তেল নিয়ে সৌদি আরব-রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র লড়াই

0

যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের সাথে কথা বলে এনার্জি মার্কেটকে আরো কার্যকর করার প্রচেষ্টা নিতে বলেছেন। চলমান তেলের নিম্নমূল্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের বেশি তেল উৎপাদনের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট, এতে রাাশিয়া চাপের মুখে থাকবে। ট্রাম্প বিন সালমানকে বলেছেন, তেলের দাম নিচে রাখায় রাশিয়া সঙ্কটে পড়বে তবে দাম যেন এত নিচে না নামে যাতে আমেরিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তেলের কম দাম ট্রাম্পের নির্বাচনী দৌড়ে ভালো কাজ করছে। করোনার কারণে ট্রাম্প যতটুকু খারাপ ইমেজ সঙ্কটে পড়েছেন, তেলের দাম কমে সমাজে ততটাই স্বস্তি ফিরেছে মনে করা হয়। জনগণকে বোঝানো হয়েছে কম দামে তেল কিনে একটা বড় রিজার্ভ গড়ে তুলবে যুক্তরাষ্ট্র। ১৩ মার্চ ট্রাম্প বলেছেন, ‘সেক্রেটারি অব এনার্জিকে বিপুল তেল কম দামে কিনে রিজার্ভে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ রিজার্ভ গড়ে তুললে দীর্ঘ সময়ের জন্য আমেরিকানরা কম দামে তেল ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।

এ পদক্ষেপ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে ট্রাম্পের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ওপেক প্লাস সংগঠনের দুই উদ্যোগী দেশ সৌদি আরব ও রাশিয়া এখন তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তেলের বিষয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছে না। তেলের দাম প্রতিযোগিতামূলকভাবে কমে যাওয়ার ট্রাম্প আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া রাশিয়ার অর্থনীতিতে তেলের দাম আঘাত করছে বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর অনেকটা খুশি। তবে সৌদি আরবের জন্য বিষয়টি তেমন ভালো নয়। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সঠিক সময়ে যুদ্ধের ময়দানে নেমেছি।’ তবে ১৩ জন রিপাবলিকান সিনেটর বিন সালমানের কাছে চিঠি দিয়েছেন এই মর্মে যে, আরামকো যেন তেল উৎপাদন করে বিশ্ববাজার সয়লাব করে না দেয়। সিনেটররা লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সারা বিশ্ব, সৌদি আরবও কোভিড-১৯ মহামারীর সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এমন একসময়ে তেলের কোনো যুদ্ধ চাই না।’ সৌদি আরবের উচিত বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে কোনো ধাক্কা যেন লা লাগে সে দিকে লক্ষ রাখা।

কংগ্রেস সদস্যরা সৌদি আরবের সাথে আরো বেশি রাজনৈতিক আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন সৌদি-রাশিয়ার সঙ্ঘাতে আমেরিকার তেল ইন্ডাস্ট্রিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা চলতে থাকলে যেসব আমেরিকান কোম্পানি উচ্চমূল্যে তেল উৎপাদন করে তারা দেউলিয়া হতে পারে। এটা প্রতিরোধ করার জন্য প্রতি ব্যারেলের দাম ৭০ ডলার রাখা উচিত। অথচ এখন বড় বড় সরবরাহকারীরা ১৫ বা ১০ ডলার করে দাম রেখে তেলের বাজার লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। সৌদি আরামকো ঘোষণা দিয়েছে, ইউরোপীয় ক্রেতাদের এই এপ্রিলে প্রতি ব্যারেল ১৫ ডলার করে তেল বিক্রি করা হবে, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অনুরোধ সৌদিরা রাখছেন না।

সৌদি আরবের সাথে মার্কিনিদের সম্পর্ক ৮০ বছর গড়াল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ১৯৪৫ সালে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা কিং আবদুল আজিজ বিন সৌদের সময় এই সুসম্পর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। বিভিন্ন চড়াই উতরাইয়ের মাঝ দিয়ে এই সম্পর্ক আজো চলছে। সৌদি আরব বিশ্বের বড় তেল সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র বড় ভোক্তা হলেও আজ শুধু সৌদি তেলের ওপর নির্ভরশীল নয়।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব থেকে প্রতিদিন আমদানি করেছে ২.৬৬ মিলিয়ন ব্যারেল; ২০১৮ সালে নেমে ১.৪৭ মিলিয়ন ব্যারেলে আসে। যুক্তরাষ্ট্র মূলত তখন সাবধান ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এমন একসময়ে ঘণ্টা বাজায় যখন যুবরাজ বিন সালমান শক্ত হাতে সৌদি আরবের ক্ষমতা গ্রহণের কলকাঠি নাড়া শুরু করেন। এখন নিরাপত্তার জন্য তেল পলিসি আর কাজ করছে না। সৌদি আরব একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে এক দাবার ঘুঁটিতে শিক্ষা দিয়ে দিলো। যুবরাজ যে দাম কমিয়ে গেম খেলবেন তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অভাবনীয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে বা চাপে সৌদি আরব বা রাশিয়া আদৌ মূল্য ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করছে না। এই যুদ্ধে বিশ্ব তেলবাজার নিয়ন্ত্রণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া তেলের ময়দানে আরো দেশ ও নিয়ামক কাজ করছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com