বিশ্ব অর্থনীতির ৪.১ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হবে, এডিবির হুঁশিয়ারি
খুব দ্রুত বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে কোভিড ১৯ মহামারী। সর্বত্র বন্ধ রয়েছে কলকারখানা। এর ফলে বিশ্বে সব ধরনের আর্থিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পেতে পারে পাঁচ শতাংশ। শুক্রবার এমনই ভবিষ্যৎবাণী করল এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্ব অর্থনীতিতে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হতে চলেছে, তার একটা হিসাবও করেছে এডিবি। ওই সংস্থার মতে, করোনা মহামারীর ফলে বিশ্ব জুড়ে যে পরিমাণে ক্ষতি হবে, তার পরিমাণ ৪.১ ট্রিলিয়ন ডলার (প্রায়৩০৫ লক্ষ কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এডিবির রিপোর্টে আরো বলা হয় যে, রোগটি দ্রুত দমন করা গেলেও ক্ষতি ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কম হবে না, যা বিশ্ব জিডিপি’র ২.৩ শতাংশের সমান।
এডিবি বলে, ২০১৯ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির বিকাশ হয়েছিল ৫.২ শতাংশ হারে। কিন্তু ২০২০ সালে বিকাশের হার কমে সম্ভবত ২.২ শতাংশে দাঁড়াবে।
এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাণিজ্যিক কাজকর্ম কমে গিয়েছিল বিপুল হারে। ২০১৯ সালে চীনে বাণিজ্যের বিকাশ হয়েছিল ৬.১ শতাংশ হারে। সম্ভবত চলতি বছরে সেই বিকাশ কমে দাঁড়াবে ২.৩ শতাংশ।
কোভিড ১৯ অতি মহামারী শুরু হয়েছিল চীনের উহান শহর থেকে। এডিবি-র মতে, আরও কিছুদিন যদি চিনকে করোনা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালাতে হয়, তাহলে তার ক্ষতি হবে ৬৯ হাজার ২০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ৫৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। তবে আশার কথা হল, চীনে আগামী বছরে বিকাশ ফের সাত শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এডিবি বলেছিলো যে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭.৮ শতাংশ হবে বলে আভাস দেয়া হয়েছিলো। অর্থবছর শেষ হতে তিন মাসও বাকি নেই। আগামী অর্থবছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিরও আভাস দেয়া হয়েছিলো। এই আভাসে করোনা মহামারীকে আমলে নেয়া হয়নি।
কিন্তু এখন তারা বলছে যে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ জিডিপি’র ০.২ থেকে ০.৪ শতাংশ হারাবে। সংক্রমণ যদি আরো মারাত্মক হয় তাহলে জিডিপির ক্ষতিও হবে আরো বড়।
ইউরোপ সম্পর্কে এডিবি বলেছে, সেখানে ম্যানুফ্যাকচারিং কমে গিয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। যে ১৯ টি দেশে ইউরো চালু আছে, সেখানে চলতি বছরে ম্যানুফ্যাকচারিং কমতে চলেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
অর্থনীতির ক্ষতিপূরণে বিভিন্ন দেশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার বর্ণনা দিয়েছে এডিবি। তাতে বলা হয়েছে, চিন ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়া হবে। সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থির করেছে, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হিবে ১ হাজার কোটি ইউয়ান। সেই অর্থ ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোকে ঋণ হিসাবে দেওয়া হবে।
মার্চের শুরুতেই কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত চিন ঘোষণা করে, তারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। তখন থেকেই চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে শিথিল করা হয়।
ব্রিটেনে চালু হচ্ছে জরুরী অবস্থাকালীন ঋণদান প্রকল্প। ওই প্রকল্পে ছোট ব্যবসায়ীরা ৩৩ হাজার কোটি পাউন্ড ঋণ পাবেন।
ফ্রান্সে যে সংস্থাগুলো গাড়ি দুর্ঘটনায় বিমা করে, তারা জানিয়েছে, গত এক মাসে তাদের খরচ কমেছে যথেষ্ট। কারণ করোনাভাইরাসের ভয়ে দেশে শাটডাউন চলছে। প্রায় কেউই রাস্তায় গাড়ি বার করছেন না। এই পরিস্থিতিতে তাদের প্রায় ১০ কোটি ইউরো কম ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। কোম্পানি বিমাকারীদের রিবেট দেওয়ার কথা ভাবছে।
লকডাউনের মধ্যে বাড়ছে ভিডিও কনফারেন্সিং। ভিডিও কনফারেন্সিং পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা জুম জানিয়েছে, গতবছর রোজ গড়ে ১ কোটি মানুষ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিতেন। চলতি বছরের মার্চে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ কোটি।