ট্রাম্পের হুমকিতে ওষুধ রফতানির উপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

0

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার একটি নিরীক্ষামূলক ওষুধসহ কিছু ওষুধ রফতানির উপর ভারত যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পর ভারত সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, নয়াদিল্লী যদি ম্যালেরিয়ার ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে রফতানি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে টেলিফোনে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত বদলায় ভারত। এই টেলিফোন আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তিনি অবাক হবেন যদি নয়াদিল্লী তার অনুরোধ না রাখে, কারণ ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক রয়েছে।

ট্রাম্প সোমবার বলেন, “রোববার সকালে আমি তার সাথে কথা বলেছি। তাকে ফোন করে বলেছি, “আপনি যদি আমাদের সরবরাহটা আসার অনুমতি দেন, তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাবো’। কিন্তু তিনি যদি এটা আসতে না দেন, সেটা তাদের ব্যাপারে, তবে অবশ্যই এর প্রতিশোধ হতে পারে। কেন হবে না? যদি তিনি এটা করেন, তাহলে আমি খুবই অবাক হবো, কারণ ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে”।

বিশ্বের ফার্মাসি খ্যাত ভারত ৪ এপ্রিল এই ওষুধের রফতানি নিষিদ্ধ করে, কারণ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ প্রায় এক শতাব্দি আগে উদ্ভাবিত এই ম্যালেরিয়ার ওষুধ জমিয়ে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে নিরীক্ষামূলক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছে। সারা বিশ্বে এই রোগে মৃতের সংখ্যা ৭৫,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এই ওষুধটি রিউমেটিক আর্থ্রাইটিসসহ আরও কিছু রোগের চিকিৎসাতেও ব্যবহার করা হয়।

ট্রাম্প বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষে এই ওষুধ ব্যবহার করতে পারে। গত সপ্তাহে তিনি এই ওষুধকে ‘বিশেষ বস্তু’ এবং ‘খেলা বদলকারী’ হিসেবে মন্তব্য করেন।

তবে, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় এই ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করে এসেছেন।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প মোদির প্রতি জোর দাবি জানান যাতে তিনি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের রফতানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আগে যে অর্ডারগুলো দিয়েছিল, সেগুলো যাতে সরবরাহ করে।

গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যাও বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই সংখ্যা সেখানে ৩৬০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সংহতি জানানোর বহিপ্রকাশ হিসেবে ভারত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রফতানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, “মহামারীর মানবিক দিকটি বিবেচনা করে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ভারত প্যারাসিটামল ও এইচসিকিউকে যথাযথ পরিমাণে আমাদের সকল প্রতিবেশী দেশগুলোকে দেবে, যারা আমাদের ওষুধের উপর নির্ভরশীল”।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমরা এই জরুরি ওষুধটি আরও কিছু দেশের কাছে সরবরাহ করবো যারা এই মহামারীর দ্বারা বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয়েছে। সে কারণে আমরা চাইবো, এই বিষয়টি নিয়ে যাতে কোন রাজনীতিকীকরণ করা না হয়”।

শ্রীবাস্তব বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ওষুধের মজুদ রয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য ভারতজুড়ে ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন চলছে।

নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার যৌক্তিকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটি দায়িত্বশীল সরকার হিসেবে আমাদের প্রথম বাধ্যবাধকতা হলো এটা নিশ্চিত করা যে, আমাদের নিজেদের জনগণের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। সেটা নিশ্চিত করার জন্য কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের রফতানি বন্ধ রাখার সাময়িক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল”।

মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা আল জাজিরাকে বলেছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুমকি দেয়ার পরেই কেবল সরকার ওষুধের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।

ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

পিপল’স হেলথ মুভমেন্টের ড. টি সুন্দ্রামান উল্লেখ করেছেন যে, ভারত সরকারের ওষুধ রফতানির নীতিমালার মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে এবং এটা স্পষ্ট নয় যে, নিজেদের চাহিদা পূরণের মতো ওষুধের মজুদ ভারতের কাছে আদৌ আছে কি না।

সুন্দ্রামান বলেন, “আমাদের এটা নিশ্চিত করা উচিত যে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো এই চাহিদা মেটাতে সক্ষম, যেটা এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে না আমাদের দেশের জরুরি সরবরাহগুলোকে আটকে দেয়া। এমন খবর শোনা গেছে যে, ভেন্টিলেটর বা বিভিন্ন টেস্টিং কিটের ক্ষেত্রে তারা সেটা করছে। সেটাও নিশ্চিত করা উচিত”।

এদিকে, ভারতের বিরোধী দলগুলো মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকার করছে।

ট্রাম্পের হুমকি সম্পর্কে ভারতের কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এক টুইটে বলেছেন: “বন্ধুত্বের সাথে প্রতিশোধের বিষয় থাকে না। অন্যান্য দেশের প্রয়োজনের সময় ভারত অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করবে কিন্তু ভারতীয়দের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ আছে কি না, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে”।

কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সিতারাম বেচুরি এক টুইটে বলেছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য ‘গ্রহণযোগ্য নয়’.. “রফতানির অনুমতি দিয়ে মোদি সরকার হুমকির সামনে নতি স্বীকার করেছে”।

কংগ্রেস নেতা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনিষ তেওয়ারি আল জাজিরাকে বলেন যে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পের মন্তব্যের বাইরে নিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

তেওয়ারি বলেছেন, “তার প্রতিশোধের হুমকিটা প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে তার ব্যক্তিগত বিষয়। প্রধানমন্ত্রী মোদি ট্রাম্পের জন্য আগ বাড়িয়ে অনেক কিছু করেছেন এবং আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে বহু মানুষকে জড়ো করেছিলেন, যখন কোভিড-১৯ মাথার উপরে খুব কাছাকাছিই ঝুলছিল”।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com