যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দিয়েই ইয়েমেনে ব্যাপক সৌদি হামলার নেপথ্য কারণ
সৌদি আরব ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেই চলেছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র তুর্কি আল মালিকি গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন এটি নবায়ন করারও সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু ওই ঘোষণার পর পাঁচদিন অতিক্রান্ত হলেও সৌদি আগ্রাসন তো থামেনি বরং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে হামলা জোরদার হয়েছে। ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেছেন, সৌদি আরব গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরের দিন শুক্রবার একদিনেই ৯৯বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। বেশিরভাগ হামলা হয়েছে আল জোফ, মাআরিব ও বিজা প্রদেশে। এসব হামলা থেকে বোঝা যায়, ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধের কোনো ইচ্ছা তো সৌদি আরবের নেই বরং তারা মিথ্যা ও লোক দেখানো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে অন্য কোনো লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করছে।
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে সৌদি আরব এমন সব জায়গায় হামলা চালাচ্ছে যেখানে মাত্র কয়েক মাস আগেও তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী আনসারুল্লাহ বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পরাজিত হয়ে সৌদি ভাড়াটে সেনারা ওই অঞ্চল ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। গত মাসে আল জোফ প্রদেশের কেন্দ্রীয় আল হাজাম শহরটির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় ইয়েমেনের সেনারা। আল জোফ ইয়েমেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদেশ এবং ‘রাবে আল খালি’ মরুভূমি এর খুব কাছেই অবস্থানের কারণে ইয়েমেন যুদ্ধের কৌশলগত দিক দিয়ে এ প্রদেশটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা আনসারুল্লাহ বাহিনী ওই মরু এলাকা পার হয়ে সহজে সৌদি ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারবে। এ ছাড়া, ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলীয় আল মোহরে প্রদেশে অবস্থিত সৌদি বিরোধী বেশ কিছু উপজাতি গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তোলাও ইয়েমেনিদের জন্য সহজ হবে।
প্রকৃতপক্ষে, ইয়েমেনি যোদ্ধারা আল হাজাম শহর পুনরুদ্ধার করায় এখন সৌদি সীমান্তের কাছে অবস্থান নেয়া কিংবা সৌদির অভ্যন্তরে প্রবেশ করাটা তাদের জন্য আরো সহজ হয়ে গেল। তাই সৌদি আরব খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট যুদ্ধবিরতির আড়ালে ফের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ আল জোফ প্রদেশ দখল করে নেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ইয়েমেনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ হচ্ছে মাআরিব প্রদেশ। কারণ ইয়েমেনের গ্যাস ও তেল কুপের একটি অংশ রয়েছে এ প্রদেশে এবং এখান থকে অন্যান্য প্রদেশে তেল ও গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপ লাইন রয়েছে।
মাআরিব প্রদেশের পাশেই রয়েছে রাজধানী সানা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানিসমৃদ্ধ মাআরিবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ কারণে সৌদি আরব ইয়েমেনকে অচল করে দেয়ার জন্য যেকোনো মূল্যে মাআরিব প্রদেশ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে যাতে অর্থনৈতিক সংকট ও তীব্র জ্বালানির অভাবে ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ সরকার সৌদি আরবের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।
সৌদি আরব গত কয়েক দিনে ইয়েমেনের বিজা প্রদেশের কেন্দ্রীয় শহরেও ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ উত্তর ও দক্ষিণের আটটি প্রদেশকে সংযুক্ত করেছে এ প্রদেশটি। এ কারণে এর ভৌগোলিক গুরুত্ব অনেক বেশী। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মাআরিব প্রদেশ ইয়েমেনের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আল জোফ ও মাআরিব প্রদেশে প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সেনারা ওই দুই প্রদেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাই বর্তমানে সৌদি আরব লোক দেখানো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে ইয়েমেনের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রদেশগুলো আবারো দখল করার চেষ্টা করছে।
তবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সৌদি আরব ফের ব্যর্থ হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। সৌদি আরব সম্প্রতি যে হামলা চালাচ্ছে তাতে কেবল ইয়েমেনের নিরীহ মানুষজন মারা যাওয়া ছাড়া রিয়াদের আর কোনো লাভ হয়নি।