নেপালে কোভিড-১৯ যুদ্ধ: লকডাউনে গরিবদের ভয়াবহ ক্ষতি
করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তার রোধ করতে নেপাল সরকার সোমবার চলমান দেশব্যাপী লকডাউন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ছে।
সারা বিশ্বই করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের আশ্রয় নিচ্ছে, নেপালও সেটা অনুসরণ করেছে।
রোগটি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায়, সেজন্য নেপাল সরকার প্রথমে ২৪ মার্চ সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছিল। নেপালে এই রোগে ৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
দেশটির এক সময়ের সদা-ব্যস্ত স্থানগুলো জনহীন, প্রায় সব দোকানে শাটার লাগানো, সীমান্ত বন্ধ, লোকজনকে নিত্যপণ্য কেনা ছাড়া বাকি সময় ঘরের ভেতরে থাকতে বলা হয়েছে।
পরিবহনের গতি স্তব্ধ করে দেয়ার মানে হলো অভিবাসী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার সময় না দেয়া। প্রায় ৫০০ নেপালি শ্রমিক ভারত সীমান্তের দারচুলায় আটকে পড়ে আছে। তারা চলমান লকডাউনে আশ্রয়হীন, চাকরিহীন হয়ে বাড়ি ফিরতে মরিয়া। সারা দেশে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নেপালি অভিবাসী শ্রমিকেরা হঠাৎ করেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
আর ভারতে কাজ করে এমন নেপালি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। একদিকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাদের আয় নিঃশেষ হয়ে গেছে, অন্যদিকে তারা স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরতে পারছে না।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু অভিবাসী শ্রমিক মহাকালি নদী সাঁতার কেটে পাড়ি দিয়ে ভারত থেকে নেপালে এসেছে। কিন্তু নেপালে পৌঁছামাত্র পুলিশ তাদের আটক করেছে। কয়েক দিন ধরে ৫০০ নেপালি অভিবাসী সীমান্তে আটকা পড়ে আছে।
প্রাণঘাতী ভাইরাসের গতি বাড়ার ফলে অনেকে নেপালের প্রধান প্রধান নগরী থেকে তাদের বাড়ি চলে গেছে। লকডাউনের কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় তারা হেঁটেই পথ পাড়ি দিচ্ছে।
শচিন পণ্ডিত নামের এক লোক বলেন, তিনি ১৮ ঘণ্টা হেঁটে বাড়ি গেছেন। কাঠমান্ডুতে কয়েক দিন আটকে থাকার পর তিনি হেঁটেই সিন্ধুলিতে তার গ্রামে ফিরে যান। তিনি বলেন, কয়েক দিন বন্ধুর বাড়ি ছিলাম। কিন্তু টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় আমাকে বাড়ি রওনা দিতেই হয়েছে।
সম্প্রতি আটকে পড়া কয়েকজন ট্রেকারকে ট্রেকিং ট্রায়াল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারের লকডাউন ঘোষণার পর অনেক পর্যটক আটকা পড়ে আছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের অবস্থান হওয়ায় প্রতি বছর হাজার হাজার বিদেশী নেপাল সফর করে।
দেশব্যাপী লকডাউনের কবলে পড়া লোকজনের মধ্যে গরিবরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা দিনমজুর, তাদের জন্য লকডাউন একটি বড় ধরনের আঘাত।
ট্যাক্সিচালক বিনোদ তামাঙ বলেন, লোকজন ভাইরাসের ভয় পাচ্ছে, কিন্তু আমি এখন ভয় পাচ্ছি, ক্ষুধায় মারা যাব। তিনি কাজের সন্ধানে তিন বছর আগে কাঠমান্ডুতে আসেন। তিনি লকডাউনের ফলে গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন। তবে পারছেন না। তিনি তার পরিবার নিয়ে খুবই চিন্তিত।
লোকজনকে দীর্ঘ সময় ধরে খাবার ও কাজ থেকে বিরত রাখা হলে যে মরিয়া অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, সেটিই আশঙ্কার কথা। রোববার সরকার কিছু ত্রাণ প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছে, দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যে লোকজনকে সহায়তা করার জন্য কিছু সহায়তামূক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছে। এসব পদক্ষেপ কতটা যথেষ্ট ছিল, তা সময়ই বলে দেবে।
প্রতিটি ধনী দেশ কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এই ভাইরাস নেপালে তাণ্ডব শুরু করলে বিপুলসংখ্যক লোকের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে।
পাশ্চাত্যের ওইসব দেশের তুলনায় নেপালের স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাত আগে থেকেই দুর্বল। পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়লে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থার ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি হবে। বিপর্যয়কর ভাইরাসটি ঠেকাতে নেপাল বিপুল চেষ্টা চালাচ্ছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরো আগে ঘোষণা করা হলে ভাইরাসটির বিস্তার রোধ অনেক বেশি কার্যকর হতো বলে অনেকে মনে করেন। সরকারের উচিত হবে আরো দেরি হওয়ার আগেই সম্ভাব্য বিস্তার ঠেকাতে আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা।