করোনার অর্থনৈতিক বিপর্যয় ভোগাবে কয়েক প্রজন্মকে: ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিবন্ধ

0

কোভিড-১৯ মহামারী তাণ্ডবের ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বালজের যুদ্ধে ৮৪তম পদাতিক সৈনিক হিসেবে যুবক বয়সে আমার অংশগ্রহণ। তখন ১৯৯৪ সালের শেষভাগ। বিশ্বে সে সময় অপরিণত বিপদের ছড়াছড়ি, যার লক্ষ্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি নয়, বরং আঘাত হানছে এলোপাতাড়ি এবং সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।

তবে তখনকার এবং এখনকার সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যখন করোনাভাইরাস মহামারী শেষ হবে তখন বহু দেশের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়বে। বাস্তবতা হল-করোনার তাণ্ডবের পর বিশ্ব আর আগের রূপে থাকবে না। পুরো বিশ্ব-শৃঙ্খল পাল্টে দেবে এ ভাইরাস। এখন অতীত নিয়ে বিতর্ক করলে আগামীতে আমাদের কী করার প্রয়োজন রয়েছে, তা থেকে পিছিয়ে যাব।

নজিরবিহীন মাত্রা ও ক্ষিপ্রতায় সারা বিশ্বে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচ দিনে দ্বিগুণ হারে সংক্রমিত হচ্ছে। এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত (৩ এপ্রিল) করোনার কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। করোনা সংক্রমণের সুনামি প্রতিরোধে মেডিকেল সরঞ্জাম খুবই সীমিত। নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলো (আইসিইউ) কানায় কানায় পূর্ণ। চিকিৎসকরা হতবিহ্বল। সংক্রমণের মাত্রা নিরূপণে পরীক্ষার হার খুবই সীমিত। একটি সফল প্রতিষেধক তৈরিতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে। করোনা মহামারীর তাৎক্ষণিক বিপর্যয় এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন দারুণ কাজ করেছে। একমাত্র পরীক্ষাই পারে এ ভাইরাস সংক্রমণকে আটকাতে। এ সংকট পুরোপুরি কাটাতে তাদের আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য শুধু আমেরিকানদেরই নয়, গোটা বিশ্বের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে হবে তাদের।

এ সংকটকে জাতীয়তার ভিত্তিতেই মোকাবেলা করতে হবে বিশ্বনেতাদের। ভাইরাসের সমাজ ভেঙে দেয়া প্রভাব কখনও কোনো সীমান্তকে স্বীকৃতি দেয় না, কোনো সীমান্ত মানে না। যদিও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর করোনাভাইরাসের হামলা সাময়িক, কিন্তু এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় কয়েক প্রজন্ম ধরেই ভোগ করতে হবে। এককভাবে কোনো দেশ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের জাতীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে পারবে না। এই মুহূর্তে সব দেশের সমন্বিত পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নই এ সংকট মোকাবেলায় একমাত্র সহায়ক হতে পারে। যদি আমরা করোনা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হই, প্রত্যেকেই এর ক্ষতির মুখে পড়ব।

বৈশ্বিক এই সংকট কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রকেই নেতৃত্বের আসনে থেকে তিনটি মার্শাল পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রথমত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থামাতে হবে। এর আগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিজয় যেমন পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার, গুটিবসন্ত নির্মূল অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মেডিকেল চিকিৎসার কৌশল উদ্ভাবন আমাদের বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে। এই বিজয় থেকে করোনা সংক্রমণ রোধে নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হবে। এরপর সেগুলো বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব শহর, অঙ্গরাজ্য ও অঞ্চলকে, তাদের জনগণ যেন পণ্য মজুদ করতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সবশেষ, করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে তুলতে হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের পক্ষেও একা সম্ভব নয়, বৈশ্বিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট থেকে বিশ্বনেতাদের শিক্ষা নিতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com