মৃত্যুপুরী যুক্তরাষ্ট্র, ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৯৭০ জনের প্রাণহানি
মহামারী করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে অবহেলা করায় এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি।
দিন দিন অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে। ক্রমাগত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানানো আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১ হাজার ৯৭০ জন, যা এখন পর্যন্ত একদিনে বিশ্বের কোনো দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৪১ জন। এর মধ্যে শুধু নিউইয়র্কেই মারা গেছে ৫ হাজার ৪৮৯ জন।
এদিকে আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে গেছে সবাইকেই। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৩৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৩১ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২১ হাজার ৬৭৪ জন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮২০ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫১ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। বাকি ৯ হাজার ১৬৯ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিইউতে রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্কে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩১ জনসহ এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ হাজার ৪৮৯ জন। এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৪৬৮ জনসহ আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৪ জন। এ ছাড়া নগরীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথমবারের মতো ১৮ বছর বয়সের নিচে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে অন্য আরও রোগ ছিল।
দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফসি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে। এর পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন। এদিকে চীন থেকে জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তিন মাস ছাড়িয়েছে। এখনও নিয়ন্ত্রণের লক্ষণ খুব একটা দৃশ্যমান নয়। করোনায় বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ৭ হাজার ৩৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এ যাবৎ বিশ্বজুড়ে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ২৫ জন।
এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৪ হাজার ৫৫৪ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৪ লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ৯৪০ জন।
ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৮৪১ জনের। ইতালিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৬ জন আক্রান্ত, বিপরীতে মারা গেছে ১৭ হাজার ১২৭ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে।
এ ছাড়া স্পেনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪২ জন আক্রান্ত, আর ১৪ হাজার ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৬৩ জন আক্রান্ত, ২ হাজার ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনে আক্রান্ত ৮১ হাজার ৮০২, মারা গেছে ৩ হাজার ৩৩৩ জন। ফ্রান্সে আক্রান্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯, মারা গেছে ১০ হাজার ৩২৮ জন। ইরানে আক্রান্ত ৬২ হাজার ৫৮৯, মারা গেছে ৩ হাজার ৮৭২ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৫৫ হাজার ২৪২, মারা গেছে ৬ হাজার ১৫৯ জন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত ২২ হাজার ১৯৪, মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৩৫ জনের। নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ১৯ হাজার ৫৮০, মারা গেছে ২ হাজার ১০১ জন।
এ ছাড়া ভারতে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩১১ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ গেছে ১৫০ জনের। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৫৭ জন মারা গেছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৬৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রাণ গেছে ১৭ জনের।এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলাব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।