববোয়াল, ঋণখেলাপি ও ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগি ঠেকাতে হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি দরকার।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, শুধু ডকুমেন্টই আছে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ঋণ নেয়ার। এর বাইরে বেনামি ঋণ তো তাদের আরো আছে। পাশাপাশি সমাজে কিছু রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি রয়েছেন যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেন না। তাদের কেউ কেউ উচ্চ আদালতে রিট করে বছরের পর বছর ঋণ আটকে রাখেন। বাদ রাখেন নিজেদের নাম ঋণখেলাপিদের খাতা থেকে। সুতরাং, সামনে এসব রাঘববোয়াল, ঋণখেলাপি, উচ্চ আদালতে রিটকারী ও পরিচালকদের ঋণ নেয়া ঠেকাতে না পারলে আমাদের বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে। তিনি বলেন, এ চার ধরনের ঋণগ্রহীতা কোনোভাবেই যাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিতে না পারেন সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও সজাগ থাকতে হবে। তিনি মনে করেন, এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিলিং বেঁধে দেয়া দরকার, যাতে কেউ সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিতে না পারেন। তাহলে প্রান্তিক থেকে বড় সবধরনের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ঋণ পাবেন। দেশ সহসাই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। অন্যথায় দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের সঙ্কট থেকে বের হতে পারবে না।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক আখতার হোসেন সান্নামাত গতকাল জানান, করোনাভাইরাসের কারণে প্রকৃতই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। আর এ দায়িত্ব ব্যাংকারদের। তাদেরকে তেলে মাথার তেল দেয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রণোদনার অর্থ যেন রাঘববোয়ালরা গিলে না খেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, যদি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে ঋণ বিতরণ করতে ব্যাংক ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি ব্যাংকগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে যাবে। ঋণখেলাপি রাঘববোয়ালরা আগের মতো ঋণ নেয়ার সুযোগ পেলে প্রণোদনার অর্থ তাদের পেটেই চলে যাবে। এতে খেলাপি ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়বে ব্যাংকিং খাত। এতে অনেক ব্যাংকারই চাকরি হারাবেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার থেকে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা দেশের স্থিমিত অর্থনীতিকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্যই নেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেবল তাদেরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা করতে হবে। আর এ কাজটি করার দায়িত্ব পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত ও ব্যাংকারদের ওপর। সবারই স্বার্থে সঠিক কাজটিই আমাদের করতে হবে।

করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন নীতিমালা করা হয়েছে। শুধু দুই দফায় নগদ জমার হার (সিআরআর) দেড় শতাংশ কমানোর ফলে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত তহবিল ব্যাংকের হাতে চলে গেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিতে রেপোর সুদহারও দুই দফায় কমানো হয়েছে। একই সাথে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে ঋণ আমানতের অনুপাতও (এডিআর) বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে ১০০ টাকা আমানতের ৮৫ টাকা বিনিয়োগ করতে পারত, এখন তা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত বিনিয়োগ করতে পারবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।

এভাবে একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর তারল্য প্রবাহ বাড়ানো হয়েছে, অপর দিকে এডিআর বাড়িয়ে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকার প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করতে হবে, যার বিনিময়ে ব্যাংকগুলো সুদহারে প্রণোদনা পাবে। অর্থাৎ, চার থেকে সাড়ে চার শতাংশ সুদ সরকার পরিশোধ করবে ব্যাংকগুলোকে। বাকি অর্থেও সাশ্রয়ী হারে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com