ভারতীয় মিডিয়ার সাম্প্রদায়িক মানসিকতা: আইনি প্রতিকার চায় মুসলমানরা

0

অসহানুভূতিশীল সরকার, বৈরী আমলাতন্ত্র, নির্বিবাদী বিরোধী দল ও নির্লজ্জ পক্ষপাতপূর্ণ মিডিয়া কভারেজের প্রেক্ষাপটে ভারতের মুসলিমেরা ন্যায়বিচার ও স্বস্তি পেতে আইনি পথ ধরতে যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সব কোভিড-১৯ শনাক্ত ঘটনার সাথে দিল্লির তাবলিগ জামাতের সম্মেলনের যোগসূত্র রয়েছে। ভারতে এখন পর্যন্ত ৩,৮৮১ জন করোনাভাইরাসের রুগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১১৪ জন। সরকার অভিযোগ করছে যে রাজ্য ও দিল্লিসহ ১৭টি এলাকায় করোনা বিস্তারের পেছনে তাবলিগিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ভারতের ও বিদেশী মিলিয়ে তাবলিগের প্রায় ১৫ শ’ লোককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এছাড়া ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করে সম্মেলনে হাজির হওয়া ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করায় ৯৬০ জন বিদেশীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা নেতা রাজ থ্যাকারে মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে দাবি করেন যে তাবলিগিদেরকে গুলি করা উচিত এবং সরকারের উচিত হবে তাদের করোনা-১৯ চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া।

মিডিয়া উল্লাসে এই ঘটনায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাবলিগের নিজামুদ্দিন সদরদফতরকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের মূলকেন্দ্র হিসেবে প্রচার করে। মিডিয়া ও সরকারপন্থী হিন্দুত্ববাদী অ্যাক্টিভিস্টরা পুরো মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অপবাদ আরোপ করে ভারতের প্রতি তাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সন্ত্রাসী সংযোগ থাকার কথা বলে ৯৬০ বিদেশীর বিরুদ্ধে ভিসার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

প্রজাতান্ত্র টিভির তর্জনগর্জন

বিজেপিপন্থী রিপাবলিক টিভির অর্নব গোস্বামী বজ্রকণ্ঠে বলেন, তারা আমাদের জাতীয় প্রয়াসকে স্রেফ ঠাট্টা করেছে। তারা আমাদের সবাইকে আপস করতে বাধ্য করেছে, যখন আমরা জয়ী হচ্ছিলাম, তখন তারা আমাদের হারিয়ে দিতে সবকিছু করেছে। তারা লকডাউনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে, লকডাউন প্রত্যাখ্যান করতে সম্ভব সব উপায় অনুসরণ করতে তাদের অনুসারীদের বলেছে।

তিনি তারা বলতে বুঝিয়েছেন মুসলিমদেরকে। দি প্রিন্টের মতে একজন প্রখ্যাত অ্যাঙ্কর দাবি করেছেন যে জামাতিরা বাসে থুতু ছড়াচ্ছে, অন্য লোকদের আক্রান্ত করার জন্য পরিকল্পিতভাবেই কাজটি করেছে। এমনকি সরকারি অভিযোগ বলা হয় যে হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন তাবলিগি উলঙ্গ হয়ে ঘোরাফেরা করছে। অথচ তাবলিগের বিশুদ্ধবাদী অবস্থানের কারণে এমনটা হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। 

টাইম নাওয়ের বিরুদ্ধে মামলা

www.livelaw.in -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাবলিগি জামাতের সদস্য হাফিজউল্লাহ খান মানহানিকর ও সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ ও এমনকি সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য বেনেট কোলম্যান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের (তারাই টাইম অব ইন্ডিয়া ও টাইমস নাও টিভি চ্যানেলের মালিক) বিরুদ্ধে ১০ কোটি রুপির মামলা দায়ের করেছেন।

গত ১ এপ্রিল ‘তাবলিগি জামাতের সাথে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সম্পর্ক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয় যে পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন হারকত-উল-মুজাহিদিনের সাথে তাবলিগি জামাতের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক রয়েছে। এতে আরো বলা হয়, হারকতের প্রতিষ্ঠাদের একজন ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করেছিলেন। তিনি ছিলেন তাবলিগ জামাতের সদস্য।

এছাড়া আরো কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগও আনা হয় তাবলিগের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বাদি হাফিজউল্লাহ খান বলেন, তাবলিগ জামাত একটি অরাজনৈতিক সামাজিক-ধর্মীয় সংগঠন। সারা বিশ্বে মুসলিমদের মধ্যে ইসলামী মৌলিক ধ্যান-ধারনা প্রচার এবং মুসলিমদেরকে সৎ, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করছেন তারা।

ফলে তাবলিগ জামাতের কর্মকাণ্ডের সাথে সন্ত্রাসী সংযোগের খবরটি ভ্রান্ত, বিদ্বেষপূর্ণ ও ভিত্তিহীন। তাবলিগ জামাত কেবল কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পর্কই রাখে না তা নয়, সেইসাথে সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে দ্বিধাহীনভাবে নিন্দা করে।

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ

ইসলামি বিশেষজ্ঞদের সংগঠন জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দ নিজামুদ্দিনের তাবলিগ জামাতের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ খবর প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়েছে।

www.livelaw.in -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্জিতে বলা হয় যে মিডিয়ার একটি অংশ ভারতে করোনাভাইরাস পরিকল্পিতভাবে ছড়ানোর জন্য পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে দানবীয়ভাবে তুলে ধরা ও দায় চাপানোর জন্য সাম্প্রদায়িতকতাপূর্ণ শিরোনাম ও গোঁড়ামিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করছে।

এতে বলা হয়, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক মিডিয়ার একটি অংশ কোভিড-১৯ মহামারি বিস্তারের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক রং লাগাচ্ছে এবং মুসলিমদের জীবন ও স্বাধীনতার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। এটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এর পরিপন্থী।

এতে উল্লেখ করা হয় যে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রণীত। আর যখন কোভিড-১৯ মোকাবেলার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন, তখন বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

অ্যাডভোকেট ইজাজ মকবুলের মাধ্যমে দায়ের করা আবেদনে জোর দিয়ে বলা হয় যে সরকার, বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয় আইনের চোখে সবার সমানভাবে সুরক্ষা প্রদানের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়, মিডিয়া সাংবাদিকতার সব রীতিনীতি লঙ্ঘন করে মুসলিমদেরকে টার্গেট করার জন্য ‘ডগ হুইসেল কৌশল’ গ্রহণ করেছে।

আবেদনে এসব মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com