করোনায় বদলে যাবে যে অভ্যাস
‘এই অবস্থার পরে (করোনা পরিস্থিতি) আমি আর আমার জীবনে হাই-ফাইভ করব না।’
লেবরন জেমস, বাস্কেটবল, যুক্তরাষ্ট্র
করোনার কারণে বদলে যাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনে চিরচেনা কিছু দৃশ্য! বদলাতে হচ্ছে খেলোয়াড়দের কিছু অভ্যাস। ক্রিকেটে যেমন ফাস্ট বোলারদের জন্য বোলিংয়ে সুইং আনতে থুথু দিয়ে প্যান্টে ঘষে বলটা শাইন করে দেন সতীর্থরা। টেনিসে ঘাম মুছে তোয়ালে ছুঁড়ে দেওয়া হয় বল বয় অথবা গার্লদের কাছে। ফুটবলে খেলা শুরু আগে মাঠে উভয় দলের খেলোয়াড়রা একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান। করোনার পর আর দেখা যাবে না এসব কিছু।
ক্রিকেটের ইতিহাসে ফাস্ট বোলারদের জন্য থুথু দিয়ে বলের এক পাশ ঘষে শাইন করাটা প্রথায় পরিণত হয়েছিল। এতে করে বলে দারুণ সুইং হতো। উইকেট পাওয়া যেত সহজে। কিন্তু করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে এই অভ্যাসটা হয়ত আর দেখা যাবে না। কারণ, থুথু থেকে ছড়াতে পারে ভাইরাস। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স এএফপিকে বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে এটা সত্যিই খুব কঠিন হবে যদি আমরা বল শাইন করতে না পারি। অবস্থা এতোটা খারাপ হলে আর আমরা এতোটা ভয়ের মধ্যে থাকলে খেলব কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না।’
টেনিসে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে সার্ভ করার আগে প্লেয়াররা সাধারণত বল বয়/গার্লদের কাছ থেকে তোয়ালে চেয়ে নেন। ঘাম মুছে আবার তাদের দিকেই ছুঁড়ে দেন। এমনকি রক্ত এবং অশ্রু মুছতেও তোয়ালে ব্যবহার করেন টেনিস প্লেয়াররা। গত মাসে জাপান ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ডেভিস কাপের ম্যাচে বল বয়দেরকে গ্লাভস পড়তে দেখা যায়। তোয়ালে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় ঝুড়ি। অবশ্য ২০১৮ সালেই তোয়ালে রাখার জন্য ঝুড়ির ব্যবস্থা করেছিল এটিপি কর্তৃপক্ষ। সেসময় তা তেমন কেউই পছন্দ করেনি। তবে এখন বাধ্য হয়েই ঝুড়ি ব্যবহার করতে হবে টেনিস প্লেয়ারদের। গ্রিক তরুণ তারকা স্টেফানোস তিতসিপাস অবশ্য এখনো বল বয়দের কাছ থেকেই তোয়ালে পাওয়ার পক্ষপাতি। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনমতো তোয়ালে পাওয়াটা খুব জরুরি। আমার কাছে মনে হয় তোয়ালে দেওয়াটা বল বয়দের কাজ।’
ফুটবল এবং বাস্কেটবলে ম্যাচ শুরুর আগে হ্যান্ডশেক করার অভ্যাসটা বহুদিনের। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন লিগ বন্ধ হওয়ার আগেই হ্যান্ডশেক নিষিদ্ধ করা হয়। এসময় কেবল প্রতিপক্ষের সামনে দিয়ে হেঁটে কুশল বিনিময় করেন প্লেয়াররা। কিন্তু করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে হ্যান্ডশেক করার অভ্যাসটা হয়ত বদলে যেতে পারে ফুটবল ও বাস্কেটবলে। বিখ্যাত এনবিএ তারকা লেবরন জেমস বলেন, ‘এই অবস্থার পরে (করোনা পরিস্থিতি) আমি আর আমার জীবনে হাই-ফাইভ করব না।’ এমনকি অটোগ্রাফের জন্য বল আর শার্ট নেওয়ারও বিরোধী তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপজয়ী নারী ফুটবলার মেগান র্যাপিনো বলেন, ‘আমরা তো ম্যাচজুড়েই ঘর্মাক্ত শরীরে একে-অপরের সংস্পর্শে আসি। ম্যাচের আগে হাত না মেলানোতে কিই বা হবে!’
বিতর্ক কিছুটা তো থাকবেই। কিন্তু করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন ইভেন্ট বন্ধ হওয়ার আগেই সেসব পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে এই পরিবর্তন কতোটা ইতিবাচক হবে তা কেবল সময়ই বলতে পারে!
‘আমরা তো ম্যাচজুড়েই ঘর্মাক্ত শরীরে একে-অপরের সংস্পর্শে আসি। ম্যাচের আগে হাত না মেলানোতে কিই বা হবে!’
মেগান র্যাপিনো, নারী ফুটবলার, যুক্তরাষ্ট্র।
‘টেস্ট ক্রিকেটে এটা সত্যিই খুব কঠিন হবে যদি আমরা বল শাইন করতে না পারি। অবস্থা এতোটা খারাপ হলে আর আমরা এতোটা ভয়ের মধ্যে থাকলে খেলব কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না।’
প্যাট কামিন্স, পেসার, অস্ট্রেলিয়া
‘প্রয়োজনমতো তোয়ালে পাওয়াটা খুব জরুরি। আমার কাছে মনে হয় তোয়ালে দেওয়াটা বল বয়দের কাজ।’
স্টেফানোস তিতসিপাস, টেনিস খেলোয়াড়, গ্রিস।
যা আর দেখা যাবে না
♦ থুথু দিয়ে ক্রিকেট বল ঘষে শাইন করা।
♦ টেনিসে ঘাম মুছে বল বয়/গার্লদের দিকে তোয়ালে ছুঁড়ে দেওয়া
♦ ফুটবলে ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলানো।